Alapon

করোনার সংকটে সরকারি দল ও বিরোধী দল কি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে?


এইতো কিছুদিন আগের কথা। তুরস্ক সিরিয়া সেনা সদস্যদের অভিযানে পাঠালো। অভিযান চলাকালীণ সময়ে রাশিয়ার বিমান হামলায় তাদের প্রায় ৫০ জন সৈন্য নিহত হয়। এই ঘটনাকে জাতীয় সংকট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন বিরোধী দল সরকারী দল একজোট হয়ে এই সংকট মোকাবেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিরোধী দল তাদের স্বভাবসুলভ সরকারি কর্মকান্ডের বিরোধীতা ভুলে একযোগে এই সংকট মোকাবেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

ধরুন, রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে হাসিনার সরকার মিয়ানমারে সেনাবাহিনী পাঠালো। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫০ জন্য সদস্য নিহত হল। এমন এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী হত?

বিরোধী দল তথা বিএনপি এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকারকে চাপে ফালানোর চেষ্টা করত। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করত। এমনকি এই ঘটনাকে পুঁজি করে সরকারের পতন ঘটিয়ে, সে স্থানে নিজেরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করত। আর অন্যদিকে সরকার বলত, এই ঘটনার পিছনে বিএনপি- জামায়াতের ইন্ধন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ তারা আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

অথচ এই সংকট যে একটি জাতীয় সংকট তা আমাদের সরকারী দল বা বিরোধী দল কেউই অনুধাবন করতে পারত না। সভ্য জাতি আর বাঙালি জাতির মধ্যে এটাই আসল পার্থক্য।

করোনা মহামারী এই পরিস্থিতিতে আমাদের পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো রেষারেষি ভুলে এই সংকট এক সাথে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। এমনকি চরম সংঘাতের দেশ পাকিস্তানেও সরকারি দল বিরোধী দল- সবাই একযোগে এই মহামারী মোকাবেলার চেষ্টা করছে। ভারত পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো এই প্রশ্ন তুলছে না, কেন খাবারের বন্দোবস্ত না করে লকডাউন করা হল। কিন্তু আমাদের বিএনপি এই প্রশ্ন বারবারই করছে। বিএনপির হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, এই করোনা মহামারীর কারণে সরকার যে চাপে পড়েছে তাতে তারা বেশ মজা পাচ্ছে। এমনকি তাদের শারীরিক ভাষা বলছে, করোনার কারণে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হোক। ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হোক। তাতে পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে সরকারের পতন ঘটবে আর তারা আরামে দেশের ক্ষমতার চেয়ার দখল করবে!

লজ্জাজনক! এখন সরকারের সমালোচনা করার সময় নয়; বরঞ্জ স্বল্প সম্পদ নিয়েও সরকার যে প্রনোদনার ঘোষণা দিয়েছে- তা সাধুবাদ জানানো উচিত। কিন্তু কথায় আছে, যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। বিএনপি সরকারের কোনো কর্মকান্ডকেই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারে না। যার কারণে তারা সরকারের ভালো কাজকে সাধুবাদ জানাতে পারে না। বিএনপির রিজভী আহমেদ এবং ফকরুল ইসলাম আলমগীরের এই সময়ের ভূমিকা সত্যিই লজ্জাজনক!

অন্যদিকে আমাদের তথ্যমন্ত্রীও কম যান না! ঢাকা, গাজীপুর এবং রংপুরের কয়েকটি জায়গায় ত্রানের দাবিতে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ ঘরে বসেই ততক্ষনাত বলে দিলেন, এটা বিএনপি-জামায়াতের কাজ। তারা টাকা দিয়ে মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছে। দেশের একজন ফুল ক্যাবিনেট মন্ত্রীর থেকে এমন দায়িত্ব-জ্ঞানহীন মন্তব্য কখনোই কাম্য নয়। তারা যদি সত্যিই খাবারের দাবিতে আন্দোলন করে তবে তাদের খাবার নিশ্চিত করার সরকারের দায়িত্ব। আর যদি কেউ দূর্যোগের এই মুহুর্তে নোংরা রাজনীতি করতে চায়- তবে তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করাও সরকারেরই দায়িত্ব। তাই একজন মন্ত্রী এমন বালখিল্যপনা মন্তব্য করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করবেন- তা কখনোই কাম্য নয়।

করোনা ভাইরাস, একটি মহাদূর্যোগ। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এই ভাইরাসের ভয়াবহতাকে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। এই সংকটকে আমাদের একসাথে মোকাবেলা করতে হবে। বিরোধী দলের উচিত, বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা পরিত্যাগ করা। অন্তত করোনার এই সংকটে তাদের এই বদভ্যাসটি পরিত্যাগ করা উচিত। আর সরকারের উচিত এমন জাতীয় সংকটের কালে সকল রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে সংকট মোকাবেলার করার অভ্যাস তৈরি করা। তাতে দেশ বাঁচবে, দেশের মানুষ বাঁচবে এবং সংকট মোকাবেলা করা তুলনামূলক সহজ হবে।

পঠিত : ৩৩১ বার

মন্তব্য: ০