Alapon

কাসাভা (Casava) পরবর্তী প্রজন্মের সম্ভাব্য খাদ্য হয়ে উঠতে পারে...


কাসাভা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে হয় কিন্তু অনেক মানুষ জানেনা যে এটা পাশ্চাত্যে বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশের প্রায় মানুষের একটি অভ্যাস আছে যে, পাশ্চাত্যের মানুষেরা যা খায়, তা নিজেরাও দামী খাবার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু কাসাভা কিভাবে এখনও মানুষের চাহিদার অন্তরালের রয়ে গেল সেটা ভাবার বিষয়!

বাংলাদেশের এলাকা ভেদে এই গাছটির নাম ভিন্ন। চট্টগ্রামে বলা হয় ঠাণ্ডা আলু। (পাঠকদের কমেন্ট থেকে বাকি নাম গুলো সংগ্রহ করে এই নামের তালিকা লম্বা করা হবে)। কেন এটাকে ঠাণ্ডা আলু বলা হয় আজো জানা হয়নি।

এই গাছটি রোপণ করা একেবারেই সহজ। আগেকার সময় মানুষ এটাকে বেড়ার ঠুনি হিসেবে ব্যবহার করত। ঠুনির জন্য এমন সব গাছ বিবেচনা করা হত যা মাটিতে পুতে দিলে নিজেই গাছ হিসেবে সজাগ হয়ে জিন্দা হয়ে উঠে। কাসাভাও একই ধরনের কাণ্ড বিশিষ্ট গাছ। কষ্ট করে একবার রোপণ করে দিলেই হয়। পরিণত বয়সে মাটির শিকড় গুলো ফুলে মিষ্টির আলুর আলুর ন্যায় মোটা হয়ে যায়। এই মোট শিকড়ই সেই ঠাণ্ডা আলু।

আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় এটার চাষ হয় প্রচুর পরিমাণে। বহু দেশে এটা জাতীয় খাবার। বাংলাদেশের জলবায়ু এই গাছের জন্য চরম উপযোগী। একদা আমার মায়ের নির্দেশে গ্রামের বাড়ীর বেড়ার ঠুনি হিসেবে এই গাছগুলোর কয়েকটি লাটি পুঁতেছিলাম। বছরান্তে দেখতে পেলাম, গাছের গোরা ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে, বেড়াগুলো কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছে! মাটি খুড়ে দেখতে পেলাম, সেখানে অনেক পরিমাণ আলুর মত কিছু সৃষ্টি হয়ে আছে! এটি একটি অবাক করা কাণ্ড ছিল! বাড়ীতে এক ভিখারিনী এসেছিল। তিনি জানালেন দেশের কোথাও কোথাও এটা খায়। আমাদের আপত্তি না থাকলে তিনি এগুলো নিয়ে যেতে ইচ্ছুক। ভিখারিনীরাও এক ধরনের ক্ষুদ্র যাযাবর, তাই তাদের কাছে নানা জায়গার বিচিত্র তথ্য থাকে।

এটা কাঁচা খাওয়া যায়, স্বাদ কাঁচা বাদামের মত। পরীক্ষামূলক আমি নিজেও খেয়েছি। বেশী পরিমাণে খেলে বদহজম হয়ে পেটের ব্যথা সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকে। এটাকে আলুর বিকল্প হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায় তো বটেই, তাছাড়া এটাকে পিষে রুটি বানানো যায়। এটার চিপস এখন শপিং মল গুলোতে পাওয়া যায়। অবিকল আলুর চিপসের মত টেস্ট সম্পন্ন এই পণ্য এখন বাজারেও দারুণ বিক্রি হয়। রসুনের ঘ্রাণ ও হিংয়ের ঘ্রাণ-যুক্ত কাসাভা মানুষকে অনেক আকৃষ্ট করে।

এটা এখন অন্যভাবে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এটাকে ইউকা কিংবা ব্রাজিলীয়ান এরারুট ও বলা হয়। কাপড়ের গাঁথুনি শক্ত করতে এটার মাড় খুবই কার্যকর। লন্ড্রি সামগ্রীতে বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়। কাসাভার টাচ বের করে সেটাকে ছোট বল বানিয়ে, সাগু দানা হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হয়। পণ্যের গায়ের লেবেল না পড়ে কিনলে মানুষ জানতেই পারবে না, বাজারের দু ধরনের সাগু দানার অস্তিত্ব রয়েছে। ভুল বুঝবেন না, আমরা যেগুলো সাগু হিসেবে চিনি সেগুলো, ভিন্ন গাছ থেকে সৃষ্ট জিনিষ। কিন্তু কাসাভা দিয়েও সাগু দানার বিকল্প সৃষ্টি হয়েছে, সেটা উল্লেখ করাই এখানে লক্ষ্য। সাগু দানা নিয়ে অন্যদিন না হয় ভিন্নভাবে কথা হবে, ইনশায়াল্লাহ।

নেট ঘাটাঘাটি করে এর কিছু ঔষধি উপকারিতার কথা পেয়েছি। যেমন বাত-ব্যথায় উপকারী, মাথায় খুশকি রোধ করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, চুল পরা থামায়, দীর্ঘায়িত শ্রমের ক্লান্তি দূর ও কোষের সক্ষমতা ফিরিয়ে আনে এবং ত্বকের সংক্রমণ রহিত করে।

বাড়ির বাহিরে, অবহেলিত জায়গায় সামান্য পরিচর্যা করলে বছরান্তে প্রচুর পরিমাণ কাসাভা উৎপাদন সম্ভব। এর মুল শুকুর ও সজারুর কাছে খুবই পছন্দনীয়। দেশে এখন এসব প্রাণী নেই বললেই চলে। তাই নিরুপদ্রবের মাধ্যমে এটার চাষ সম্ভব। তাছাড়া এটা থেকে প্রচুর জালানি কাঠও পাওয়া যায়। নিজেদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে, কাসাভা বাংলাদেশে একটি অর্থকড়ি ফসল হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে। যে কোন পণ্য বাজার জাত করার আগে, ভোক্তা সৃষ্টি করতে হয়। তাই মানুষকে সচেতন করতে এই পোষ্ট প্রচার করুন, তাহলে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও চাহিদা দুটোই বাড়তে থাকবে। তখন নতুন যুবকেরা এটার চাষের দিকে মন দিতে পারবে।

@Tipu

পঠিত : ১০৮৬ বার

মন্তব্য: ০