Alapon

আফাগানে রাজনৈতিক সমঝোতা চূড়ান্ত



আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও তার প্রতিদ্বন্দ্বি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ক্ষমতা ভাগাভাগির লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। রবিবার এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যদিয়ে দীর্ঘ কয়েক মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে।


এমন সময় এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অগ্রগতি হলো যখন বিরোধী নেতা আব্দুল্লাহ তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলেন এবং পুরো দেশ করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে ও গত সপ্তাহে একটি নৃশংস হামলায় অনেকেই নিহত হয়েছেন।

আফগান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, আব্দুল্লাহ ও ঘানি পাশাপাশি বসে আছেন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে। এসময় আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ঘানি দিনটিকে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং কোনও আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততা ছাড়াই এই সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব ভাগ করে নেব এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তা কমে আসবে। আগামী দিনে আমরা ঐক্য ও সহযোগিতার প্রত্যাশা করি। অস্ত্রবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য পটভূমি তৈরি করতে হবে।

আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, এই চুক্তি আরও বেশি অংশগ্রহণ ও জবাবদিহীতামূলক ও কর্মদক্ষ প্রশাসগ গড়ে উঠবে। এতে শান্তির পথ, সুশাসনের উন্নতি, অধিকার রক্ষা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা বাড়বে।

আব্দুল্লাহ’র মুখপাত্র ফ্রাইদুন খাওজুন জানিয়েছেন, এই চুক্তির ফলে মন্ত্রিসভা ও প্রাদেশিক গভর্নরের পদে তারা ৫০ শতাংশ লোক দিতে পারবে।

এর আগের একটি চুক্তির বলে আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুল্লাহ। কিন্তু গত নির্বাচনে ঘানির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পরাজিত হলে ওই পদ হারান তিনি। তবে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন এবং ৯ মার্চ শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন। একই দিন ঘানি নিজেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনেও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। পরে উভয়েই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে ফেব্রুয়ারিতে একই দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ৫ বছর আগের নির্বাচনের পরও সমঝোতা হয়েছিলো এবং তার জের ধরে আবদুল্লাহকে আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী করা হয়েছিলো।

রোববার (১৭মে) ঘানি বলেন, আজ আফগানিস্তানের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। কোনো আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততাকারী ছাড়াই চুক্তি হয়েছে। উল্লেখ্য ২০১৪ সালে সমঝোতা হয়েছিলো মার্কিন মধ্যস্ততায়।

আবদুল্লাহ বলেন, চুক্তিতে আরো অন্তর্ভুক্তমূলক, জবাবদিহিতামূলক ও যোগ্য প্রশাসন গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে।

এইচসিএনআরের প্রধান হিসেবে আবদুল্লাহর সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে সহিংসতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট আশরাফ তালেবান ও অন্যান্য সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের কথা ঘোষণা করেছেন। আন্তঃআফগান শান্তি আলোচনায় তালেবানের সাথে মুখোমুখি হওয়ার সময় কাবুলে সমঝোতা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন আফগান সাংবাদিক সামি ইউসুফজাই।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, তালেবান এখনো সরকারি বাহিনী ও বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

আবদুল্লাহর দল মনে করছেন, ক্ষমতার ভাগাভাগির ফলে শান্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তারা এখন আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে পারবেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, আবদুল্লাহর জন্য কাজটি সহজ হবে না। কারণ তাকে আফগানিস্তানের বিভক্ত রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তালেবানের সাথে মিলিত হওয়ার আগে নিজেদের মধ্যেই আগে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে আরেকটি সমস্যা হলো বন্দী বিনিময়। তালেবান চায়, আন্তঃআফগান আলোচনা শুরুর আগেই তাদের ৫,০০০ বন্দীর মুক্তি। ঘানি সরকার তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত আফগান সরকার ১,৫০০ তালেবান যোদ্ধাকে মুক্তি দিয়েছে, আর তালেবান ১০০ সরকারি বন্দীকে ছেড়েছে।

পঠিত : ৫৪৮ বার

মন্তব্য: ০