Alapon

জাল হাদীস: পরিচয় ও কিছু সাধারণ লক্ষণ...


হাদীস এর আভিধানিক অর্থ "কথা" ; পরিভাষায় হাদিস বলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী তার শিক্ষা ও হেদায়েত এবং তার কর্ম ও অবস্থা সমূহকে বুঝানো হয়। তাই একথা সুস্পষ্ট যে জাল হাদিস আসলে হাদীসই নয়।তবুও আমরা কথা প্রসঙ্গে যেমনি ভাবে "জাল টাকা" জাল দলীল" বলে থাকি ঠিক তেমনি"জাল হাদীস" শব্দটি সহজে বোঝাতে ব্যবহার হয়।

জাল-হাদীস দু'ভাগে বিভক্ত।
১.
যার অর্থ ও বিষয়বস্তুই বাতিল। যেগুলো নবীর কথা হওয়াটা কল্পনাই করা যায় না। যে কেউ শুনলেই বুঝতে পারে, এটা কখনোই নবীজির বাণী হতে পারে না।
২.
ঐসকল সুন্দর সুন্দর উপদেশ ও হিকমতপূর্ণ বাণী যেগুলো বাহ্যত খুব চমকপ্রদ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। জালিয়াতরা হাদিস জাল করার কৌশল হিসেবে সুন্দর বাক্যের আশ্রয় নিয়েছে।

এই প্রকার জাল বর্ণনা সাধারণত বেদীন ওয়ায়েজ,বেদীন পীর দরবেশ ও গল্পবাজরা বয়ান করে বেড়ায়।

উভয় প্রকার বর্ণনাই জাল ও ভিত্তিহীন। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের জাল বর্ণনাগুলো বেশি ক্ষতিকর। কেননা এগুলোকে ত্যাগ করতে বলা হলে অজ্ঞ লোকেরা আপত্তি করে বলে হাদীস মওযু হলেও কথা তো সত্য। তাইলে বলতে সমস্যা কি?
এজন্য সাধারণ মানুষ এটা নিয়ে ধোঁকায় পড়ে যায়।
কিন্তু বাস্তব কথা হলো মিথ্যা তো মিথ্যাই,বাহ্যত সেটা যত সুন্দরই হোক না কেন। নবীজি যেটা এরশাদ করেন নি সেটা যত ভালোই মনে হোক না কেন সেটাকে তাঁর বাণী বলা জায়েজ হবে না। কেননা এতে দুটি বড় ধরনের দ্বীনবিকৃতি ঘটে।

১.পরোক্ষ ভাবে এটা তাঁর উপর দোষারোপ,যে এই ভালো কথাটি বলা উচিত ছিল কিন্তু তিনি বলে যাননি আমি বলে দিলাম।

২.
তাছাড়া আল্লাহতায়ালা দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এখন আর কারো পক্ষ থেকে সংযোজনের প্রয়োজন নেই। কেউ যদি কোন ভালো কথা নবীজির নামে সংযোজন করতে চায় তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় দ্বীন কিছুটা অপূর্ণ ছিল এখন সে এসে পূর্ণ করে দিল। নাউজুবিল্লাহ।

জাল হাদিস চেনার কিছু সাধারণ সূত্র:
১. বাক্যটি এত অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়া যে এটি নবীজি (সাsmileএর বাণী হিসেবে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। যেমন- "কেউ যদি একবার লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলে তাহলে একটি পাখি সৃষ্টি হয় যার সত্তর হাজার জিহ্বা রয়েছে। প্রতিটি জিহ্বা সত্তর হাজার ভাষায় তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।"
২. বাক্যটি যদি ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য না হয়। যেমন "বেগুন যে উদ্দেশ্যে খাওয়া হয় তা পূরণ হয়।"
৩. হাদিসে যদি নির্ধারিত তারিখ থাকে। যেমন অমুক অমুক সালে অমুক অমুক ঘটনা ঘটবে।
৪.বাক্যের ভাষা যদি অতিনিম্নমানের হয়। যেমন -"চারটি জিনিস চারটি জিনিস থেকে তৃপ্ত হয় না। নারী-পুরুষের থেকে, জমিন বৃষ্টি থেকে, চোখ নজর দেওয়া থেকে, কান খবর শোনা থেকে।"
৫. বিভিন্ন শ্রেণীকে নিন্দা করে যে সকল বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন তুর্কি জাতির নিন্দা, নপুংসকদের নিন্দা, মামলুকদের নিন্দা,সুদানী ও হাবশীদের নিন্দা।

বাংলাভাষায় জাল বর্ণনা কেন্দ্রীক নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ:
#এসব হাদীস নয়-১ও২ মাওলানা আব্দুল মালেক হাফি:
#হাদীসের নামে জালিয়াতি-ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.

বি:দ্র: এসকল লক্ষণের উপর ভিত্তি করে কোন বর্ণনাকে জাল বা ভিত্তিহীন বলে সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না। রোগের লক্ষণ পাওয়া গেলে যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়, ঠিক তেমনি এগুলো(সহ অন্যান্য লক্ষণগুলো) পাওয়া গেলে বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে তাহকীক করে নিশ্চিত হতে হবে।

@Zahid

পঠিত : ১২৩৯ বার

মন্তব্য: ০