Alapon

প্রগতিশীলতার অপর নাম কি ইসলামবিদ্বেষ?



আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীল বন্ধুরা কি পরিমাণ রেসিস্ট, ইসলামোফোব তা আমাদের সকলেরই জানা আছে নিশ্চয়।
তাদের নিয়ন্ত্রিত পেজ-গ্রুপ গুলার সমসাময়িক দুইটি চরম ইসলামবিদ্বেষী 'মিমস' দেখে আরো কিছুটা নিশ্চিত হতে পারেন। যদিও সেই শাহবাগ আন্দোলন থেকেই তাদের কুখ্যাতি সর্বজনবিদিত।



প্রথম ছবিটি গতকাল ঢাবির একটি কথিত বৈপ্লবিক আদর্শের ছাত্রসংগঠনের এক্টিভিস্টদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত 'proud dhabians' oilposting' এই গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছে ঢাবির স্বতন্ত্র জোটের নেত্রী অরণি সেমন্তি খান সোশ্যাল প্লাটফর্মে নিজের মাথা আবৃত করে ও একটি হাদিস পোস্ট করাকে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে উপস্থাপন করতে।
প্রসঙ্গত, যিনি গত ডাকসু নির্বাচনের পূর্বে একটি স্টেজে তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভনের সাথে ছবি তুলতে সাহসিকতার সাথে অস্বীকৃতি জানিয়ে সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছিল।

তাহলে কি এইখানে ইসলামবিদ্বেষের সাথে ওই ঘটনার যোগসূত্রতাও আছে? উড়িয়ে দেওয়া যায়না যেহেতু পোস্টকারীরাই ওই বিষয়টি তুলে এনেছে। আবার এও হতে পারে সহজ সরল ধার্মিক(!) ছাত্রলীগ বন্ধুদের আক্রমণের নিশানা বানানোর জন্য এটা নষ্ট বামদের একপ্রকার কারসাজি।



আর দ্বিতীয় ছবিটি কিছুদিন আগে ঢাবির হার্ডকোর সেক্যুলাঙ্গারদের দ্বারা পরিচালিত 'ডাকসু মিমস' পেইজে পোস্ট করা হয়েছিল যা রাসুল (সা.) এর জীবদ্দশায় সংগঠিত রোমানদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ 'মুতার যুদ্ধ' কে ব্যঙ্গ করে বানানো মিমস। ঢাবির ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে মেট্রোরেলের টার্মিনাল নির্মাণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে সব ঘরানার ছাত্র-ছাত্রীদের সমর্থন থাকলেও এই স্বতঃস্পূর্ত আন্দোলনের ক্রেডিট বরাবরের মতো নিজেদের রাজনৈতিক ছায়াতলে নেওয়ার জন্যই তারা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই পোস্টারটি পোস্ট করেছিল।

বেশ কিছু বামেরা উদ্দেশ্যমূলক এই পোস্ট গুলোকে বাড়াবাড়ি বললেও বেশিরভাগই প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে গেছে এই ঘৃণামূলক আক্রমণাত্মক পোস্ট গুলোকে। তাদের যুক্তি হলো 'মিমস' তো 'মিমস' ই এইগুলা নিয়ে এত মাতামাতির কি আছে! অথচ তারা ঠিকই জানে বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে 'কার্টূন', 'মিমস' সহ এই সমস্ত বিষয় গুলা কতটা মনস্থাত্বিক প্রভাব রাখতে সক্ষম। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সমান্তরালে এই সোশ্যাল মিডিয়া-ই এখন মানুষের আবেগ-অনুভূতি ব্যক্ত করার প্রধান হাতিয়ার। আরব বসন্তের সূচনায় হয়েছিল এই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে। আর এই 'মিমস' গুলোই এখন সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিবাদের হাতিয়ার রূপে জনপ্রিয় হয়েছে। আমার বিশ্বাস আমাদের এই ইসলামবিদ্বেষী বন্ধুরা এতো ধইঞ্চা না যে এইগুলা জানেনা বা বুঝেনা। তারা সবকিছু বুঝে বা জেনেই ইচ্ছাকৃত ভাবে ধার্মিকদের খুঁচিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পায়। মূলত তারা তাদের আদিপিতা চরম ইসলামবিদ্বেষী হুমায়ুন আজাদের উত্তরসূরি হওয়ার যথার্থতা প্রমাণে এই উদ্দেশ্যমূলক অপকর্ম গুলো করে বেড়ায়। আর এতে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলরা কোন পাল্টা রিয়েক্ট করলে 'মৌলবাদী', 'প্রতিক্রিয়াশীল' বলে গালি দেওয়া হয়।

