Alapon

জাস্টিন ট্রুডো ও বাঙ্গালি মুসলিম মন...


আমরা কালেক্টিভলি দুটি চরম দৃষ্টিভঙ্গি লালন করি। জাস্টিন ট্রুডো ইস্যু খুব ভিভিড একটা উদাহরণ। শুধু জাস্টিন ট্রুডো নয়, সবার ক্ষেত্রেই আমরা এমন। এর গভীরে দুটি থিওলজিক্যাল ব্যাপার আছে। এক. অমুসলিমদের ব্যাপারে রাসূল সা. কেমন দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতেন। দুই. অন্যের প্রতি ভালো হওয়া মানেই সব কিনা।

এক. অমুসলিমদের ব্যাপারে রাসূল সা. কেমন দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতেন

রাসূল সা. একজন অমুসলিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। সুতরাং তার ইসলাম গ্রহণেরও কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু বদর যুদ্ধ জয়ের পরক্ষণেই যখন যুদ্ধ বন্দীদের সামনে আনা হয়, তখন তিনি মুতয়িম ইবনে আদীর প্রসংশা করেন। কারণ ছিল মুতয়িম ইবনে আদী অমুসলিম হওয়া স্বত্তেও রাসূল সা. ও মুসলিমদের অনেক উপকার করেছেন। তাই তিনি সমবেত মুসলিম জনতার সামনে তার প্রসংশা করেন, তাকে সম্মানিত করেন।

বুখারি শরিফে বর্ণিত। নবি সা. বদরের যুদ্ধে বন্দীদের ব্যাপারে বলেন, "যদি মুতয়িম ইবনে আদী জীবিত থাকতেন আর আমার নিকট এ সকল নোংরা লোকের জন্যে সুপারিশ করতেন, তবে আমি তাঁর সন্মানার্থে এদের মুক্ত করে দিতাম।"

এই হাদিস থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই তাহলো সকল অমুসলিমই একই রকম নয়, সকল বিরোধী মতের লোকরা একই রকম নয়। তাই সবার প্রতি একই আচরণও কাম্য নয়। যারা অমুসলিম হওয়া স্বত্তেও মুসলিমদের প্রতি ভালো আচরণ করে, তবে একজন মুসলিম কীভাবে তার প্রতি খারাপ মনোভাব পোষণ করতে পারে। অনেক অমুসলিম রাসূল সা.-এর প্রতি সুন্দর আচরণ করেছেন, রাসূল সা. প্রতিদানে তার চেয়েও ভালো আচরণ করেছেন। এটাই ফুটস্টেপ অব প্রফেট।

দুই. অন্যের প্রতি ভালো হওয়া মানেই সব কিনা

অন্যের প্রতি ভালো হওয়াকে অনেকে চূড়ান্ত ভালো মনে করে। মানুষ মনে করে, আপনি অন্যের প্রতি ভালো হলেই জান্নাতে চলে যাবেন। কেউ এতিমখানা চালু করল, ব্যাস এনাফ। তিনি সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন। তিনি কি বিশ্বাস করেন, কি অনুশীলন করেন- সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি যদি হাসপাতাল চালু করেন, মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলেন, তবে তো আপনি সেলিব্রিটি। মানুষের চোখে আপনি সবচে ভালো মানুষ। এসব ভালো, কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি বিশ্বাসস্থাপন করা, তার ইবাদত করা।

আবদুল্লাহ ইবনে জুদআন সম্পর্কে আয়িশা রা. রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করেন, তিনি জান্নাতে যাবেন? রাসূল সা. বলেন : না, তিনি জাহান্নামে যাচ্ছেন। আয়িশা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, কেন? তিনি তো অনেক ভালো কাজ করেছেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে জুদআন হিলফুল ফুজুলের মতো সংগঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এরুপ অনেক সমাজ কল্যাণমূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।

রাসূল সা. বলেন, তিনি জাহান্নামে যাবেন, কারণ তিনি কখনও বলেননি, আলাহুম্মা রাব্বেগ ফেরলি (হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো)।

ভালো সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম দুটি শর্ত আরোপ করেছে। এক. আল্লাহর প্রতি ইমান আনতে হবে। দুই. তার নির্দেশিত পন্থায় ভালো কাজ করতে হবে।

আপনি আল্লাহর জন্য কিছুই করলেন না, আর আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দিয়ে দিবে এটা যৌক্তিক নয়। কারণ, পরিশেষে জান্নাতের মালিক তো আল্লাহ।

এখানে দুটি পয়েন্ট আলোচনা করেছি। এক. মুসলিম হিসেবে অমুসলিমদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ। আর দ্বিতীয়, মুসলিম হিসেবে আমরা কেমন হওয়া উচিৎ। দ্বিতীয় পয়েন্ট আলোচনার উদ্দেশ্য এ নয় যে, আপনি কে বেহেশতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে তা আলোচনা করা। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আমাদের কর্মপন্থা কেমন হওয়া উচিৎ তা নির্দেশ করা।

[ইদানিং ইয়াসির ক্বাদির লেকচার বেশি শোনা হয়েছে তাই এই লেখা তাঁর লেকচার অবলম্বনে বলতে পারেন। তবে আবার তাঁকে কার্টেসি দিলেও সমস্যা। আমার ভুলচুক তাঁর ওপর আরোপিত হবে।]

@Saif

পঠিত : ৪২৮ বার

মন্তব্য: ০