Alapon

স্বামী হিসেবে যে পুরুষরা ব্যর্থ...


একজন পুরুষ, যে কিনা সংসার এবং বাইরের জীবনে ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ক্রমাগত পরিবারের নারী সদস্যদেরকে শোষণ করে গেছেন সে একজন ব্যর্থ স্বামী। রাসূল সাঃ এর ব্যর্থ এক উম্মাত।

সংসার জীবনে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়না। কারণ, পরিপূর্ণ হক্ব আদায় না হলে ইসলামের শরীয়ত মোতাবেক একজন স্ত্রী অচিরেই তালাক চাইতে পারেন(সবথেকে নিকৃষ্ট হালাল কাজ)। কিন্তু পারিপার্শ্বিক দিক,সন্তান এবং সমাজে তাদের অবস্থান ভেবে সেটা করা অধিকাংশ নারীর পক্ষে সম্ভব হয়না।

এখানে একজন স্ত্রীর হক্ব কি? স্ত্রীদের প্রতি রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যবহার কেমন ছিলেন? সাহাবিদের আচরণ কেমন ছিলো?

১.সমাজের অধিকাংশ ভাইয়েরা জানেন না, যে সমস্ত স্ত্রী আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টির জন্য স্বামী খেদমত করে যাচ্ছেন তাদের আলাদা একটা মন-মানসিকতা,আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে।
রাসূল সাঃ এর জীবনি দেখুন, তিনি অবসরে স্ত্রীদের সাথে সময় কাটাতেন। তাদেরকে দেখলে মিষ্টি করে হাসি দিতেন। কখনো কখনো বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু অনেক বোনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন যে, তার স্বামী তার মনোরঞ্জন তো অনেক দূরের কথা ঠিকমতো খেয়েছে কিনা সেটুকুর খবর রাখেন না।

(অবশ্যই দ্বীনদার উত্তম স্বামী আছেন, তাদেরকে বলছি না)

২. চারটি বিয়ে অর্থ্যাৎ ওয়াহিদার পরে মাসনা-সুলাসা-রুবায়া যেকোনো ভাই করতে পারেন। এই হাদিসটি ভাইয়েরা খুব ভালোমতোই জানেন। কিন্তু অন্যান্য দেশের প্রেক্ষাপটে এই দেশের বর্তমান পরিস্থিতির এত ভিন্নতা কেন?
একটু পেছনে ফিরে দেখুন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষেরা তাঁর স্ত্রীদের প্রতি ইনসাফ করে যাননি৷ মাসনার পরে ওয়াহিদার কোনো খোঁজ খবরও নিতে যাননি।
প্রমান? বহু প্রমাণ আপনি পেছনে তাকালে দেখতে পাবেন। একারণে একটি সুন্নাত পালনে প্রতিনিয়ত এত বাঁধা আসছে। এত বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে।
(ব্যতিক্রম দ্বীনদার উত্তম পুরুষ অবশ্যই আছেন।)

৩.ফেমিনিজম যে ইসলামের দৃষ্টিতে কত বড় জঘন্যতম একটি অধ্যায় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মেয়েরা এখন শরীয়তকে তোয়াক্কা না করে বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। কেন? এমন তো হবার কথা ছিলো না!
রাসূল সাঃ যে খুব বিলাসিতার জীবন কাটিয়ে গেছেন তা কিন্তু নয়। তিনি পুরো জীবনে বহু কষ্ট করে গেছেন। তবুও, প্রত্যেক স্ত্রীগনকে এককালীন কিছু হাত খরচ দিয়ে গেছেন৷ যা আমাদের মায়েরা নিজেদের কাজে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতেন।রাসূল সাঃ নিজে থেকে জিজ্ঞেস ও করতেন না৷

কিন্তু আমাদের স্বচ্ছল পরিবারগুলোর কথা চিন্তা করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীদের জন্য আলাদা কোনো বাজেট নেই। একারণে সমস্যা হচ্ছে দুইদিক থেকে।
*মেয়েরা বাইরে বের হতে মুখিয়ে আছে৷(যা শরীয়তের বিরুদ্ধে)
*স্বামীকে না জানিয়ে পকেট থেকে টাকা সরিয়ে রাখছে।(যা গর্হিত কাজ)
৪. অধিকাংশ পুরুষদের বৈশিষ্ট্য রাগ,অহংকার ও দাম্ভিক মনোভাব। ফলে সংসার জীবনে স্ত্রীকে নিছক তুচ্ছ একজন বান্দা মনে করে।নিজের সমস্ত জুলুম স্ত্রীদের মুখ বন্ধ করে সহ্য করতে হবে এমন ধারণা তারা পোষণ করেন৷ সমাজব্যবস্থা ও এরকমই৷ পুরুষ যা বলবে সেটাই শেষ।

অথচ সুন্নাত,স্ত্রীর বিষয়গুলো স্ত্রীর সাথেই মাশোয়ারা করে করা৷ স্ত্রীর সাথে নমনীয়তা বজায় রাখা,তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়া।

৫.অযথা বাইরের যাবতীয় কাজের জন্য যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়,তা স্ত্রীর উপর জারি করা। স্ত্রীকে গালমন্দ, গায়ে হাত তোলা এগুলো করতে পারলেই নিজেকে একমাত্র পুরুষ বলে দাবি করেন সমাজের অনেক ভাই৷
অথচ স্ত্রী আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে বড় একটি নিয়ামত,হাদিয়াস্বরূপ।

(দ্বীনি এবং উত্তম আখলাকের কোনো ভাই এসবের উর্ধ্বে ইনশাআল্লাহ্)

৬.চারপাশে বেপর্দা বোনের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। কেন? তারা কোনো ভাইয়ের স্ত্রী,বোন,মেয়ে৷ পুরুষেরাই দাইয়্যূস নয় কি?

কোনো ভাই যদি স্ত্রীকে প্রদর্শন করে তৃপ্তি পান তবে আপনি শুধু দাইয়্যূসই নন, অসুস্থও বটে। আর এই বেপর্দা বোনেরা শুধু ফেতনারই সৃষ্টি করছে। সেই সাথে যুক্ত থাকছে দৃষ্টি হেফাজত না করা ভাইসকল।

তাহলে আপনি একজন পুরুষ হয়ে কতটা উত্তম?

কোনোপ্রকার আক্রমণ না করে উপরের চরিত্রগুলোর সাথে নিজেকে মেলান। যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে তবে তা শুধরে নিন। এখানে বার বারই উল্লেখ করেছি "অধিকাংশ" কথাটি৷
আর আপনি যদি এসবের উর্ধ্বে থাকেন তো মাশা-আল্লাহ্।

একজন উত্তম স্বামী কখনোই তাঁর স্ত্রীর কথা অন্য কাউকে বলবেনা৷ স্ত্রীর বাবা মাকে অসম্মান করবেনা। শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করবেনা ।

বোনদের নাসিহামূলক বহু পোস্ট করা হয়েছে, তাই এখানে নতুন করে কিছু বলিনি। তারাও ভুলের উর্ধ্বে নয়৷

আমি আপুদের বলেছিলাম ভাইদের নাসিহাস্বরূপ আমরা হরহামেশাই লিখে থাকি৷ শুধু নারীদের পিছে,বা পুরুষদের পিছে পড়ে থাকা আমাদের স্বভাব বা দাওয়াতি কাজ নয়। আমাদের লক্ষ্য সকল মুসলিম উম্মাহ।

@নওশিন

পঠিত : ৮১০ বার

মন্তব্য: ০