Alapon

ইসকন মন্দিরে করোনা সংক্রমণ এবং আমার অনুধাবন...


পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, ইসকন মন্দিরের পুরোহিতসহ ৩৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমি অবশ্য আগেই আশঙ্কা করেছিলাম, ইসকন মন্দিরে করোনা ভাইরাসের একটি ভয়ানক সংক্রমণ ঘটবে হয়তো। স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরের পাশে আমার অফিস হওয়ায়, অফিসের জানালা দিয়ে তাদের উপাসনা দেখতাম।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সারাদেশে লক ডাউন শুরু হয়। লকডাউন শুরু হওয়ার পর আমাদের অফিস বিশেষ ব্যবস্থায় চালু রাখা হয়। অফিসেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে অফিসেই বসবাস এবং সময়মত কাজ। সন্ধ্যা বেলায় অফিসের জানালা দিয়ে দেখতাম, এই লকডাউনের মাঝেও তারা সান্ধ্যকালীণ প্রার্থনা চালু রেখেছে। এমনকি তাদের এই প্রার্থনা যেন প্রশাসন কতৃক বাধাগ্রস্থ হতে না পারে, সেকারণে তারা বাহির থেকে তালা দিয়ে ভিতরে প্রার্থনা কার্যক্রম চালাতো। আর মোটামুটি অনেক মানুষ নিয়েই তারা এই প্রার্থনা কার্যক্রম চালু রেখেছিল। আর একারণেই আমার মনে হয়েছিল, স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে করোনা ভাইরাসের ম্যাসিভ অ্যাটাক ঘটবে। আর হয়েছেও তা-ই!

ইসকন মন্দিরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনার কারণে গোটা স্বামীবাগ এরিয়াই লকডাউন করা হয়েছে। স্বামীবাগে অনেক মুসলমান পরিবারও বসবাস করে। ইসকন মন্দিরের কারণে নিশ্চয়ই তারাও এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর স্বামীবাগের বাসিন্দারা যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন তবে পুরো সূত্রাপুর এলাকা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সূত্রাপুর আক্রান্ত হলে পুরো যাত্রাবাড়ি আক্রান্ত হবে। আর যাত্রাবাড়ি আক্রান্ত হলে পুরো মতিঝিল এলাকা আক্রান্ত হবে। আর যদি মতিঝিল এলাকা আক্রান্ত হয় তবে গোটা ঢাকা শহরের মানুষ আক্রান্ত হবে। এভাবে চিন্তা করলে পুরো বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য একমাত্র হিন্দুত্ববাদী ইসকন মন্দিরকেই দ্বায়ী করা যাবে। যেমনটা করেছিল, ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার।

এই তথ্য সকলেই জানেন যে, তাবলীগ জামায়াতের কেন্দ্রীয় দফতর ভারতে। ভারতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন প্রাথমিক পর্যায়ে এবং তখনও লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি তখন তাবলীগের কেন্দ্রীয় মারকাজে সভা চলছিল। এরপর যখন লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তখন গোটা ভারতের এবং দেশ বিদেশের তাবলীগ জামায়াতের সাথীরা সেখানে আটকা পড়ে যায়। ফলে সেখানে করোনা ভাইরাস সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম হয়। আর এই সুযোগে ভারতের হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিম বিরোধী মোদী সরকার ভারতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে দ্বায়ী করে। আর তাদের এই দাবির স্বপক্ষে ভারতীয় মিডিয়াগুলো জোর প্রচার-প্রচারণা শুরু করে। আর এই প্রচার-প্রচারণা দ্বারা মোদি সরকার ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি সারা ভারত জুড়ে মুসলিমদের চরম অবহেলার মধ্য দিয়ে জীবন পার করা হচ্ছে।

অথচ ভারত সরকার কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে। অথচ ভারত যে সংখ্যালঘু নির্যাতনে আতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই।

আমরাও মোদি সরকারের মত পারতাম, ঢাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমনের জন্য ইসকন মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়কে দ্বায়ী করতে। এরপর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করতে। তারপর ভারতের হিন্দুরা যেমন মুসলিমদের ত্রান ও সরকারী সাহায্য থেকে বঞ্জিত করছে, আমরাও বাংলাদেশের হিন্দুদের ত্রান ও সরকারী সাহায্য থেকে বঞ্জিত করতে পারতাম। কিন্তু আমরা করব না। কারণ, আমাদের ধর্ম ইসলাম আমাদের এসব নোংরা কাজের শিক্ষা দেয় না। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, ধর্ম যাই হোক পারস্পরিক সম্প্রীতির ভিত্তিতে বসবাসের। করোনা ভাইরাসের এই মহামারীতে আমরা মুসলিমরা যদি খেয়ে বাঁচতে পারি, তবে আমাদের হিন্দু ভাই-বোনেরাও খাবে। আমরা যদি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকার রাখি, তবে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের হিন্দু ভাই-বোনদেরও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। ইসলাম আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়।

পঠিত : ৪৫৬ বার

মন্তব্য: ০