Alapon

পুলসিরাত - The bridge over Hell...


ইসলামে পুলসিরাত একটি পারলৌকিক সেতু যা পার না-হয়ে হাশরের ময়দান থেকে বেহেশতে যাওয়া যাবে না। কিয়ামাত হওয়ার পর সকল মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে এবং ইহলৌকিক জীবনের বিচার করা হবে। এই বিচারের পর হাশরের মাঠ থেকে পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতের দিকে যেতে হবে।

পুলসিরাত সম্পর্কে কোরআন শরীফে (সূরা মারইয়ামঃ ৭১-৭২) উল্লেখিত-
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌঁছবেনা। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা। অতঃপর আমি আল্লাহ ভীরুদেরকে উদ্ধার করবো এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিবো’’।

সাহাবীগণ বলেনঃ আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! পুলসিরাত কি? উত্তরে নবী (সাঃ) বললেনঃ এটি পিছলিয়ে ফেলে দেয়ার স্থান। তাতে থাকবে বড়শীর মত বাঁকা মাথা বিশিষ্ট লোহা (যা মানুষকে ছোঁ মেরে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে), লোহার আঁকুড়া এবং নজদ অঞ্চলের সাদান কাঁটার ন্যায় শক্ত ও লম্বা কাঁটা, একে বলা হয় সা’দান কাঁটা। মুমিনগণ চোখের পলকে, বিজলির গতিতে, বাতাসের গতিতে, দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে এবং উটের গতিতে পুলসিরাত পার হবে। কেউ সম্পূর্ণ মুক্ত অবস্থায় বের হয়ে আসবে। কেউ আহত হবে এবং পরে তা থেকে পরিত্রাণ পাবে। কেউবা জাহান্নামের আগুনে নিপতিত হবে। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তিকে টেনে-হিঁচড়ে পার করা হবে।[1]

আবু সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, জাহান্নামের পুল চুলের চেয়ে অধিক চিকন এবং তলোয়ারের চেয়ে অধিক ধারালো।[2]

নবী (সাঃ) বলেনঃ-
পুলসিরাত পার হওয়ার সময় সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কেউ কাউকে স্মরণ করবে না’’।[3]

সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
“আমি গত রাতে একটি অদ্ভুৎ স্বপ্ন দেখলাম (তাঁর স্বপ্নও ওহী), আমি দেখলাম আমার উম্মতের এক ব্যক্তি সিরাতের (পুলসিরাতের) উপর বুকে হেটে চলেছে, কখনো বা হামাগুড়ি দিচ্ছে, কখনো বা ঝুলে পড়ছে (অর্থাৎ, সে পুলসিরাত পার হতে পারছে না, খুবই কষ্ট হচ্ছে) এমতাবস্থায় আমার উপর পাঠকৃত তার সালাত এসে তাকে সোজাভাবে সিরাতের উপর সোজা দু’পায়ে দাঁড় করিয়ে দিল এবং তাকে উদ্ধার করল।”[4]

হাফসাহ (রাঃ) বলেছিলেন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তোমাদের মাঝে এমন কেউ নেই যে তা অতিক্রম না করবে অর্থৎ- পুলসিরাত। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তো এও বলেছেন;যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে আমি তাদের মুক্তি দিব এবং যালিমদেরকে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত অবস্থায় রেখে দিব।[5]

পুলসিরাত মানুষের জান্নাতে যাওয়ার পথে একটি বাধা বা পরীক্ষা। যারা এই পৃথিবীতে কুরআন এবং হাদীসের আইন ও বিধান অনুসারে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে জীবন পরিচালনা করেছে, তারা এই ভয়ংকর সেতু পুলসিরাত অতিক্রম করে জান্নাতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। পুলসিরাতের পথ হবে অত্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন। তবে ঈমানদারগণ চারপাশে আলো পাবে কেননা তাদের সৎ আমলসমূহ সেদিন আলো হয়ে তাদের ঘিরে রাখবে। ঈমানদারদের উপরে আল্লাহর রহমত থাকবে। ফলে তারা পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবে কিন্তু পাপীরা পুলসিরাত অতিক্রম করতে পারবে না। তারা পুলসিরাত থেকে জাহান্নামে পড়ে যাবে।

পুলসিরাত সম্পর্কে কাউকে তেমন কোন পোস্ট করতে দেখিনা,তাই চেষ্টা করলাম তথ্যাদি সংগ্রহ করে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধি করার এবং আপনাদেরও জানানোর।
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ থাকল।

তথ্যসূত্রঃ- উইকিপিডিয়া, [1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান। [2] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[3] আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ। [4] - ইবনুল কাইয়েম ও সাখাবীর আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, হাদীসটির সনদে দুর্বলতা থাকলেও তা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বা আলোচনাযোগ্য।ইবনুল কাইয়েম, জালাউল আউহাম, পৃ. ২৩৫, সাখাবী, আল-কাউলুল বাদী, পৃ. ১২৪।
[5] - (সূরাহ মারইয়াম ১৯: ৭১-৭২) সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬২৯৮

@Majumdar

পঠিত : ৬৬৬ বার

মন্তব্য: ০