Alapon

আজ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী...


আজকে ১১-ই মে।চার বছর আগের এই দিনে ড. খোন্দকার আনম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ ঝিনাইদহ থেকে ঢাকা যাবার পথে মাগুরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে ওনার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।তাঁর জীবনটা ছিল অসাধারণ বরকতময়। বিশুদ্ধ নিয়ত,সুন্নাহর অনুসরণ সর্বোপরি আল্লাহর ইচ্ছাতেই তা সম্ভব হয়েছিল।

অল্প বয়সে স্যারের বাবা মারা গিয়েছিলেন। নিজে বড় হয়েছেন সাথে বোনদেরও বড় করেছেন।অসাধারণ মেধাবী ছিলেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে বাসে বসে কুরআন মুখস্ত করে ফেলেছিলেন।দুইবার রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হয়েছেন।হাদীসে ওপর মাস্টার্স এব আরবী ভাষাতত্ত্বের ওপর পি.এইচ.ডি।রিয়াদের আমেরিকান মিলিটারি বেইসে তাঁর দাওয়াতী কাজের ফলে তিন শতাধিক আমেরিকান সৈন্য ইসলাম গ্রহণ করেন।
২০/২২ বছরের দাওয়াতী জীবনে উনি ৩০ টার মত বই লিখেছেন।অসংখ্যা মাহফিল,টিভি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন।নিজের প্রাতিষ্ঠানিক স্টুডিওতে ভিডিও বানিয়েছেন।বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর এত আলোচনা আছে যা,তাঁর মৃত্যুর চার বছর পরও নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা হচ্ছে।আস সুন্নাহ ট্রাস্টকে শক্ত ভিতে দাড় করিয়েছেন। তার ছাত্রদের ভাষায়,বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বিভাগে সব থেকে বেশি ক্লাস নিতেন তিনি।নিজের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ক্লাস নিতেন।

রাত্রে ইশার নামাযের পর পরই ঘুমিয়ে যেতেন।উঠতেন রাত দুইটা/আড়াইটা তে।জামায়াতে ফযরের নামায আদায় করে আস সুন্নাহ ট্রাস্টের অফিসে যেতেন।লেখার কাজ বা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কাজ গুলো শেষ করতেন। বাসায় ফিরে নাস্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন। সেখান থেকে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে আবার ট্রাস্টের কাজ বা যে প্রোগ্রাম থাকত।

যখন যেটা করার তখনই সেটা করতেন।এক রাত্রে তাঁর এক ছাত্র ফরিদপুর থেকে ফোন দিয়েছিল; তার কোন সনাতনধর্মী বন্ধু মায়ের মুখাগ্নি করে মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যে,ইসলাম গ্রহন করতে চায়।স্যার সেই রাত্রে ফরিদপুর গিয়ে তাকে শাহাদা পড়িয়ে আসেন।তাঁর কথা ছিল,সকাল হওয়ার আগেই যদি তার মনের পরিবর্তন ঘটে যায়!

উনি দোতলায় থাকতেন।সিড়ি ভাঙতে না পারা মা আর প্রতিবন্ধী ছোটবোন থাকতেন নিচে। বাইরে যাবার সময় আবার ফেরার সময় দেখা করে যেতেন।তাঁর মাদ্রাসার বোর্ডিং এ যে খাবার রান্না হতো সেটাই তাঁর বাসাতেও খাওয়া হতো।সবার সাথে হেসে কথা বলছেন,সবাইকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।সবার প্রিয় 'ডক্টর স্যার'।

সদা হাস্যমুখী মানুষটার মৃত্যুতে পুরো শহর শোকে মুহ্যমান হয়ে গেছিলো।তাঁর মৃত্যুর কয়েকদিন পর এক দোকানে গেলে দোকান মালিক বলছিলেন,স্যারের মৃত্যুর খবর তাঁকে এতটা মুষড়ে দিয়েছিল উনি কাজ করতে পারছিলেন না।দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন।

সৌদিআরবে ভালো কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে দেশে ফিরেছিলেন।প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাঁকে আমেরিকা, ইংল্যান্ডে তাদের কাছে স্থায়ী হবার প্রস্তাব দিত।তিনি সবিনয়ে ফিরিয়ে দিতেন।তাদের কাছে যাবেন কিন্তু স্থায়ী হবেন না।দেশে দাওয়াতী কাজে সময় দিতে পারছিলেন না তাই পিস টিভির প্রোগ্রামও একবারই করেছিলেন।
ইউটিউবে বা ফেইসবুকে তাঁর প্রতিটা পোস্টের নিচে অসংখ্যা মানুষ স্যারের জন্য দুআ করে,কান্না করে।আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন দুনিয়ার মানুষও তাঁকে এভাবেই ভালোবাসে।এটাই সফল জীবন।

আল্লাহ যেন নবী আ.,সাহাবা রাদি. এবং সালফে সালেহীনদের সাথে স্যারের হাশর করান।

তথ্যসূত্র: স্যারের স্ত্রী এবং বোন

পঠিত : ৬৭০ বার

মন্তব্য: ০