Alapon

হস্থ মৈথুন: মিথ ও বাস্তবতা...


শৈশব থেকেই কাজিনদের সাথে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, ওদের সাথে খেলাধুলা, গল্প, আড্ডা, মজামাস্তি সব বিষয়ে শেয়ার করতাম, ওদের থেকেই প্রথম মাস্টারবেশন সম্পর্কে শুনি, শুনে আমার খুব কৌতূহল হয়, আমি আমার রুমে এসে কৌতূহলবসত মাস্টারবেশন করার চেষ্টা করি, এবং আমার মাঝে তীব্র উত্তেজনার সাথে এক অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা অনুভব করলাম, তারপর থেকে প্রায় সময় আমি নিজেকে একান্ত গোপনে উত্তেজিত করে এক অদ্ভুত সুখানুভূতি পেতাম, যা পেতে আমার কোন প্রকার টাকা পয়সা, বা কারো হেল্পের প্রয়োজন হয় না।

কিন্তু এর কিছুদিন পরে আমার মাঝে মাস্টারবেশনের পরে অদ্ভুত রকমের অপরাধবোধ, লজ্জাবোধ কাজ করতে শুরু করে, আমার মনে হতে শুরু করে আমি যা করছি, তা ঠিক না, ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠা সামাজিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ আমাকে বাধা দিচ্ছে মাস্টারবেশন করতে, অপর দিকে আমি এটি করে নিজের মাঝে সুখ অনুভব করছি কিছু সময়ের জন্য , আমার মাঝে কনফ্লিক্ট শুরু হয়ে গেলো, কিন্তু আমি কোনভাবেই মাস্টারবেশন বন্ধ করতে পারছি না, তা নিয়ে আমার মাঝে একধরনের মানসিক অস্থিরতা কাজ করছে।****( ২২ বছর বয়সের একজন ছেলের গল্প)***

হিউম্যান সেক্স নিয়ে আমাদের সবার কম বেশি আগ্রহ আছে, থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ সেক্স আমাদের বায়োসাইকোলজিক্যাল নিড, এবং এই আগ্রহের কারনেই পৃথিবী আমাদের কাছে এতো সুন্দরভাবে ধরা দিয়েছে, মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড তো সেক্সুয়াল প্লেজারের উপর ভিত্তি করে হিউম্যান পারসোনালিটি ডেভেলপমেন্টকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, এর থেকে বুঝা যায় সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার আমাদের ব্যক্তিত্বে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই সামাজিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধের দোহাই দিয়ে বিষয়টিকে অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, উপর দিয়ে???????? কিন্তু ভেতরে ভেতরে যতটা পায়, পুরো বিষয়টার ষোলোআনাই উপভোগ করার চেষ্টা করে।

আমার সেক্সুয়াল বিষয়ে জানার আগ্রহ আছে এজ হিউম্যান বিং, এবং অনেক সময় ক্লায়েন্ট অনেক ধরনের সেক্সুয়াল ইসুজ শেয়ার করে, বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ও বেশ কিছু গবেষণা পেপার দেখেছি হিউম্যান সেক্সুয়াল বিহেভিয়ারের উপরে।

মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুন শব্দগুলোর সাথে প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় অধিকাংশ মানুষ পরিচিত, আমেরিকাতে একটি গবেষণায় দেখা গেছে কলেজ ছাত্রদের মাঝে প্রায় ৭৮ % এবং ছাত্রীদের মাঝে প্রায় ৩৮% মাস্টারবেশন করে, আমাদের দেশেও গতবছর সম্ভবত প্রথম আলোর একটি জরিপে দেখা গেছে স্কুলগামী প্রায় ৭৮% ছাত্রছাত্রী পর্নোগ্রাফি ভিডিও দেখে। পরিসংখ্যান দেখে অনুমান করা যাচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে আমরা প্রায় অধিকাংশ মানুষই সেক্সুয়াল বিষয় সম্পর্কে খোজখবর রাখি।

তবে আমাদের অধিকাংশ সেক্সুয়াল ইনফরমেশন আসার পদ্ধতি নানান রকম মিথ বা সেকেলে ট্যাবুতে সীমাবদ্ধ, যেমন, পর্নোগ্রাফি, চটি বই, পাড়ার দাদা, আর রসালো ভাবি, যেহেতু আমাদের কোন সঠিক সেক্সুয়াল শিক্ষা নাই, তাই গুজব টাইপের তথ্য দিয়ে আমাদের চলতে হয়, এতে তীব্র মানসিক কনফ্লিক্টে পড়তে হয় অনেক সময়।

