Alapon

মাযহাব কী এবং মাযহাব কেন দরকার...?


মাযহাব বিষয়ে আমাদের মধ্যে একেবারেই সঠিক ধারণা নাই। যারা মাযহাবের অনুসারী তারাও বোঝে না মাযহাব আসলে কেন দরকার? মাযহাব জিনিসটা আসলে কি? আবার যারা মাযহাব এর বিরোধিতা করে অর্থাৎ যারা আহলে হাদিস তারাও বোঝে না মাযহাব আসলে কি এবং মাযহাব কেন দরকার?

যারা বলে মাজহাব এর কোন দরকার নাই তারাও একেবারে ভুল কথা বলে। আবার যারা বলে মাজহাব অন্ধভাবে অনুসরণ করতে হবে তারাও পুরোপুরি ভুল। আসলে মাযহাব কে মাযহাবের মত করে ব্যবহার করতে হবে। একটা যন্ত্র ভুল জায়গায় ব্যবহার করার কারণে আপনার কাজ উল্টাপাল্টা হয়ে যাওয়ার পর যদি আপনি বলেন যন্ত্রের দোষ তাহলে মানুষ আপনাকে পাগল ছাড়া কিছুই বলবে না।

আমি একটু উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে দিচ্ছি। আপনি মাংস কাটতে চাইলে আপনাকে ছুরি ব্যবহার করতে হবে। আবার আপনি কাপড় কাটতে চাইলে আপনাকে কেচি ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন কাজে ছুরি যেমন দরকার ঠিক তেমনি কেচিও দরকার। আপনি যদি কেচি দিয়ে ছুরির কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার কাজটা উল্টাপাল্টা হয়ে যাবে। এরপর আপনি যদি বলেন কেচি একটা ফালতু যন্ত্র, কেচির কোন দরকার নাই তাহলে অবশ্যই আপনি একটা বোকা মানুষ।

ঠিক একইভাবে আপনি যদি মাযহাব কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে বা মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা আসলে কি সেটা না জানেন তাহলে হয় আপনি মাযহাবকে ভুল জায়গায় ব্যবহার করবেন অথবা আপনি মাযহাবের বিরোধিতা করবেন এবং আপনি মনে করবেন মাযহাব আসলে দরকার নাই। এজন্য আমাদের মাযহাব সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করা উচিত। শুধুমাত্র ইউটিউবে হুজুরদের লেকচার শুনে সব বিষয় শেখা যায় না। নিজে নিজে আলেমদের বই পড়তে হয়। কারন এক‌ই আলেম বইতে যেভাবে সুন্দর করে বুঝিয়ে ব্যাখ্যা করেন লেকচারের মধ্যে ঠিক সেভাবে বুঝিয়ে বলা সম্ভব হয় না। আপনি বই পড়লেই বুঝতে পারবেন পার্থক্যটা।

এখন আমি বলতে চাই মাযহাব আসলে কি? মাযহাব অর্থ হলো আলেমদের মতামত। আলেমদের মতামত গুলো আমাদের ইসলামের একটা বড় সম্পদ। মাযহাব স্টাডি করার মাধ্যমে আমরা শিখব কিভাবে কোরআন হাদিস নিয়ে গবেষণা করতে হয়। কিভাবে কোর‌আন হাদিস থেকে মাসলা-মাসায়েল বের করতে হয় সেটা শেখার জন্য আমাদেরকে মাযহাব গুলো স্টাডি করতে হবে। আসলে মাযহাব স্টাডি করার জিনিস। মাযহাব অন্ধভাবে অনুসরণ করার জিনিস না। তাই যারা মাযহাব অন্ধভাবে অনুসরণ করছে তারা ভুল করছে। আবার যারা মাযহাব এর বিরোধিতা করছে তারাও ভুল করছে। কারণ মাযহাব গুলো স্টাডি না করলে কোরআন হাদিস থেকে কিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় সেটা আমরা জানতে পারব না। আমাদেরকে বুঝতে হবে মাযহাব যেহেতু আলেমদের গবেষণালব্ধ মতামত তাই এতে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকাটাই স্বাভাবিক। একই বিষয় নিয়ে গবেষণা করে দুইজন ব্যক্তি দুই রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। আর এটার অনুমতি ইসলামে আছে। শুধু অনুমতি না ইসলামে বরং এটা উৎসাহিত করা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে কেউ যদি কোরআন থেকে বা হাদিস থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গবেষণা করে তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে দুইটা নেকী পাবে আর ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে গবেষণা করার জন্য একটা নেকি পাবে। অর্থাৎ গবেষণাকেও এক ধরনের ইবাদত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামে।

এবার আমি সাধারণ মানুষের জন্য বলতে চাই। সাধারণ মানুষ যখন দেখবে একটা বিষয়ে দুই মাযহাবে দুই রকম সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ দুই জন ইমাম দুই রকম মতামত দিয়েছেন তখন তাদের উচিত যেই মতামত তাদের কাছে বেশি সঠিক মনে হয় সেটা অনুসরণ করা। কেউ যদি নিরপেক্ষ ভাবে সঠিক মতামত গ্রহণের জন্য চেষ্টা করে তাহলে সে যদি ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। যেহেতু সে সঠিক টা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কখনোই একজন ব্যক্তিকে অন্ধ ভাবে অনুসরণ করা যাবে না। একজন ইমামের সকল সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করে তাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করলে সেটা হবে চরম বিভ্রান্তি।

শেষ কথা এতোটুকুই বলতে চাই মাযহাব হল ইসলামের খুব দামী একটা সম্পদ। এই সম্পদের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। এই সম্পদের সঠিক ব্যবহার না জানলে তখন সম্পদটাকে আবর্জনা মনে হবে। ঠিক শুরুতে আমি যেমন কেচি আর ছুরির উদাহরণ দিলাম। আপনি কেচির সঠিক ব্যবহার না জানলে আপনার কাছে কেচি কে একটা অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র মনে হবে।

CLTD

পঠিত : ৫০০ বার

মন্তব্য: ০