Alapon

সাহেব স্বাস্থ্য মন্ত্রীর বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ এবং কিছু কথা...


এইতো কিছুদিন আগের কথা। সিলেটের মানবিক ডাক্তার মঈন সাহেব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। তবে স্বাভাবিক মৃত্যু নয় কিন্তু! বলতে পারেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার স্বীকার হয়েই ডা. মঈনকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিন্তু সরকারী মহলের খুব একটা টনক নড়েনি। চারদিকে যখন ডা. মঈনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার টালমাটাল অবস্থা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল, তখন একদল অতি সরকারী সমর্থক ডা. মঈনের ছাত্র জীবনের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে টানাটানি শুরু করলেন। ছাত্র জীবনে ডা. মঈন যেহেতু ছাত্র জীবনে ইসলামি ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, অতএব তাঁর মৃত্যুতে সরকারের কিছু যায় আসে না! তাঁর মৃত্যু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশাও প্রমাণ করে না। কারণ, ডা. মঈন শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন!

বাংলাদেশে এই অদ্ভুদ ফিল্টার আবিষ্কার শাহবাগ আন্দোলনের পর থেকে। সেই শাহবাগ আন্দোলনের ফলাফলস্বরূপ আজ সকল সরকারী সমর্থক স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি এবং সমস্ত নাগরিক সুবিধা পাওয়ার দাবিদার। আর যারা সরকারের সমর্থক নয় তারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি এবং তারা নাগরিক সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে না। তারপরও যদি সরকার দয়া করে সুবিধা প্রদান করে তবে তা-ই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এটাই হল শাহবাগ আন্দোলনের ফসল!

সে কথা না হয় আমরা বাদ-ই দিলাম। ডা. মঈনের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করাকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৈন্যদশা হিসেবে নাইবা উপস্থাপন করলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের দুই টার্মে যিনি ফুল ক্যাবিনেট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেই নাসিম সাহেব যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সরকারী কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি না হলে বেসরকারী হাসপাতালের স্মরণাপন্য হয় তখনই প্রমাণিত হয়ে যায়- সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কতটা দৈন্যদশা অবস্থা! নাসিম সাহেব যেহেতু নিজের হাতে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই দশা করেছেন, তখন আর নিজের চিকিৎসার ভার সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারদের হাতে দিতে পারেননি। নিজের জীবন রক্ষার্থে বেসরকারী হাসপাতালেই ভরসা রেখেছেন!

না, ভরসা রাখেননি! ভরসা রাখতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, বিশ্বে কোভিড ১৯ পরিস্থিতি তৈরি না হলে নাসিম সাহেবকে এতোক্ষণে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে দেখা যেত! এ কথা নির্দিধায় বলে দেওয়া যায়।

নাসিম সাহেব সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেন না কেন?

কিছুদিন আগে মাছরাঙা টেলিভিশনের অপরাধ অনুসন্ধানমূলক একটি অনুষ্ঠানে নাসিম সাহেবের মন্ত্রীত্ব থাকাকালীণ অবস্থায় দেশের সব সরকারী হাসপাতাল জুড়ে কী রকম দুর্নীতি হয়েছে, তার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। পূর্ণাঙ্গ বিবরণে না যাই, শুধু এতোটুকু বলি- দেশের একটি সরকারী হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের পর্দা কিনতে যদি ৩৭ লাখ টাকা খরচ হয়, তাহলে এই খাতে কী পরিমাণ হরিলুট হয়েছে এবং হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

নাসিম সাহেবের মন্ত্রীত্ত্ব থাকাকালীণ সময়ে যেসব সরকারী হাসপাতালের পরিচালক এই দুর্নীতিতে সহায়তা করেনি, তাদের ওএসডি পর্যন্ত করতে পিছপা হননি সাহেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী নাসিম সাহেব!

দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার তলা ফুটো করা শুরু যার হাত দিয়ে সেই নাসিম সাহেবই আজ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশার ভুক্তভোগী। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখন ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। তারপর ডাক্তাররা নাকি অস্ত্রোপচার করেছেন। সেই অস্ত্রোপচার আবার নাকি সফলও হয়েছে! এই সফল হওয়ার গল্প নাসিম সাহেবদের শিখিয়ে দেওয়া ফাকা বুলি কিনা তা সময়ই বলে দিবে! আপাতত চলুন অপেক্ষা করি...

পঠিত : ৪৪৭ বার

মন্তব্য: ০