Alapon

আসুন জেনে নেই, কে যোগ্য সন্তান আর কে অযোগ্য সন্তান...


কয়েকদিন আগে অনলাইনে একটা ক্লাস করছিলাম। তখন একজন প্রশ্ন করল, ‘শাইখ, ভালো সন্তান বা যোগ্য সন্তান এবং খারাপ সন্তান বা অযোগ্য সন্তান কে? আমরা কীভাবে তাদের সহজে আলাদা করতে পারব?’

শাইখ কুরআন থেকে আয়াত এবং হাদীস থেকে আল্লাহর রাসূলের বিভিন্ন বাণী উল্লেখ করে বোঝালেন— কে ভালো সন্তান আর কে খারাপ সন্তান!

প্রশ্নটাকে আমি ইসলামি দৃষ্টিকোন থেকে বেরিয়ে সাধারণ দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করলাম।

আমি একজনকে চিনি, যার বাবা ছিলেন বিত্তশালী। বিত্তশালী হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই বেশ ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু ভালো স্কুলে পড়লেই তো আর ভালো রেজাল্ট করা যায় না। পড়াশোনায় মনোযোগি না হওয়ার কারণে, সে বরাবরই এভারেজ রেজাল্ট করত। পড়াশোনা নিয়ে তার মাঝে কখনো সিরিয়াসভাব দেখা যায়নি।

পড়াশোনায় মনোযোগি না হলেও অন্যদিকে কিন্তু ঠিকই মনোযোগ ছিল। সময়ের সাথে সাথে তার চাহিদা বাড়তে থাকে। প্রথমে মোবাইল, তারপর বাইক, তারপর দৈনিক হাজার টাকা। অধিক ভালোবাসার দরুন তার বাবা এসব দিতে কখনো কার্পন্য করতেন না।

এভাবে চলতে চলতে তার চাহিদার মাত্রা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তার বাবা এতো টাকার কী প্রয়োজন— তা জানতে চাইলেন। প্রশ্ন করার সাথে সাথে সেই ছেলে তার বাবার গালে কসে থাপ্পড় মারল। তারপর বলল- টাকা চেয়েছি টাকা দিবে। আর একটা প্রশ্ন করলে আরও মাইর খাবে।

এরপর সেই বাবা আবিষ্কার করলেন, তার ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। তিনি টাকা দেওয়া বন্ধ করলে— সেই ছেলে ছিনতাই করা শুরু করল। এভাবে একদিন ছিনতাই করার সময় সেই ছেলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। আর এই ঘটনা সেই লোকের মান সম্মান সব মাটির সাথে মিশিয়ে দিল। সমাজে তার যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকল। অর্থা‍ৎ সন্তানের কারণেই সেই বাবার অর্জিত মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে গেল।

এবার আর একজনের কথা বলি।

আমি এমন একজনকে চিনি— যার বাবা ছিলেন একজন ছোট্ট ব্যবসায়ি। সেই ব্যবসা দিয়ে কষ্ট করে দিন যাপন করতেন আর সন্তানকে পড়াশোনা করাতেন। কিন্তু পড়াশোনায় অনেক খরচ। ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেলে এবং ক্লাস এইটে বৃত্তি পেলে সরকার থেকে টাকা দেওয়া হত। তখন সেই ছেলে মনস্থির করল, আমাকে বৃত্তি পেতে হবে। পড়াশোনাটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অবশ্যই বৃত্তি পেতে হবে।

মানুষ যদি আল্লাহর কাছে মন থেকে কিছু চায় আর সেই অনুযায়ী চেষ্টা করে তবে অবশ্যই সাফল্য পাওয়া যায়। আর তিনিও পরিশ্রমের ফলাফলস্বরূপ বৃত্তি পেলেন।

এরপর এস,এস,সি পরীক্ষাকে তখন ম্যাট্রিক পরীক্ষা বলা হত। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় স্টার মার্ক নিয়ে ভালো রেজাল্ট করায় স্টাইফেন পেতেন। স্টাইফেনের টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনা চালাতেন।

এরপর ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পর তিনি মেডিকেল কলেজে এডমিশন লাভ করেন। মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার অনেক খরচ। তাই খরচ মিটাতে শুরু করেন টিউশুনি। এভাবে কষ্ট করে পড়াশোনা করে ডাক্তারি পাশ করেন। তারপর বিসিএস ক্যাডার হয়ে ডাক্তার হয়েছেন এবং নিজের পরিবারের দেখাশোনার পাশাপাশি এলাকার মানুষের সুকিচিৎসা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছেন।

ছোট্ট ব্যবসায়ি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো হওয়ার কারণে এই বাবার সমাজে তেমন একটা গুরুত্ব ছিল না। আর তিনিও নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন। কিন্তু ছেলে যখন ডাক্তার হল— তখন তিনি হয়ে গেলেন ডাক্তারের বাবা। ডাক্তারের বাবা হওয়ার কারণে আজ তার সমাজে গ্রহণযোগ্যতাও চোখে দেখার মত। অর্থাৎ নিজ সন্তানের কারণেই তার মান সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা এটাই বুঝানোর চেষ্টা করলাম— যে সন্তানের কারণে বাবা-মায়ের সম্মান বৃদ্ধি পায় সে ভালো সন্তান বা যোগ্য সন্তান। আর যে সন্তানের কারণে বাবা-মায়ের সম্মান নষ্ট হয়ে যায়— সে সন্তান খারাপ সন্তান বা অযোগ্য সন্তান।

পঠিত : ১২৯০ বার

মন্তব্য: ০