Alapon

উত্তম দোয়া।


আজ আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হল। বিয়ের সেই প্রথম দিনটির কথা মনে পড়ছে। চারদিকে কত আনন্দ হৈচৈ আর হাসিতে ভরা মুখ। বাচ্চাদের আনন্দময় ছোটাছুটি আর আমার মনে চলছিল চাঞ্জল্যময় আনন্দ। আনন্দটা হয়তো একটু বেশিই ছিল। কারণ, তাকে আমার করে পাওয়াটা এতোটাও সহজ ছিল না!


ও আর আমি একই মাদ্রাসায় পড়তাম। আমি যখন আলিমে তখন ও দাখিল পরীক্ষার্থী। মাদ্রাসায় পড়াকালীন সময়ই তাকে আমার ভালো লেগে যায়। এরপর ইউনিভার্সিটিতে অনার্স পর্ব শেষ করে ছোটখাট একটি চাকরীতে জয়েন করলাম। চাকরী শুরুর কয়েকদিন পরেই আব্বা বিয়ের গান শুরু করলেন। আর সেই গানের তালে আমিও আমার সেই মাদ্রাসা জীবনের ভালোলাগার কথা জানালাম। এই কথা আব্বা জানার পরই ঘটল আসল ঘটনা!


আব্বা আমাকে একাকী ডেকে নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। তাঁর প্রশ্নের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, আব্বা আমাকে সন্দেহ করছেন। তিনি মনে করছেন, ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। আমি যতোই অস্বীকার করি আব্বা ততোই প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন করা শেষ হলে আব্বা বলেন, ‘ওর সঙ্গে তোমার সম্পর্ক থাকুক আর নাই থাকুক ওখানে বিয়ে হবে না। এই সাফ কথা’!


আব্বার এরকম বেঁকে বসার কারণ ছিল, পূর্ব শত্রুতা! আমরা যখন ছোট তখন নাকি জমি নিয়ে ওর বাবা আর আমার আব্বার সঙ্গে বেশ গন্ডোগোল হয়। তারপর বহুবছর কেউ কারো মুখ দেখেনি। বাড়ি থেকে চলে আসার সময় আম্মাকে বললাম, ‘বিয়ে করলে আমি ওখানেই করবো’! 
ঠিক ঐ মুহুর্তে ওর প্রতি বেশি আবেগ কাজ করতেছিল যা অনুভব করে আমি নিজেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেই আবেগের জোরেই কিনা, প্রতিরাতে তাহাজ্জুদে আল্লাহর কাছে ওকেই চাইতাম। ওর নাম ধরে বলতাম,‘ আল্লাহ ওকেই আমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে কবুল কর! ওই আমার একমাত্র যোগ্য এবং উত্তম জীবন সঙ্গিনী’!


এরপর কি থেকে কি হয়ে গেল জানি না। ছয় মাস পর আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। আর আজ আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হল। আর এই একবছর পরেই আমি বুঝতে পারলাম, ও আমার উত্তম জীবনসঙ্গিনী নয়। হয় সে আমার যোগ্য নয় নতুবা আমিই তার জীবনসঙ্গি হবার নুন্যতম যোগ্যতা রাখি না।


আজ আফসোস লাগে, আল্লাহ কেন যে দোয়াটা কবুল করলেন! আল্লাহতো জানতেন কোনটা আমার জন্য উত্তম আর কোনটা উত্তম নাহ। কিন্তু ভুলটা আমিই করেছি। আমি আল্লাহকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আমার জন্য কে উত্তম সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। ইশ! যদি বলতাম, যে মানুষটি আমার জন্য উত্তম তাকেই আমার জীবনসঙ্গিনী রূপে কবুল কর। এটিই হতো আমার জন্য সবচেয়ে উত্তম দোয়া।

পঠিত : ৭৬৯ বার

মন্তব্য: ০