আবার তারা কিন্তু ঠিকই শামসুর রহমান, হুমায়ুন আজাদ, জাফর ইকবালকে নিয়ে কেউ এমন ট্রল করলে বিভিন্ন ট্যাগ দিতে ভুলেন না। কেন এই দ্বিচারিতা?

তারা 'মতপ্রকাশের স্বাধীনতা', 'মুক্তমনা' এর কথা বলে ভয়ঙ্কর ভাবে ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেই দশকের পর দশক ধরে। আর তাদের আশকারা দিচ্ছে সরকারেরই একটি অংশ। কারণ এরা এই অহেতুক বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে ভোটবিহীন অবৈধ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবাদে ভাটা পড়বে। এই নিকৃষ্ট কীটদের প্রতি আওয়ামীলীগের অসীম ভালবাসা আমরা দেখেছিলাম নিকৃষ্ট ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা মারা যাওয়ার পর তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ কতৃক 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ' বলে ঘোষণা দেওয়াতে।

এই নিকৃষ্ট কীট গুলা কি পরিমাণ নোংরামি ছড়াতো তা আমার দেশ ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ২০১৩ সালে বিভিন্ন ব্লগসাইটের লিখা প্রকাশ্যে আসলে দেশবাসী জানতে পারে। এরা আর কোন ইস্যুতে সোচ্চার না হলেও ইসলামের বিরুদ্ধে যত উপায়ে সম্ভব তত উপায়ে কুৎসা রটাতো। যেন পৃথিবীতে তাদের আগমনই হয়েছে ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করে অনলাইন দূষিত করতে!
যদিওবা শাহবাগ আন্দোলন ও এর পরবর্তী সময় গুলোতে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকা ইসলামপন্থীরা এদের এই কুকীর্তি গুলো জানতে পেরে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে ব্যাপক সোচ্চার হলে এই ঘুটিকয়েক দুর্বৃত্তের দল কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এখন আবারো অনলাইনে ঘৃণার চাষ করা শুরু করেছে এরা।

প্রথম আলোর সাংবাদিক শিমু নাসেরের 'ইয়ার্কি' ছাড়াও বন্ধ হয়ে যাওয়া 'কালা কাউয়া', 'ডাকসু মিমস' 'ইস্টিশন', পেইজ গুলো থেকে সীমিত আকারে সুকৌশলে ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো, ইসলামবিদ্বেষী লেখক-সাহিত্যিকদের প্রমোট করা হলেও এখন আবার 'proud dhabians' oilposting', 'মুরাদ টাকলা meme group' ইত্যাদি ফেইসবুক গ্রুপ গুলা থেকে কোনরূপ রাখঢাক ছাড়ায় নতুন আঙ্গিকে সরাসরি ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো শুরু করে দিয়েছে।

আর আমাদের দেশের তথাকথিত ইসলামিস্টরা যারা নিজেদের স্ব-স্ব গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খায় সারাজীবন এরা ব্যস্ত কারা 'খারেজি', কারা 'তাকফিরি' কারা 'সালাফি', কারা 'আহলে হাদিস', কারা 'ইখওয়ানী', কারা 'মডারেট ইসলামিস্ট', কারা 'গোঁড়া ইসলামিস্ট' এইগুলা নিয়া নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়িতে!
নিজেদের ছাড়া অন্যদের পুরোপুরিভাবে নাকোচ করে দিতে তারা কোনরূপ দ্বিধাবোধ করে না।
সব গোত্রই যেন ইসলামের ডিলারশীপ নিয়ে রেখেছে। মতের সামান্য তারতম্য হলেই যাকে যখন ইচ্ছা 'অমুসলিম', 'কাফের' ঘোষণা দিতেই বেশি ব্যস্ত এরা।

আল্লাহ তাদের পুনরায় হেদায়েত দিক। মূল শত্রু চেনার তাওফিক দিক।

পঠিত : ৯২৭ বার

মন্তব্য: ০