Alapon

এলিট সোসাইটি করোনা আক্রান্ত হওয়ায়, সাধারণ মানুষ খুশি কেন...?



গত সপ্তাহে পত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারলেন, দুজন সংসদ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভেবেছিলাম, সাধারণ মানুষ হয়তো তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটল উলটো। মানুষজন রীতিমত আনন্দ প্রকাশ করল! আবার কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলল, ‘করোনা ভাইরাসের বদৌলতে সব সংসদ সদস্য সাফ হয়ে যাক।’

গতকাল টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ঠ ইতিহাসববিদ মুনতাসীর মামুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার অবস্থার অবনতি হলে আজ তাকে আইসিইউ-তে নেওয়া হয়েছে।

জনাব মুনতাসীর মামুন চেতনা ফিল্টারের অন্যতম রূপকার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় তার ভূমিকা অনবদ্য। ভেবেছিলাম, তার আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনে মানুষজন হয়তো দুঃখ প্রকাশ করবে এবং তার জন্য দুআ করবে। কিন্তু ঘটেছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। তার আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনে মানুষ আনন্দ প্রকাশ করছে। কেউ কেউ তো আগ বাড়িয়ে বলছে, ‘করোনা ভাইরাস কেবলই একটা কাজের কাজ করেছে!’

আজ জানলাম আমাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের ডিজি সাহেব স্বস্ত্রীক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সংবাদ চাউর হওয়ার সাথে সাথে মানুষের যেন আনন্দ আর ধরে না।

তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে গণভবনে করোনা ভাইরাসের আক্রমনের কথা শুনে। ফেসবুক মাধ্যম জানতে পারলাম, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা বেশ কয়েকজন এসএসএফ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। গণভবন নাকি লকডাউন করা হয়েছে। কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে না। এই সংবাদের সত্যতা নিয়ে আমার যথেষ্ঠ সংশয় রয়েছে। কিন্তু আমার সংশয়ের ধার তো আর সাধারণ মানুষ ধারে না। তারা বিগত ঘটনাগুলোর সময়ে যেরূপ আনন্দ প্রকাশ করেছিল, এবার তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি আনন্দ প্রকাশ করছে।

এলিট সোসাইটির লোকজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় মানুষজন খুশি হচ্ছে কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আপনাদের একটি গল্প শোনাই।

এক সরকার দলীয় এমপি করোনা ভাইরাসের ভয়ে তার বাগানবাড়িতে কেয়ারেন্টিনে আছে। সাথে আছে কেবল তার চাকর আব্দুল। এমপি সাহেবের আবার একটু পান করার অভ্যাস আছে। সঙ্গে আছে আর মাত্র এক বোতল মদ। লকডাউনের সময় মদ কোথায় পাবে, সেই চিন্তায় এমপি সাহেব অস্থির। তো এমপি সাহেব প্রতিদিন মদ খেয়ে ভালো করে চেয়ে দেখে আর কতটুকু বাকি আছে! তারপর মদের বোতলখানি চাকর আব্দুলের কাছে হস্তান্তর করে।

চাকর আব্দুলের আবার বাংলা মদ খাওয়ার অভ্যাস। কিন্তু লকডাউনের কারণে বাংলা মদের সাপ্লাই বন্ধ। তাই আব্দুল প্রতিদিন এমপি সাহেবের মদের বোতল থেকে মদ খায়। তারপর যেটুকু মদ খেয়েছে ওই পরিমাণ পানি মদের বোতলে ঢেলে রাখে।

এ রকম একদিন এমপি সাহেব মদ খেতে গিয়ে বুঝতে পারলেন, এটা তো মদ না! অ্যালকোহলের লেশ মাত্র অবশিষ্ঠ নেই। তখন এমপি সাহেব চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন, ‘এই আব্দুল!’
আব্দুল রান্না ঘর থেকে জবাব দিলো, ‘জি স্যার!’
তখন এমপি সাহেব বললেন, ‘মদের বোতলে পানি কেন? অ্যালকোহলগুলো কী করেছিস, জবাব দে?
কিন্তু আব্দুল আর জবাব দেয় না।

তারপর এমপি সাহেব রেগে মেগে রান্না ঘরের দিকে হাটা দিলেন। চোখ মুখ লাল করে বললেন, ‘কি ব্যাপার আব্দুল, তুই আমার কথার জবাব দিচ্ছিস না কেন?’
তখন আব্দুল বলল, ‘স্যার, আপনি যখন আমার নাম ধরে ডাকছেন ওতোটুকুই শোনা গেছে। তারপর আর কিছু শোনা যায়নি। বিশ্বাস না হলে আপনি রান্না ঘরে থাকেন, আমি ঘরে গিয়ে ডাকতেছি!’

তারপর আব্দুল বেডরুমে গিয়ে চিৎকার করে বলল, ‘স্যার শোনা যায়?’
এমপি সাহেব জানালেন, ‘হ্যা, শোনা যায় তো!’
তারপর আব্দুল বললেন, ‘স্যার, ত্রানের চালগুলো চুরি করেছে কে?’
এমপি সাহেব আর জবাব দেয় না।
তারপর আব্দুল বলল, ‘স্যার, ওএমএসের পণ্যগুলো বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে দিয়েছে কে? ভিজিএফের গম মেরে দিয়েছে কে? বিধাবা ভাতার টাকা খেয়েছে কে? প্রতিহিংসা বশত বিরোধী দলের নেতাদের পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে হত্যা করিয়েছে কে?’
এমপি সাহেবের নিরবতা দেখে আব্দুল রান্না ঘরে গিয়ে বলল, ‘স্যার, আর কিছু শুনেছিলেন?’
এমপি সাহেব বললেন, ‘নারে আব্দুল! ওই প্রথমবারই একটু শোনা গিয়েছিল তারপর আর কিছু শোনা যায়নি।’

এলিট সোসাইটি কখনো সাধারণ মানুষের কথা শুনে না, কিংবা শুনলেও কখনো পাত্তা দেয় না। কিন্তু আজ যখন তারাও সাধারণ মানুষের মতই ভুক্তভোগী, তখন মানুষজন তো আনন্দ প্রকাশ করবেই।
হয়তো এটাই সময়ের, tit for tat.

পঠিত : ৪৬৭ বার

মন্তব্য: ০