Alapon

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমেরিকাকে কীভাবে সুপার পাওয়ার দেশে পরিণত করল...?


১৯৪১ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কেঁপে উঠেছে ইউরোপ। ব্রিটেনের সামনে একটাই রাস্তা খোলা আছে। যদি নতুন মহাশক্তি আমেরিকা তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। রুজভেল্ট সাহেব চার্চিলকে জানালেন আমেরিকা সব কিছু দিয়ে ব্রিটেনকে বাঁচাবে , কোন সমস্যা নেই।

শর্ত একটাই – যুদ্ধ শেষ হলে সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশদের অধীনে যত ভূখণ্ড আছে , সেখানে স্বাধিকার (সেলফ ডিটারমিনেশান) দিতে হবে। এর মানে হল – ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মানুষ স্বাধিকার পাবে। তাঁরা নিজেরা চাইলে ব্রিটেনের অধীনে থাকবে , না চাইলে স্বাধীন হয়ে যাবে।

যুদ্ধ শুরু হবার পরেই চার্চিলের পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছিল। এবার রুজভেল্টের প্রস্তাব শুনে তাঁর মনে হল – এর চেয়ে আটলান্টিকে ডুবে যাওয়াও ভাল। তিনি বললেন , এ কথা মানলে ব্রিটেনের মানুষ আমাকে ছাড়বে না।

রুজভেল্ট জবাব দিলেন , কিন্তু যুদ্ধটা ব্রিটেন জিতে যাবে। চার্চিল মনে মনে বললেন , তা বটে। কিন্তু আমি মনে হয় আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারব না। আর হয়েছেও তাই। যুদ্ধে জয়ী হয়েও তিনি পরের নির্বাচনে হেরে গেলেন।

সকাল বিকাল মহাত্মা গান্ধীকে ‘নেকেড বেগার’ বলে গালি দেয়া চার্চিল নিজেই তখন ভিখারি। তবে মহাত্মা গান্ধীর মত ন্যাংটা না – কোট পরা , চুরুট মুখে ভিখারি। আটলান্টিকের বুকে দাঁড়িয়ে তাঁকে মানতে হল রুজভেল্টের কথা।

স্বাক্ষর হল চুক্তি – আটলান্টিক সনদ। এটাই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। তাঁর চেয়েও অনেক গভীরের কথা হল, এতে নিশ্চিত হল – যুদ্ধ শেষে ইউরোপীয় দেশগুলো একে একে হারাবে তাদের সকল উপনিবেশ।

হারাবে বিনা পয়সায় পাওয়া কাঁচামাল , মনোপলি মার্কেট। যে সাগরপথ তারা আটকে রেখেছে , সেগুলো খুলে দিতে হবে সবার জন্য। অনেক নতুন স্বাধীন দেশ তৈরি হবে। সেখানে সস্তায় পাওয়া যাবে অনেক কাঁচামাল। যেই বাজারগুলো উপনিবেশের বাঁধনে দখল করে রেখেছে ইউরোপীয়রা , সেগুলো হবে উন্মুক্ত। আর যুদ্ধ শেষে একমাত্র বড় শক্তি হবে আমেরিকা। তাই ধীরে ধীরে এসবই আসবে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে ।

রুজভেল্ট নিশ্চিত করলেন – যুদ্ধ শেষে যে দিন আসবে , সেই দিন হবে আমেরিকার দিন। কিন্তু কিভাবে ? আগে তো ইউরোপিয়ানরা সরাসরি দস্যু পাঠিয়ে লুট করে আনত। জোর করে শুধু তাঁদের বানানো জিনিসই চড়াদামে বিক্রি করত উপনিবেশগুলোতে। এখন তো সেটা হবে না।

আবার শুরু হল আলোচনা আমেরিকার মাটিতে। নিউ হ্যাম্পসায়ারের ব্রেটন উডসে। মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে – ১৯৪৪ সালে। ততদিনে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার রূপরেখা অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তার মানে রাজনৈতিকভাবে পৃথিবীকে পরিচালনা করার প্লট প্রায় রেডি। এখন দরকার অর্থনৈতিক নকশা। সেই নকশায় তৈরি হবে বিশ্ব অর্থনীতির ঘুড়ি।

ঘুড়িটা ওড়তে থাকবে পৃথিবীর কোনায় কোনায় , তবে লাগাম লাগবে মাত্র কয়েকটা ধনী দেশের হাতে। একটানা বাইশ দিন আলাপ চলল ব্রেটন উডসে। এই আলাপ থেকে জন্ম হল তিনটি প্রতিষ্ঠানের – বিশ্ব ব্যাংক (ডব্লিউবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)।

পৃথিবী পেল এক নতুন মহাজনী কারবার। চরিত্রে আন্তর্জাতিক , আর মুখে মধুর ভাষণ। টাইয়ের নটে বাঁধা অদৃশ্য ছুড়ি। এই মহাজনী কারবারে ভিন্ন ভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ টাকা দিল। সেই টাকায় একটা ফান্ড হল। আর সেই ফান্ড থেকে ঋণ দেয়া হবে বিভিন্ন দেশকে। অদৃশ্য ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলা হলো মুক্ত বিশ্বকে ।

CLTD

পঠিত : ৫৩৩ বার

মন্তব্য: ০