Alapon

ভুলভাবে মোটিভেটেড হচ্ছি না তো...?


এই যে আমরা বঙ্গদেশে বসে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডে মোটিভেট করার মিথ্যা চেষ্টা করি তাতে কার লাভ হয়?

আমরা ইনিয়েবিনিয়ে বলার চেষ্টা করি.. "একাডেমিক রেজাল্ট কিছুই না".... অথচ ছেলে-মেয়েগুলা মাত্র ১ মাস পরেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়.... ভাল জিপিএ না থাকলে সে ভাল কলেজে এডমিশন নিতে পারে না ???? সমাজের তাচ্ছিল্য আচরণের কথা বাদই দিলাম!

তার কিছুদিন পরে আসে স্বপ্নের ভার্সিটিতে ভর্তি যুদ্ধ। প্রায় প্রত্যেকটি ভার্সিটি ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে নূন্যতম জিপিএ ফিক্সড করে দেয়। তারমানে আপনি নূন্যতম জিপিএ না পেলে ভর্তির আবেদনই করতে পারবেন না। উপরন্তু বেশি জিপিএ থাকলে ভর্তিযুদ্ধের পরীক্ষাতে পয়েন্টিং সিস্টেমে এগিয়ে থাকা যায়।

আর এক্ষেত্রে বড় আইরনি হলো 'পরীক্ষার রেজাল্ট কোন কাজে আসে না' বলে স্ট্যাটাস দেনেওয়ালাদের ৯০%ই বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল জিপিএ-ধারী ছাত্রছাত্রী। তারমানে “টাকা পয়সা কিছু না” এই স্ট্যাটাস দেনেওয়ালারা বিল গেটস কিংবা ওয়ারেন বাফেট :v

আমাদের মোটিভেশনাল স্পিকাররা একটা কথা প্রায়ই বলে,
স্টিভ জবস, বিল গেটস’রা ড্রপআউট। কিন্তু তারা যে হার্ভার্ড ড্রপআউট, সেটা থেকে যায় অনুক্ত। হার্ভার্ড পর্যন্ত যে যেতে পেরেছে সে যে খারাপ ছাত্র ছিল না... সেটা বুঝতে খুব জ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই।

যাহোক, এরপর আসে জীবনের সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা। জীবনে কিছু একটা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। সেই জন্য নামতে হয় চাকরি পাবার প্রতিযোগিতায়। সরকারির চাকরিতে কিছুটা সাম্যের নীতি থাকলেও মূল বৈষম্য থাকে বেসরকারি চাকরিতে। ভাল জিপিএ/সিজিপিএ না থাকলে আপনি চাকরির পাওয়া দূরে থাক ভাইবা-তেও কল পাবেন না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দিনশেষে ভাল জিপিএ/সিজিপিএ ছাড়া আপনি ভাল ছাত্র না, ভাল শিক্ষক না, ভাল ডাক্তার না, ভাল প্রকৌশলী না। সমাজ আপনাকে ভালভাবে নিবে না। আর ভাল ছাত্র হওয়া দোষের কিছুও না। যারা খারাপ ছাত্র তাদের দু’একজন জীবনে ভাল কিছু করলে সেটা দৃষ্টান্ত হয় ঠিক আছে.. কিন্তু হাজারটা খারাপ ছাত্র যে জীবন দৌঁড়ের ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়েছে সেটা কেউ বলে না।

আমাদের দেশের প্রতিটা সেক্টরে সমস্যাযুক্ত কেন জানেন? আমরা সমস্যার মূলে হাত দিই না, সেই জন্য সমস্যাও সমাধান হয় না। রহিমের দোষ থাকলে করিমকে সংশোধন হতে বলি, ফলশ্রুতিতে সমস্যার সমাধান হয় না।

আমাদের মোটিভেশনাল স্পিকাররা কেন শুধু শিক্ষার্থীদের মোটিভেট করতে চায়? তারা কেন শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আঙ্গুল তুলে না? কারণ শিক্ষার্থীদের মোটিভেশান দেয়া তুলনামূলক সহজ! কোন ধরণের ঝামেলা পোহাতে হবে না, জনপ্রিয়তাও পাওয়া যায় সহজে। শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বললে নিজের আহারে আঘাত আসতে পারে।

দিনশেষে নিজের জীবন নিজে গড়তে হবে। আমাদের মোটিভেশনাল স্পিকারদের দ্বারা ভূলভাবে মোটিভেটেড হয়ে
অনেকে পড়াশুনা ছেড়ে খারাপ রেজাল্ট করে। খারাপ রেজাল্ট করলেই যে জীবনে কিছু করতে পারবেন না, এটা যেমন পুরোপুরি সত্য না, তেমনি ড্রপআউট হয়ে বিল গেটস হবার স্বপ্নে বিভোর থাকাও সমীচীন নয়।

জীবনের বাস্তবতা অনেক কঠিন। বাংলাদেশে বাঁচতে হলে বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ডেই বাঁচতে হবে। বঙ্গদেশে বসবাস করে ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডে মোটিভেটেড হয়ে আমাদের কতটুকু লাভ হবে তা সেটা আমার বোধগম্যতার বাইরে।

@Ashraful

পঠিত : ৪৫৯ বার

মন্তব্য: ০