Alapon

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা...


মসজিদে যেতে না পারা অথবা মসজিদে যেতে বারণ করা উভয়ই একজন মুসলমানের জন্য খুবই কষ্টের। তারপরেও পরিস্থিতির কারণে বাধ্য না হলে কোন মুসলমান মসজিদে যেতে অথবা মসজিদে জামাত করতে অনুৎসাহিত করতে পারেনা।

আমরা সবাই জানি করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী সকল ধর্মীয় প্রার্থনাগৃহগুলোতে অনুসারীদের যাতায়াতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। সকল মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মসজিদগুলো যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রতি ওয়াক্তে পাঁচজনসহ (জুমার নামাজে ১০, তারাবিতে ১২ জন) জামাত করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বিশিষ্ট আলেমদের সাথে পরামর্শ করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে করে মসজিদে নিয়মিত আজান ও জামায়াত অব্যাহত থাকবে। থাকবে না বন্ধ আল্লাহর ঘর।

অন্যরা বাড়িতে বসে নামায আদায় করবে। যদি কোন সরকারি আদেশ মানুষকে নাফরমানীর দিকে নিয়ে না যায় তাহলে সেই আদেশ জনগণের মানা কর্তব্য।

ইসলামের উৎসভূমি খোদ মক্কা-মদিনাতে করোনা পরিস্থিতির কারণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। মুসলমানদের ওমরা করা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে এ বছরের হজ অনুষ্ঠিত হতে পারবে কিনা। যদিও গত ১৭৯৮ সালের পর থেকে ২২২ বছরে কোন ধরনের বিঘ্ন ছাড়াই হজ অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে। এমনকি ১৯১৮ সালের স্পেনিশ ফ্লু এর সময়েও হজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

পৃথিবীর সকল মানুষের প্রত্যাশা কয়েক মাসের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন, ঔষধ আবিষ্কৃত হবে। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মানুষ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কাবা শরীফ, মদিনা শরীফ খুলে যাবে, হজ অনুষ্ঠিত হবে। মসজিদগুলো মুসল্লী ফিরে পাবে। কিন্তু ততদিন আমাদের সবাইকে সরকারি বিধিবিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নিজেকে পাক-পবিত্র রাখতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস এর প্রকৃতি এমন যে, এটি যেকোনো আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসলে অন্য কোন সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। আর তাই ধর্মীয় স্থানসহ সকল ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।

কিন্তু তারপরেও কিছু লোক সরকারি নির্দেশ এর তোয়াক্কা না করে বাজারে, দোকানে, ধর্মীয় স্থানে জমায়েত হচ্ছে। কোন কোন জায়গায় শোনা যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের কারণে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। নামাজীর সংখ্যা বাড়া আনন্দের সংবাদ কিন্তু এই সময়ে বাড়িতে বসে নামাজ পড়াই কাম্য। তবুও অনেকে তা মানছে না।

মসজিদ কমিটি মসজিদে নির্ধারিত সংখ্যক মুসুল্লির বেশি না আসতে বলায় মুসুল্লিদের সাথে ঝগড়াও হয়েছে কোনো কোনো স্থানে।

আবার এটিও দেখা গেছে মসজিদে না গিয়ে অনেকে বাড়ির ছাদে বা অন্য স্থানে বড় করে জামাত করছেন। এটি জোর করে মানানোর বিষয় নয়। প্রত্যেকের দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব।

যেই সময়ে সরকার জনগণকে ঘরে রাখতে, নিরাপদ রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেই সময়ে কিছু ইসলামী বক্তা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন তাদের বক্তৃতার মাধ্যমে। কেউ বলছেন, মুসলমানদের করোনা হবে না। কেউ বলছেন, করোনা শুধু কাফির-মুশরিকদের হবে; মুসলিমদের করোনাভাইরাস ঢোকার রাস্তাই নাই। এই অবৈজ্ঞানিক কথাগুলো মানুষের মধ্যে ইসলাম এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে।

অথচ ইসলামের বাণী মানুষকে সর্বদাই সত্য, ন্যায় আর কল্যাণের পথ দেখায়। ইসলাম যৌক্তিক এবং মানুষের কল্যাণের ধর্ম। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজন ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা এবং সঠিক স্থানে সঠিক ব্যবহার। অন্যথায় মানবজাতির মধ্যে তৈরি হতে পারে ভুল বোঝাবুঝি বিভেদ আর ধ্বংসাত্মক দ্বন্দ্ব।

বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে আলেম-ওলামাদের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় ও তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি।

বিশেষ মুহূর্তে বা কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকলে বাসায় বসে নামাজ পড়ার অনুমতি রয়েছে ইসলামে।

এমনকি লকডাউন, কোয়ারেন্টিন শব্দগুলো আমরা এখন ব্যবহার করছি। কিন্তু ১৪ শত বছর আগেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সংক্রামক রোগের সময় তোমরা বারবার হাত ধোও, সংক্রামিত এলাকায় প্রবেশ করো না এবং সংক্রামিত এলাকা থেকে বাইরে যেও না।

এই হাদিসে যা বলা হয়েছে তা বৈজ্ঞানিকভাবেও সঠিক প্রমাণিত হচ্ছে এবং করোনা মোকাবিলায় বর্তমানে এই পদ্ধতি সারাবিশ্বে অনুসরণ করা হচ্ছে। যা ইসলামকে আরো একবার সত্য ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

মহামারী চলাকালে নিজ ঘরে অবস্থান করলে শহীদের সওয়াব পৌঁছানোর সুসংবাদ দিয়েছেন নবীজি (সাঃ)।

উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে কেউ মহামারী চলাকালে ধৈর্যের সঙ্গে নিজের ঘরে অবস্থান করবে এবং এ বিশ্বাস পোষণ করবে যে তার ওপরে মহামারী থেকে আল্লাহ যতটুকু চান তার চেয়ে বেশি কিছু পৌঁছাবে না; এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ শহীদের সওয়াব নসিব করবেন।
(সহীহ বুখারী)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মহামারীতে ঘরে থেকে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতে বলা হয়েছে। নিজে কোথাও বিপদ আছে জেনে সেখানে গিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলা হয়নি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমরা আল্লাহকে, আমাদের ভাগ্য বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করেই কামাই রোজগার করি, খাদ্য সংগ্রহ করি। শুধু রিজিকে থাকলে খাবো বলে বসে থাকি না। এমনকি নবী রাসূলগণ জীবিকা নির্বাহের জন্য কোন না কোন কাজ করতেন। সেটা ব্যবসা, মেষ চরানো কিংবা অন্য কোনো কাজ।

আল্লাহর উপর আস্থা, বিশ্বাস যেমন দরকার তেমনই দরকার নিজের প্রচেষ্টা, স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা ইত্যাদি। আর এই জন্যই আল্লাহ মানুষ বা সৃষ্টিজীবকে রোগ দিয়েছেন আর সেই সাথে দিয়েছেন রোগ নিরাময়ের জন্য ঔষধ। আমরা জানি রোগ সারানোর জন্য ওষুধ সেবন করা নবীজির সুন্নত।

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, প্রথমে রোগটি কে দিল? সহজ উত্তর- আল্লাহ দিয়েছেন। তাহলে হাত ধোয়া, লকডাউন, ঘরে থাকা মানলেই কি সুস্থ থাকা যাবে? করোনায় আক্রান্ত হবো না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই- আল্লাহ চাইলে নিশ্চয়ই পারেন। তবে নিজের জীবন রক্ষা করার জন্য সতর্ক থাকা, ওষুধ সেবন করাও কর্তব্য। এমনকি কারো নিজের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করা বা আত্মহত্যার অনুমতি দেয় না ইসলাম। বরং আত্মহত্যাকারীকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

করোনার সময়ে বাড়িতে অবস্থানকালে বরং আমরা বেশি বেশি নফল নামাজ, কাজা নামাজ, দরুদ শরীফ, ইসলামী বই, কুরআন-হাদিস পড়তে পারি। ঘরের কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করতে পারি। মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীসহ পরিবারকে মূল্যবান সময় দিতে পারি।

আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ এই মহামারী বেশিদিন রাখবেন না। আল্লাহর রহমতে এটি দ্রুতই চলে যাবে এবং পৃথিবী স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসবে। কিন্তু ততদিন আমাদেরকে সরকারি নির্দেশনা, ইসলামী নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবেই আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের উপর সহায় হবেন।

cltd

পঠিত : ৩০১ বার

মন্তব্য: ০