Alapon

পবিত্র কুরআনের যে চারটি শব্দে লুকিয়ে আছে জীবনের সফলতা...


পবিত্র রমজান মাসকে বলা হয়, কুরআনের মাস। কারণ, অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারদের মতে এই মাসেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। কুরআন নাজিল হয়েছে মানুষকে আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রদান করার জন্য। আর আমাদের শিক্ষক ছিলেন হযরত মুহাম্মাদ সা.।

পবিত্র কুরআন এমন একটি কিতাব, যে কিতাবে যেমন পরকালীণ সমস্যা এবং এর সমাধান নিয়ে কথা বলা হয়েছে, তেমনি ইহকালীণ সমস্যা এবং এর সমাধাণ নিয়ে কথা বলেছে। এখন আমরা পবিত্র কুরআন থেকে এমন চারটি শব্দ নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-

১) ‘লা তাহযান’ অর্থাৎ হতাশ হও না। সাধারণত মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব হচ্ছে হতাশাবাদি। আর মানুষ অতীত নিয়ে বেশি হতাশা প্রকাশ করে। বলে, ইশ! আমি যদি অমুক কাজটা না করতাম তাহলে আমার ব্যবসাটা আরও বড় হতো। আরও কয়েকটা বাড়ি বানাতে পারতাম। তারপর সেগুলো ভাড়া দিয়ে মাসে কয়েক লাখ টাকা করে কামাতাম। তারপর সেই টাকা দিয়ে নিকুঞ্জতে একটা বাড়ি কিনে সেখানে বউ বাচ্চাসহ সেটেল হয়ে যেতাম; তাহলে জীবনে রিলাক্স হতে পারতাম। কিন্তু পবিত্র কুরআন ‘লা তাহযান’ শব্দ দ্বারা বলছে অতীত নিয়ে কখনো হতাশ হবেন না। অতীত নিয়ে কখনো আফসোস করা যাবে না। কখনো বলা যাবে না, ইশ! আমি যদি ছেলেটাকে নিয়ে ঢাকায় না যেতাম তাহলে হয়তো অ্যাকসিডেন্ট হতো না, আর সে মারাও যেতো না।

এ ধরণের কথাবার্তা আল্লাহর ফয়সালাকে চ্যালেঞ্জ করে। তাকদীরের প্রতি অবিশ্বাসী করে তুলে। ফলে হতাশাবাদি ব্যক্তি ইবাদত বন্দেগির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং শয়তানের গোলামে পরিণত হয়ে যায়।

২) ‘লা তাখাফ’ পবিত্র কুরআনের এই শব্দদ্বারা মানুষকে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করা হয়েছে। অনেক মানুষ এমন আছেন যারা ভবিষ্যৎ নিয়ে সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকে। মনে করুন, এমন এক ব্যক্তি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তখন সেই ব্যক্তি ভাববে আমার বিয়েটা সুখের হবে কিনা! যদি সুখের না হয় তাহলে আমার কী হবে। লা হাওলা ওয়া কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। তখন তারা ভবিষ্যৎ জানার জন্য নানা কিছু করে। এমনকি এসময় তারা শিরকের মত ভয়াবহ পাপ করতেও পিছপা হয় না। তাই কুরআন উপরোক্ত শব্দ দ্বারা নির্দেষ করছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনোই দুশ্চিন্তা করা যাবে না। তা সম্পূর্ণভাবে ন্যস্ত করতে হবে মহান আল্লাহর উপর ।

৩) ‘লা তাগদাব’ পবিত্র কুরআনের এই শব্দ দ্বারা রাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, রাগ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। একজন মানুষের ধ্বংসের জন্য কেবল অতিরিক্ত রাগই যথেষ্ট; আর কোনো কিছুর দরকার নেই। এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা প্রচন্ড রাগের বশে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়; পরবর্তিতে রাগ পড়ে গেলে তখন মাথা চাপড়ায়। হায় আমি একি সর্বনাশ করলাম। তাই জীবনে চলার পথে রাগ যেন আমাদের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনতে না পারে তাই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উক্ত শব্দ দ্বারা রাগ নিয়ন্ত্রন করার আদেশ দিয়েছেন।

৪) ‘লা তাসখাত’ পবিত্র কুরআনের এই শব্দ দ্বারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যে কোনো সিদ্ধান্তকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন অনেক ব্যক্তি আছে যাদের সন্তান কোনো এক কারণে মৃত্যুবরণ করলে তারা আর সেই মৃত্যু মেনে নিতে পারে না। মৃত্যুর মাধ্যমে বিচ্ছেদ সবসময়ই কষ্টের। কিন্তু এই কষ্টের জন্য যদি কেউ আল্লাহকে দ্বায়ি করে এবং বলে, আল্লাহ সবসময় আমার সাথেই কেন এমন করেন, তিনি আমার সুখ সহ্য করতে পারেন না- তাহলে জীবনের যাবতীয় অর্জন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেছেন- আমি তোমাদের জানমাল, স্ত্রী সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করব। আর দুনিয়ার জীবনের পরতে পরতে পরীক্ষা। তাই এই পরীক্ষা কেন্দ্রে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যেকোনো সিদ্ধান্ত সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিতে হবে। আর যে ব্যক্তি সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিতে পারবে, সেই তো সফল।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত চারটি শব্দ থেকে প্রকৃত শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন।

পঠিত : ৭৩৬৭ বার

মন্তব্য: ০