Alapon

আত্মতুষ্টিতে ভোগা মুসলিম জাতি এবং কিছু কথা...


বর্তমানে যেকোন সাধারণ মুসলিম (সাধারণ মুসলিম বলতে আমি ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন না এরকম বুঝিয়েছি) এর কাছে গিয়ে যদি আপনি বিশ্বের কিছু একটা নিয়ে জিজ্ঞেস করেন তবে সে সেটাকে ইহুদীদের কাজ হিসেবে অবহিত করবে। আর বিভিন্ন লোকজনকে ইহুদীদের দালাল হিসেবে আখ্যা দেয়াটাতো ট্রেন্ডের বিষয়। এমনকি অনেক আলেম কেউ এসব বলতে শুনা যায়। বিষয়টা কি ভাববার মতো নয়?

এই ধরেন বর্তমানের করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব। আমাদের দেশে আসলে আমাদের দেশে শুধু নয় অনেক মুসলিম প্রধান দেশেই এটাকে ইহুদীদের কাজ বলে অভিহিত করেছে। যাই ঘটছে একটু অস্বাভাবিক সবগুলোই ইহুদীদের ষড়যন্ত্র। আসলেই কি তাই? বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার নাম নিতে গেলে মোসাদের নাম ই আসবে সবার আগে। ওরা মূলত সমালোচিত সিক্রেট কিলিং এর জন্য। বর্তমান বিশ্বের শতকরা নব্বই থেকে পচানব্বইটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে ইহুদীদের নাম আসে। আধুনিক সব জিনিষপত্রের গবেষণাগার হয় ইসরাইলে নয়তো ইহুদী কারো মালিকানাধীন। আপনি আমিতো এগুলো ইহুদীদের ষড়যন্ত্র ইসলাম থেকে আমাদের বের করার জন্য বলেই শেষ। এরো একধাপ উপরে যারা যাবে ওরা খুঁজে পাবে কিছু ষড়যন্ত্র তথ্য। এর বেশী কিছু হয়না। কিন্তু এরকমটা কি হবার কথা ছিলো?

আপনি মুসলিম হলে আপনার জন্য এটি বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক যে আল্লাহ্‌ তা'আলার আদেশ ব্যতীত কোন গাছের পাতাও নড়েনা। সেখানে ইহুদীদের কাজ বলে এড়িয়ে যাবার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা। শয়তান আপনাকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্ররোচিত করবে, আপনার কাজ শয়তানকে কাউন্টারর করা। শয়তানের কাজ বলে বসে থাকা নয়।

কোর'আনে স্বীকৃত ইহুদীরা মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শত্রু। আপনি আমি বা আমরা সবচেয়ে বড় শত্রুর ব্যপারে কি পদক্ষেপ নিয়েছি?! রাসূল সাঃ এর সময় বিশ্বের সুপার পাওয়ার ছিল রোমান এম্পায়ার। তখন রোম সম্রাটের প্রাসাদে পর্যন্ত মুসলিমদের গোয়েন্দা ছিলো। গোয়েন্দাবৃত্তি ইসলামে অবৈধ নয়। শূণ্য থেকে উঠে এসে মাত্র একাত্তর বছরে যদি মোসাদ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থায় পরীণত হতে পারে তবে মুসলিম কোন গোয়েন্দা সংস্থা কেন সেই জায়গায় নেই?

আধুনিক যেসব যন্ত্রপাতি তার সিংহভাগ ই ইহুদীদের অবদান। কিন্তু তাদের যে আবিষ্কার এর মূল খুঁজে দেখুন কোন না কোন মুসলিম বিজ্ঞানীর তথ্যসুত্র পাবেন। অপেক্ষা করুন, সেটি নিয়ে গর্বিত হবার কিছু নেই। অতীত থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। গর্ব করতে হয় বর্তমান নিয়ে। ভবিষ্যৎ থাকে গর্ব ধরে রাখার জন্য। কিন্তু আমরা এক সহশ্রাব্দ পিছিয়ে গিয়েছি। মুসলিম বিজ্ঞানীদের স্বর্ণযুগ কেন শেষ হয়ে এলো?

আমরা এরকম একটি প্রজাতীতে পরিণত হয়েছি যারা শুধু অতীত নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগে। যার ফলাফল আজকে আমাদের সামনে। কখনো চেষ্টা করেছেন ইহুদীদের এই আবিষ্কারকে আমরা ওভারলেপ করবো? করেননি। এই আপনার মন মগজে ঢুকে রয়েছে "ইহুদীদের কাজ" সেখান থেকে যতদিন না বের হতে পারবেন ততদিন এ জাতীর কিছু হবেনা। আত্মতুষ্টি বাদ দিতে হবে।

কখনো শুনেছেন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি ইহুদী বলে ইহুদীরা আত্মতুষ্টীতে ভেসে যাচ্ছে? কিন্তু আমরা আছি ডোনাল্ড ট্রাম্প কে মুসলিম বানাতে, নীল আর্মস্ট্রং মুসলিম কিনা সে নিয়ে তর্ক করি আমরা। কেন ভাই? এতে করে এক পয়সার কোন লাভ হবে? ইহুদীদের প্রতি দায় চাপিয়ে চুপচাপ বসে না থেকে ইহুদীদের কার্যপদ্ধতি দেখুন, শিখুন এবং ইসলামের আলোকে এপ্লাই করুন। স্বর্ণযুগ আবার ফিরে আসবে। আসুন আমরা নিজের জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্বটুক ঠিকটাক পালন করি।

পঠিত : ৬৫১ বার

মন্তব্য: ০