Alapon

করোনা কালে বঙ্গ সন্তানদের হাল-হাকিকত...


গতকাল সন্ধ্যায় বেরিয়েছিলাম।

বেরিয়েই আমি অবাক! বিকেল চারটে বাজলে যে দোকানের ঝাপ বন্ধ করার তোড়জোড় শুরু হয়, সে দোকানই দিব্যি খোলা। অথচ রাত তখন নয়টা।

পরিচিত এক দোকানীর দিকে তাকিয়ে আমি ভ্রু কুচকালাম 'কী ব্যাপার! সান্ধ্য আইন উঠে গেল নাকি? দোকান বন্ধ হল না যে!"

তিনি মুচকি হেসে দু আংগুল নেড়ে ইশারা করলেন। বুঝলাম, যথাযথ কতৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে মানেজড।

রমজানের মধ্যেই উনাদের বিল্ডিংয়ে একজন মারা যান। করোনায়। দুদিন থানার লোকেরা এসে খুব চোটপাট করলেন। বিল্ডিংয়ের গেইটের সামনে একটা চিকন সুতা বেধে লকডাউন ঘোষনা করলেন। কিন্তু বাস্তবে লব ডংকা।
বাড়ির লোকজন দিব্যি ঘরে বাইরে যাওয়া আসা করতেন।

উনাদের গলিও লকডাউন করা হয়। তাতে গাড়ির চলাচল কিছুটা কমলেও মানুষের যাতায়াত এতটুকু কমে নি।

এই হল এদেশের লকডাউন।

আজ শুনলাম, সরকার অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন শুরু করছে। বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো, গ্রিন জোনে ভাগ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী অঞ্চলভেদে আংশিক/পুর্নাংগ লকডাউন করা হবে।

বাইরের খবর জানি না। ঢাকা শহরে এই লকডাউন যে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না, তা হলফ করে বলা যায়।

মনে আছে, যেদিন দেশে করোনায় একজন মানুষের মৃত্যুর খবর এল, সবার মধ্যে সে কি উৎকন্ঠা, আতংক। রাস্তাঘাট ফাকা, সন্ধ্যা নামলেই গলির মুখে শুন্যতা।

আর এখন রোজ ৩০-৪০ জন করে মারা যাচ্ছে, কিন্তু সবাই নির্বিকার। পথে ঘাটে অনেক মানুষ। হাটছে, গল্প করছে। শুরুর দিকে লোকে মাস্ক পরলেও, মৃত্যুহার বাড়ার সাথে সাথে মাস্কের ব্যবহার জ্যামিতিক হারে কমছে।

দুপুরে যোহর নামাজ পড়তে গিয়ে দেখি, শতকরা ৮০ ভাগ লোকের মুখেই মাস্ক নেই। মুসল্লীদের পারস্পরিক দুরত্বও কমে এসেছে। আর দুদিন গেলে হয়তো মাঝে সল্প ফাকটুকুও আর থাকবে না। আবার গায়ে গায়ে মিলেমিশে সবাই দাড়াবে।

নামাজ শেষে দেখলাম, মাসজিদের বারান্দায় আড্ডা জমেছে। কয়েকজন গায়ের সাথে গা, পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দিব্যি গল্প করছে। কিসের মাস্ক, কিসের শারিরীক দুরত্ব…ভালবাসার কাছে করোনা হার মেনেছে।

ইন্দোনেশিয়ার এক মন্ত্রী বলেছিলেন, করোনা হল বঊয়ের মত। বশে আনতে না পারলে, তার সাথে সহাবস্থানের মানসিকতা নিয়েই বাচতে হবে।

বাংলাদেশের জনতা প্রশাসন সবাই হয়তো এই আপ্ত বানী মেনে নিয়েছেন। সবাই ধরেই নিয়েছেন করোনা আছে, থাকবে। কিছু মানুষ আক্রান্ত হবে, কিছু মানুষ মরে যাবে। কেউ চিকিতসা পাবে, কেউ পাবে না। কারও টেস্ট হবে, কারও হবে না।

পরিচিত অনেক মানুষের আক্রান্ত হবার খবর পাচ্ছি। কারও লক্ষন মৃদু, কারও তীব্র। কেউ নাকে গন্ধ হারিয়ে ফিরে পেয়েছেন। কেউ জ্বর মাথাব্যাথা, দুর্বলতা সামলে উঠেছেন।

সরকারের ঘোষিত সংখ্যার চাইতে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাস্তবে বহু বহুগুনে বেশি। আক্রান্তদের খুব সামান্যই টেস্ট করাচ্ছেন। ইকোনমিস্ট এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় এই মুহুর্তে আক্রান্তের সংখ্যা সাত লাখেরও বেশি।

দিন দিন সংখ্যাটা বাড়ছে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতে একমাত্র দোয়াই ভরসা। মানুষের অসচেতনতা, প্রশাসনের ঢিলেমি পরিস্থিতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, নতুন করে সাধারন ছুটি, লকডাউন খুব একটা কাজে দিবে না।

আল্লাহ পাক তার অসীম রহমতে আমাদের হেফাজত করুন, এই দেশকে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করুন…আসুন সবাই মিলে সে দোয়াই করি।

- সামছুর রহমান ওমর

পঠিত : ৪১১ বার

মন্তব্য: ০