Alapon

ইসলাম কি কেবলই শান্তির ধর্ম...?


ইসলামের নিরীহ ভার্সনটি পশ্চিম ও তাদের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের কল্যাণে আমাদের পরিবেশে খুব বেশী চর্চিত। 'ইসলাম শান্তি, সমতা ও স্বাধীনতার ধর্ম' সহ বেশ কিছু শ্লোগানকে এখন জনপ্রিয় করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় এসব চটকদার শ্লোগানের আশ্র‍য় নেওয়া ভাইয়েরা এসবের ভেতরকার ফাঁকফোকর সম্পর্কে আর ভেবে দেখেননা। সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন জর্ডানের বিখ্যাত ইসলামি শিক্ষাবিদ ও দাঈ ড. ইয়াদ আল কুনাইবী (হাফিঃ)।

আফগানের ইসলামী ইমারাত, শায়খ মাকদিসী ও শামের হাইয়ার পক্ষাবলম্বন করার অভিযোগে তার বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে এখন পর্যন্ত তিনি চারবার গ্রেফতার হয়েছেন। আল্লাহ তাকে দৃঢ় রাখুন।

-
বক্তব্য:
অধিকাংশ সময় আমরা মুসলিমদের বলতে শুনি, ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশেষকরে এই কথাটা বলেন ইউরোপের মুসলিমগণ যখন তারা অন্যান্যদের সামনে নিজ ধর্মের পক্ষে যুক্তি দেন। তারা বলেন: Islam is a religion of peace। শান্তির ধর্ম। তখন অমুসলিমগণ জবাবে বলেন: তোমরা কিভাবে ইসলামকে শান্তির ধর্ম বল অথচ কোরানের বিভিন্ন আয়াতে এসেছে, তোমরা কাফেরদের সাথে লড়াই কর। তখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেন মুসলিমগণ কাউকে ধোঁকা দিচ্ছে কিংবা নিজ ধর্মের কোনকিছু তারা লুকানোর চেষ্টা করছে। অনেক সময় দেখা যায় তারাও প্রতিউত্তরে বলছে, তোমাদের ধর্মেও তো যুদ্ধের কথা আছে।

আমার ভাইয়েরা! আমাদের ধর্মে লজ্জা পাওয়ার মত কোন বিষয় নেই। বরঞ্চ আমাদের সর্বপ্রথম উচিত হলো নিজ ধর্মের বাস্তবতা সম্পর্কে স্পষ্ট ও ওয়াকিফহাল হওয়া। এ ব্যাপারে গর্ব করা। তবেই আমরা সন্দেহ ও লজ্জা না পেয়ে বরং পুরো পৃথিবীর সামনে গর্ব করতে পারবো।
যখন আপনি বলবেন: ইসলাম অমুক মূল্যবোধের ধর্ম। তখন সেই মূল্যবোধটি ইসলামের সকল শিক্ষায় উপস্থিত থাকা জরুরি, কোন আয়াত বা হাদীস যার বিরোধিতা করতে পারবেনা। তাই যদি আমরা একবাক্যেই ইসলামের পরিচয় দিতে চাই তাহলে কখনোই উচিত হবেনা একে শান্তির ধর্ম নামে অবহিত করা। কেননা ইসলাম অনেক সময়েই যুদ্ধের নির্দেশ দেয়।

হা তবে আমরা মানুষদের মাঝে এটা প্রচার করতে পারি যে, ইসলাম সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার ধর্ম। এই দুটি মূল্যবোধ ইসলামের প্রতিটি শিক্ষায়, প্রতিটি আয়াত হাদীস ও আইন প্রণয়নে বিদ্যমান। আপনি একটি আয়াতও দেখতে পাবেননা যা সত্যের কথা না বলে বাতিলের কথা বলছে অথবা ন্যায়পরায়ণতার পক্ষে না বলে যুলমের পক্ষে দাড়িয়েছে। পাওয়া অসম্ভব। সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা এমন দুটি মূল্যবোধ যা ইসলামের সমস্ত নিয়ম কানুনে বিদ্যমান। মহান আল্লাহ বলেন:
﴾ আল্লাহ তো সেই সত্ত্বা যিনি সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা সহকারে কিতাব নাযিল করেছেন ﴿
﴾ আমি সত্যসহ এ কোরআন নাযিল করেছি এবং সত্য সহ এটা নাযিল হয়েছে। ﴿
﴾ আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। ﴿

