Alapon

লক ডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসংগত...


লক ডাউনের সময়সীমা আর বৃদ্ধি করা হচ্ছে না, এ কথা পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম। অবশ্য আমি ব্যক্তিগতভাবে আগেই ধারণা করেছিলাম, ঈদের পর আর লক ডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করবে না। কারণ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দির্ঘ সময় ধরে লক ডাউন মেনে চলা সম্ভব নয়।

লক ডাউন শিথিল করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬ টি শর্ত পালন করার সম্ভব হলেই লক ডাউন শিথিল করা যাবে। শর্তগুলো হল:

১/ রোগ সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা। কোভিড ১৯ অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসলেই লক ডাউন শিথিল করা যাবে।

২/ দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিটা রোগীকে শনাক্ত, পরীক্ষা, আইসোলেশন আর চিকিৎসায় এবং সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে শনাক্ত করতে সক্ষম। অর্থাৎ প্রত্যেক নাগরিককে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত সামর্থ থাকলেই লক ডাউন শিথিল করা যাবে।

৩/ নার্সিংহোমের মতো সেবা কেন্দ্রগুলোর মতো নাজুক স্থানগুলোয় ঝুঁকি নিম্নতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা।

৪/ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত ও অন্যান্য দরকারি স্থানে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। উক্ত স্থানগুলোতে মানুষের অবাধ যাতায়াত হওয়ার কারণে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা না থাকলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভব রয়েছে। তাই উক্ত স্থানগুলোতে সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলেই কেবল লক ডাউন শিথিল করা যাবে।

৫/ বাইরে থেকে আসা নতুন রোগীদের সামলানো। চীনে দেখা গেছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিদেশ ফেরতদের দ্বারা পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। তাই বাইর থেকে আগত রোগীদের আইসোলেশন ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে লক ডাউন শিথিল করা যাবে।

৬/ সমাজের বাসিন্দারা পুরোপুরি সচেতন, সতর্ক ও নতুন জীবনযাপনের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হলে তবেই লক ডাউন শিথিল করা যাবে।

উপরের শর্তগুলো নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল এগুলো ১০০% পালন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, বাংলাদেশের আর্তসামাজিক অবস্থা ততটা শক্তিশালী না হওয়ায় এই শর্তগুলো পুরোপুরি পালন করা সম্ভব হবে না। কিন্তু তারপরও আমি লক ডাউন শিথিল করার পক্ষে।

কারণ, লক ডাউন শিথিল না করলে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে যাবে। তখন মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ না করলেও খাবারের অভাবে মারা যাবে- এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই বাংলাদেশের মত একটি স্বল্প আয়ের দেশে যে দুই মাসের বেশি সময় ধরে লক ডাউন পালন করা হয়েছে- এটাই আর্শ্চর্যের। এর বেশি লক ডাউন পালন করলে দূর্ভিক্ষ নেমে আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

তাহলে কি বাংলার মানুষ মৃত্যুর মুখে ঝাপ দিতে যাচ্ছে?

এই প্রশ্নের জবাবে বলব, বাংলার মানুষ জন্মের পর থেকেই মৃত্যুর মুখে পা দিয়ে রাখে। বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক ও সামাজি অবস্থা, এবং ঢাকা শহরের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা পর্যালোচনা করলে- এ দেশের মানুষের বেঁচে থাকাটাই একটা মিরাকল!

আর ট্রাফিকজ্যামের কথা তো ভূবনখ্যাত। ট্রাফিকজ্যাম নিয়ে একটা মজার ঘটনা বাংলাদেশের মধ্যে চাউর রয়েছে।

ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একবার বিদেশ থেকে একজন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আসা হল। তিনি আবার ছিলেন নাস্তিক। তিনি ৬ মাস ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা, নীরিক্ষা ও পর্যবেক্ষণ চালানোর পর বললেন- আমি আজ থেকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি! কারণ, ঢাকা শহরের যে ট্রাফিক সিস্টেম তাতে এই শহর টিকে থাকার কথা নয়। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির বলে এই শহর এখনো টিকে আছে এবং ট্রাফিক সিস্টেম এখনো রান করছে। আর এটা একমাত্র ঈশ্বরের দ্বারাই সম্ভব; মানুষের দ্বারা সম্ভব হবে না।

তার মানে বুঝতে পারছেন, ঢাকা শহরে বসবাসকারী ৫ কোটি মানুষ কীভাবে জীবন-যাপন করে!

মূলকথা হল, আমাদের করোনা ভাইরাসকে সাথে নিয়েই বসবাস করতে হবে। এভাবেই স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে হবে। সেইসাথে সচেতন থাকতে হবে। যারা নিজেকে নিরাপদ রেখে কাজ করতে পারবে, তারা বেঁচে যাবে। আর যারা সচেতন থাকতে পারবে না, তারা করোনা ভাইরাসের কাছে পরাজিত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে! এটাই এখন বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতা মেনে না নেওয়া ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের সামনে বিকল্প কোনো পথ আছে বলে আমার মনে হয় না।

পঠিত : ৪২৮ বার

মন্তব্য: ০