মাস্টারবেশন খুব স্বাভাবিক সেক্সুয়াল আনন্দদায়ক একটি একটিভিটি, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় অধিকাংশ মানুষই কম বেশি জীবনে হয়তোবা মাস্টারবেশন করে থাকে, কিন্তু সমাজে এই
মাস্টারবেশন নিয়ে অনেক ধরনের মিথ, বা ভ্রান্ত ধারণা আছে, যার ফলে অনেক সময় ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা সাফার করতে হয়।

আমি প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষণা দেখেছি মাস্টারবেশন নিয়ে, প্রায় সব গবেষণাতে দেখা গেছে স্বাভাবিক মাত্রার মাস্টারবেশন শারিরীক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো, বলা হয়েছে মাস্টারবেশন মানসিক ভাবে রিলাক্স থাকতে হেল্প করে, সেক্সুয়াল চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়, মন সতেজ রাখে, ঘুম ভালো হয়, মন ফুরফুরে রাখতে হেল্প করে, সেল্ফ ইস্টিম বৃদ্ধি করে, পোসটেট ক্যন্সারের মতো রোগের ঝুকি কমায়। এমনকি কোন গবেষণাই সাপোর্ট করেনি যে স্বাভাবিক মাত্রার মাস্টারবেশনের কারণে আমাদের শারিরীক বা মানসিক কোন ক্ষতি হয়, বরং আমাদের শারিরীক ও মানসিক ওয়েলবিনং এর জন্য ভালো।

অনেকে মনে করে মাস্টারবেশনের ফলে বিষন্নতা বা হতাশা, দুঃচিন্তা আসে, কিন্তু গবেষণায় দেখা যায় মাস্টারবেশনের কারণে বিষন্নতা আসে না, কিন্তু বিষন্নতার সময় ব্যক্তির অনেক সময় সেক্সুয়াল আগ্রহ কমে যেতে বা বেড়ে যেতে পারে।

মাস্টারবেশন নিয়ে যদি ব্যক্তির মাঝে অপরাধবোধ বা লজ্জাবোধ কাজ করে, এর ফলে ব্যক্তির মাঝে বিষন্নতা, দুঃচিন্তা, বিভিন্ন ধরনের মানসিক ইস্যু, সেক্সুয়াল সমস্যা, রিলেশনশিপ কনফ্লিক্ট, এবং নেশাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি হতে পারে।
টক লেবুও অধিক চাপলে তিতা হয়ে যায়, সেইরকম অধিক মাস্টারবেশনও মানসিক এবং শারিরীক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যখন আপনি অতিমাত্রায় মাস্টারবেশনের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন, যেমন, সেক্স পার্টনার থাকা সত্ত্বেও আপনি মাস্টারবেশন করবেন, আপনি অনেক চেষ্টা করেও মাস্টারবেশন থেকে ফিরে আসতে ব্যর্থ হবেন, যখন আপনার কাজ, অফিস, বন্ধুদের সাথে মিশতে ভালো লাগবে না মাস্টারবেশনের জন্য, আপনার দৈনন্দিন জীবনকে হেম্পার করবে, যখন মাস্টারবেশনকে সেল্ফহার্ম হিসেবে ইউজ করবেন, এবং এর ফলে যদি আপনার মাঝে অপরাধবোধ বা লজ্জাবোধ কাজ করে। তাহলে বুঝতে হবে বিষয়টি আপনার জন্য ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসছে।

অনেকে বলেন, মাস্টারবেশন আমার কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে, না করে থাকতে পারি না, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, সাইকোলজিতে অনিয়ন্ত্রিত মাস্টারবেশনকে কম্পালসিভ মাস্টারবেশন বলা হয়েছে,যখন আপনি নিজে নিজে অনেক চেষ্টা করেও এমন কম্পালসিভ মাস্টারবেশন থেকে বের হতে পারবেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে শারিরীক, মানসিক, স্প্রিচুয়াল এবং সামাজিক বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রোপার সেক্সুয়াল এডুকেশন কম্পালসিভ মাস্টারবেশন কমাতে হেল্প করতে পারে, টাইমআউট, ডিসটারসশন টেকনিক, সাপোর্ট সিস্টেম (Google করতে পারেন ) হেল্প করতে পারে। এবং আপনি একজন প্রফেশনাল সাইকোলজিস্টের হেল্প নিতে পারেন।

পঠিত : ৭১৬ বার

মন্তব্য: ০