অপরদিকে অনেক সময় কুফফারদের সাথে শান্তিস্থাপন যুলম ও বাতিলের কারণ হয়ে দাড়ায়। সে সময় সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার দাবী হলো, তাদের সাথে জিহাদ চালিয়ে যাওয়া।

স্বাধীনতার বিষয়টিও এমন। এভাবে ঢালাওভাবে বলা উচিৎ হবেনা যে ইসলাম স্বাধীনতার ধর্ম। তখন প্রশ্ন আসবে যদি আদৌ তা স্বাধীনতার ধর্ম হয়ে থাকে তাহলে কেন উদাহারনস্বরূপ সমকামীতার স্বাধীনতায় তা বিশ্বাসী না? বরঞ্চ আমরা বলবো: এমন অনেক স্বাধীনতা রয়েছে যা বাতিল ও যুলমের নামান্তর। ইসলাম একে সমর্থন করেনা।
এভাবে ঢালাওভাবে বলা উচিৎ হবেনা যে ইসলাম সমতার ধর্ম। তখন প্রশ্ন আসবে: দায়িত্ব, কর্তব্য ও সামাজিক সকল বিষয়ে কেন এতে নারী পুরুষের সমঅধিকার নেই? বরঞ্চ আমরা বলবো: অনেক সময় সমঅধিকার বাতিল ও যুলমের কারণ হয়ে দাড়ায়।

আচ্ছা তাহলে প্রত্যেক বিষয়ে আমরা সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা কিভাবে চিনতে পারবো? আমরা তা চিনতে পারবো আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য ও দাসত্বের মাধ্যমে। প্রবৃত্তি, ক্ষমতাশীল, প্রতিপত্তিশীল ও গণতন্ত্রের আড়ালো লুকানো গণমাধ্যমের অনুসরণের মাধ্যমে নয়।

এভাবে যখন আমরা ইসলামকে তার আসল আকৃতিতে চিনতে শিখবো, যখন তার প্রকৃত অবস্থা মানুষজনের নিকট উপস্থাপন করবো তখন কেউ কোন আয়াত কিংবা ইসলামী আইনকে সামনে নিয়ে আমাদের মুখোমুখি হলে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়বোনা। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ পশ্চিমে অবস্থানরত আমাদের সকল ভাইয়ের প্রতি যারা অমুসলিমদের সাথে চলাফেরা করেন। এই ব্যাপারগুলোতে তারা যেন স্পষ্ট থাকে। আর অমুসলিমদের সাথে আলোচনায় তাদের শিরোনান যেন হয়, ইসলাম সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার ধর্ম।

আল্লাহ তায়ালা সত্য ও ন্যায়ের প্রতি মানুষের অন্তরে ও স্বভাবে আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যে এটিকে কোনরকম পরিবর্তন ছাড়া গ্রহণ করে নিবে তাকে তো অভিনন্দন। আর যে তা প্রত্যাখ্যান করবে তা হবে তার বিকৃত মনোভাবের কারণে।
﴾ আপনি যাকে চান তাকে হেদায়াত দিতে পারবেননা ﴿
কোন যুগে প্রচলিত কোন শ্লোগানকে ইসলামের সাথে লাগিয়ে দেওয়া কখনোই সমীচীন নয়। আপনি দেখবেন, এর প্রচলনকারীগণও একে যথাযথভাবে পালন করেনা। যেমন যে সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শান্তি, স্বাধীনতা ও সমতার স্লোগান তোলে তারাও খোদ বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজেরা এসব আদর্শ লঙ্ঘন করে।

অবশেষে ঘুরেফিরে আপনি শান্তি খুঁজে পাবেন ইসলামের সুরক্ষিত ওহীতে। যে শান্তি সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার চাদরে আবৃত। কবি আহমদ শাওক্বী সুন্দর বলেছেন:
রাসুল কত সম্মানজনক যুদ্ধ লড়েছিলেন
যেখানে হক হয়তো প্রতিষ্ঠিত হতো নতুবা হতো উচ্চকিত
এতে আল্লাহর সৈনিকেরা ছিলেন অতি কঠোর
কিন্তু তা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছিল কোমলতা
তারা অজ্ঞতার উপর এমন আঘাত হেনেছিলেন
যা জাহালত ও পথভ্রষ্টতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল
তারা যুদ্ধ করতেন শান্তির হয়ে
রক্ত ঝরতো, কিন্তু তা দমিয়ে রাখতো রক্তের প্লাবনকে।

আল্লাহ অধিক অবগত। ওয়াস সালাম।

ড. ইয়াদ আল কুনাইবী (হাফিঃ)।

পঠিত : ৬৯১ বার

মন্তব্য: ০