Alapon

দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর রাসূলের অনুপম শিক্ষা...


লক ডাউনের মাঝে একদিন সকাল সকাল বাজারে গেলাম। বেঁচে থাকার জন্য খাবার দরকার। খাবারের প্রয়োজনেই বাজারে যাওয়া!

বাজার করার এক পর্যায়ে লক্ষ্য করলাম, এক হুজুর দম্পতি মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাফস জড়িয়ে বাজার করছে। হুজুর দম্পতি বললাম কারণ, পুরুষ লোকটির মুখে ছিল দাড়ি আর মাথায় টুপি। আর মহিলার গায়ে জড়ানো ছিল কালো বোরখা।

করোনা মহামারী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও যেসব দম্পতি বাজার করতে আসে, তারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর সেরা রোমান্টিক দম্পতি! এই রোমান্টিক দম্পতিকে দেখে আমি কল্পনার মরুভূমিতে হারিয়ে গেলাম। কল্পনায় দেখলাম, ‘আমি বিবিকে নিয়ে বাজার করছি। এমনকি যেখানেই যাচ্ছি বিবিকে নিয়ে যাচ্ছি। সেইসাথে বিবি যেখানে যাচ্ছে আমিও তার সাথে যাচ্ছি।’

আচমকা ‘ধ্যাত’ চিৎকার শুনে আমি কল্পনার মরুভূমি থেকে যাত্রাবাড়ি বাজারে চলে আসলাম। দেখলাম, সেই বোরখা পরা মহিলা হাতে থাকা ডিমের ব্যাগটা কোনো এক কারণে ভুলবশত পড়ে গেছে। সাথে সাথে সবগুলো ডিম ভেঙ্গে গেল। এই অবস্থায় সেই ভদ্রলোক নিজের রাগ সামলাতে না পেরে ‘ধ্যাত’ বলে চিৎকার করে উঠলেন। তারপর নিজ বিবির দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে রইলেন। অন্যদিকে সেই মহিলা বাজারের মানুষের সামনে অপদস্থ হয়ে কাঁদতে লাগলেন!

তার চোখে কান্না দেখে আমার একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। ঘটনাটি উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা.-এর। একদিন সন্ধ্যায় আল্লাহর রাসূল কয়েকজন মেহমানসহ মা আয়িশার ঘরে অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে মা আয়িশা মেহমানদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছিলেন। এমন সময় আমাদের আর এক মা জয়নব বিনতে জাহাশ রা. একটি সুদৃশ্য প্লেটে করে কিছু নাস্তা পাঠালেন। এই নাস্তার প্লেট দেখে আয়িশা রা. ভাবলেন জয়নব বিনতে জাহাশ হয়তো বলতে চাচ্ছেন, ‘তুমি মেহমানদের যথাযথ আপ্যায়ন করতে পারছো না। তাই আমাকে আপ্যায়ন করতে দাও।’

এই কথা ভেবে আয়িশা রা. প্রচন্ড রেগে গেলেন। তারপর আয়িশা রা. নাস্তাসহ সেই প্লেট মাটিতে ছুড়ে মারলেন। ভিতরের ঘর থেকে কিছু ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ শুনে আল্লাহর রাসূল ভিতরে গিয়ে অবস্থা দেখলেন। জয়নব বিনতে জাহাশ রা.-এর প্লেট দেখে আল্লাহর রাসূল বুঝতে পারলেন, ঘটনা কি ঘটেছে! তারপর আল্লাহর রাসূল কিছু না বলে পড়ে যাওয়া খাবারগুলো তুলে নিলেন। আল্লাহর রাসূল কখনো খাবার নষ্ট করতেন না। তারপর তিনি আয়িশা রা.-কে বললেন, অনুরূপ একটি প্লেট তুমি জয়নবের ঘরে পাঠিয়ে দাও। এরপর আল্লাহর রাসূল পুনরায় মেহমানদের সাথে আলাপে যোগ দিলেন। মেহমানদের কৌতূহলি চোখ দেখে আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘তেমন কিছু না। তোমাদের মা একটু ঈর্ষা বোধ করছে। আর এটা দোষের কিছু না।’

সুবহানআল্লাহ! একটু কল্পনা করে দেখুন তো, ঘরে মেহমান উপস্থিত থাকাকালীণ অবস্থায় আপনার বিবি যদি এমন করে প্লেট ভাঙতো, তখন আপনি কী করতেন? বলতেন, ‘মেহমানদের সামনে তুমি আমার মানসম্মান নষ্ট করেছো।’ এভাবে অনেক কথা শুনিয়ে দিতেন।

কিন্তু আল্লাহর রাসূল ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বামী। তিনি বাহিরের মানুষের সামনে নিজের স্ত্রীকে অপদস্থ বা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেননি। তিনি নিজেই নিজের স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করেছেন।

কিন্তু আজকাল অনেক মানুষই ঘরে বাহিরে স্ত্রীদের রাগারাগি করে অপদস্থ করে। এমনকি ইসলাম জানা মানুষরাও এই ভুলটা করে থাকে। অপদস্থ করার পর সেই স্বামীদের মুখ দেখলে মনে হয়, তারা ট্রয় রাজ্য জয় করেছে। অথচ তাদের অনুতপ্ত হওয়ার কথা ছিল।

পঠিত : ৫০০ বার

মন্তব্য: ০