Alapon

যে যে বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল হচ্ছে...


পত্রিকায় দেখলাম, লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ মানুষ আন্দোলন করছে। পুলিশ আন্দোলনে বাধা দিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে পুলিশ ১০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে।

ভেবে দেখুন, অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশের মানুষ যেখানে লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে, সেখানে বাংলাদেশের মত একটি স্বল্প আয়ের দেশে লকডাউন বাস্তবায়ন করা কতটুকু সম্ভব!

ইতোমধ্যেই দেশে অঘোষিত লক ডাউন উঠে গেছে। অর্থাৎ, লক ডাউন বলতে আদৌত যা বুঝায় তা বাংলাদেশে বলবত নেই। কারণ, কাঁচা বাজারে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারও বাধা দিচ্ছে না। কারণ, সরকার বাধা দিলে ঢাকা শহরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা বাজার আসা বন্ধ হবে। ফলে দেশের বিশাল পরিমাণ খাদ্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর বাংলাদেশের মত একটি দেশের যখন খাদ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য আমদানি পন্যের উপর নির্ভর করতে হয়, তখন যেকোনা পরিস্থিতিতে খাদ্যপণ্য নষ্ট করা বিলাসিতা বৈকি। সরকারের এই নীরব সমর্থনকে সাধুবাদ জানাই।

দ্বিতীয়ত, সরকার কলকারখানাসহ গার্মেন্টসগুলো খুলে দিয়েছে। বলতে পারেন, খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, করোনা ভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে বিরাট সমস্যা তৈরি হয়েছে। শত শত কোটি টাকার অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। এখনো যেসব অর্ডার বাতিল হয়নি, গার্মেন্টস চালু না করলে সেগুলোও বাতিল হয়ে যেত। কথায় আছে নাই মামার চেয়ে কানা ভালো। তাই যেসব অর্ডার এখনো বলবতা আছে, সেগুলো সময়মত ডেলিভারি দেওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে দেশের অর্থনীতিতে যে আঘাত আসছে, তা কিছুটা প্রশমিত হবে।

অন্যদিতে গার্মেন্টসে যারা কাজ করে, তারা দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের আয় ইনকামের একমাত্র উৎস এই চাকরি। অন্যদিকে সরকারের এমন সক্ষমতাও নেই যে, ১০ কোটি মানুষকে মাসের পর মাস ভাতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখবে। গার্মেন্টস যদি খুলে দেওয়া না হতো, তাহলে গার্মে‍ন্টস কর্মীরা করোনা ভাইরাস থেকে রেহাই পেলেও, না খেয়ে মরার হাত থেকে বাঁচতে পারতো না! আর এটাই বাস্তবতা।

তৃতীয়ত, শপিংমল তথা মার্কেট খুলে দেওয়ার কারণ কী? এর কারণ হল দেশের অর্থনীতির চাকা সীমিত পরিসরে হলেও সচল রাখা। এভাবে মাসের পর মাস বন্ধ থাকলে ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশে দূর্ভিক্ষের বাতাস বইতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

নীরব লক ডাউন শিথিল হয়ে যাওয়ার কারণে, বিএনপির মুখপাত্র রিজভী সাহেব বেজায় চটেছেন। মির্জা‍ ফকরুল ইসলামও গলা উঁচিয়ে বলছেন, এই সরকার জনগণের জান মালের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।

সরকার যে ব্যর্থ হয়েছে, এ কথা একটা দুধের শিশুও জানে। কিন্তু লক ডাউন তুলে না নিলে দেশের সাধারণ মানুষ করোনা ভাইরাসে মারা না গেলেও যে না খেয়ে মারা যাবে, তার প্রতিকার কী বিএনপি কিংবা রিজভী অথবা মির্জা ফকরুল করবে? করবে না।

আমি সরকারের একজন সমালোচক। সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সমালোচনা করা যাবে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বলবত লক ডাউন শিথিল করা নিয়ে সমালোচনা করার আগে- আমাদের মত খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষের কথা ভাববেন।

প্রকৃত বাস্তবতা হল, আপনাকে করোনা ভাইরাসের সাথে বসবাস করেই টিকে থাকতে হবে। সাবধানতার মধ্য দিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করেই বেঁচে থাকতে হবে। নচেৎ সবকিছু বাদ দিয়ে ঘরে গিয়ে বসে থাকলে করোনা ভাইরাসে না মরলেও না খেয়ে কিন্তু ঠিকই মরতে হবে!

পঠিত : ৩৮৯ বার

মন্তব্য: ০