Alapon

ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্য ইহুদি-নাসারার দরকার নেই, কতক আলেমই যথেষ্ঠ...


ফেসবুকে স্ক্রল করছিলাম, হঠাৎ একটি ভিডিওতে চোখ আটকে গেল। ভিডিওটি ছিল একজন কওমী আলেমের। আমি তার নাম ঠিক জানি না, তবে এতোটুকু জানি হেফাজতের আন্দোলনের সময় তিনি বেশ গরম গরম বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং পরবর্তিতেও তার গরব বক্তব্যের জোয়ার অব্যাহত আছে।

গরম বক্তব্যের জোরেই সেই কওমী আলেম বললেন, ‘আজ আপনাদের বলে যাচ্ছি, ৩ চাকা ওয়ালা সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ দিয়ে হেটে জান্নাতে যাবে। ৩ চাকার মধ্যে একটি হল কওমী দেওবন্দি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ৩ চাকার আর একটি চাকা হল বিদআত শূণ্য খানকাগুলো। আর সর্বশেষ চাকাটি হল গাট্টিওয়ালারা। অর্থাৎ তাবলীগ ওয়ালারা। তাবলীগ জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত সকলেই জান্নাতে যাবে। কওমী দেওবন্দ, বিদআত শূণ্য খানকা এবং গাট্টিওয়ালা তাবলীগ এই তিন চাকার গাড়ি সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ছাড়া আর কেউই জান্নাতে যেতে পারবে না!’

হুজুরের বক্তব্য শুনে বিরাট ভাবনায় পড়ে গেলাম! কারণ, হুজুরের উল্লেখিত তিনটি চাকার একটার সাথেও আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার মানে তিন চাকার এই গাড়ির যাত্রী হওয়ার সুযোগ মিস করলাম।

এরপর মনে কৌতূহল জাগল, পৃথিবীর মোট মুসলিমদের মধ্যে কত শতাংশ এই তিন চাকার গাড়ির যাত্রী হতে পারবে?

প্রথমেই ভাবলাম, কওমী দেওবন্দি মাদ্রাসার কথা। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, দেওবন্দি ধারার মাদ্রাসা পৃথিবীতে কেবল ভারত, পাকিন্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও নেই। আর এই তিন দেশের মোট মুসলিমদের মধ্যে অধিকাংশরাই এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেনি বা করে না। উপমহাদেশের মোট মুসলিম জনসংখ্যার সাথে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাথী ও শিক্ষকদের অনুপাত করলে সেটা মাত্র কয়েক শতাংশ হবে। তার মানে অধিকাংশরাই কওমি দেওবন্দির অংশ নয়।

তারপর ভাবলাম, খানকা ওয়ালাদের কথা। বিদআত পন্থি খানকাওয়ালারা হল সিরাতুল মুস্তাকিম পথের ৩ চাকার গাড়ির ২য় চাকা। উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে খানকাওয়ালাদের অবদানের কথা মুসলিমরা এখনও যথাযথ ভাব-গাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে স্মরণ করে। কিন্তু সেই খানকাওয়ালাদের অস্তিত্ব এখন বিলিনের পথে। তারপরও যেগুলো এখনও আছে সেগুলো বিদআতের আখড়া। কোনোটা শিরকের আখড়া। হুজুর বলেছেন, বিদআত শূণ্য খানকা গুলোই দ্বিতীয় চাকা।

তথ্য প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সহজলভ্যতার সাথে সাথে খানকা গুলোর আবেদন এখন নেই বললেই চলে। আগে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের জন্য খানকা গুলো ছিল প্রসিদ্ধ। কিন্তু এখন আর খানকাগুলো সেই পুরনো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। আর যেগুলো পারছে সেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তাই এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলে দেওয়া যায়, খানকার সাথে মোট মুসলিম জনগোষ্ঠির ১ শতাংশ মানুষও সম্পৃক্ত নয়। ফলে এই চাকার গাড়ির যাত্রী হবার সৌভাগ্য অধিকাংশ মুসলিমদেরই হবে না।

তৃতীয় চাকা হল গাট্টিওয়ালা তাবলীগ। তাবলীগের জন্ম ভারতে হলেও এর ব্যাপ্তি পৃথিবীর বহু দেশে রয়েছে। অর্থাৎ প্রথম ২ চাকার চেয়ে এই চাকার ব্যাপ্তি কিছুটা বিস্তৃত। বিস্তৃত হলেও তাবলীগ জামায়াত কী পৃথিবীর মুসলিমদের কাছে মূল ধারা হিসেবে মূল্যায়ন পায়?
না! তাবলীগ কখনোই পৃথিবীর মুসলমানের কাছে মূল ধারা হিসেবে মূল্যায়ন পায়নি; সম্ভবত তাবলীগ জামায়াত নিজেও কখনো মূল ধারার ইসলামি সংগঠন বলে দাবি করেনি। তাই নামাজ, ইহকাম, কুরআন শেখার জন্য উপমহাদেশের স্বল্প শিক্ষিত মানুষরা তাবলীগে আকৃষ্ট হয়। তাবলীগের জন্ম উপমহাদেশে হলেও উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলিমরািই তাবলীগ জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আর পৃথিবীর মোট মুসলিম জনগোষ্ঠির কথা তো বাদই দিলাম!

আবার তাবলীগ জামায়াতের দুটি ভাগ। একটি ভাগ সাদ পন্থি আর এক ভাগ সাদ বিরোধী। এখন ৩ নাম্বার চাকা কি সাদ পন্থি তাবলীগ জামায়াত নাকি সাদ বিরোধী তাবলীগ জামায়াত তা কিন্তু হুজুর ক্লিয়ার করেননি। ঠিক আছে আমরা ধরে নিলাম, গত বছর টঙ্গি ইজতেমা ময়দানে যেমন তাবলীগ জামায়াতের দু গ্রুপের মারামারি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম, আবারও সেরকম মারামারির আয়োজন করা হোক। সেই মারামারিতে যে দল জিতবে তারাই হবে ৩ নাম্বার চাকা মিটে গেল!

মোরাল অব দ্য স্টোরি: যে কওমি আলেমের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এতো প্যাচাল পাড়লাম, সেই বক্তব্যের কোনো শরীয়াহ ভিত্তি নেই। কারণ, আল্লাহর রাসূল সা. এমন কথা কখনোই বলেননি যে, মাত্র ৩ টি চাকার গাড়ি সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ ধরে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর রাসূল বলেছেন, যারা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে তারাই হবে জান্নাতি। এ কথার ব্যাখ্যা ব্যাপক। এতো বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে শুধু বলছি, ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য বা বিতর্কিত করার জন্য ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্র করার কোনো প্রয়োজন নেই। এ রকম মাঠ গরম করা দু-চারজন বক্তাই যথেষ্ঠ ইসলামকে পৃথিবীবাসীর কাছে হাস্যকর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য!

পঠিত : ৩৮২ বার

মন্তব্য: ০