Alapon

কেবল উত্তম আচরণ দিয়েই বিশ্ব জয় করা সম্ভব...


বছর পাঁচ-ছয়েক ছয়েক আগের কথা। সেসময় ক্রিকেটের পোকা ছিলাম। সারাদিন যেমন ক্রিকেট খেলতাম তেমনি পত্রিকার পাতার মধ্যে ঐ খেলার পাতাটিতেই সবসময় নজর রাখতাম।

সেসময় ক্রিকেটার হাশিম আমলার একটি সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেসময় হাশিম হামলা সাউথ আফ্রিকার টেষ্ট টিমের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। সাংবাদিক সাহেব হাশিম আমলাকে বলেছিলেন, আপনার জীবনের সবচয়ে স্মরনীয় একটি ঘটনা বলুন। হাশিম আমলা বললেন, আমি যে ঘটনাটি বলব সেটাকে স্মরনীয়ই বলা যায়। বলতে পারেন জীবনের অন্যতম ভয়ানক স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘একদির রাতে আমি আর আমার স্ত্রী বাহিরে থেকে ডিনার করে বাসায় ফিরছিলাম। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই গাড়ির সামনে প্রকান্ড একটি গাছ পড়ে গেল। আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক করলাম। তারপর দেখলাম, আমাদের গাড়ির চারদিকে বেশ কিছু অস্ত্রধারী লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের আফ্রিকানুসারে এমন দৃশ্য খুব একটা অবাক করার মত নয়। এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।

তারা আমাদেরকে ইশরায় বলল, গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসো। আমরা দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে আসলাম। অস্ত্রধারীর মধ্য থেকে একজন এগিয়ে এসে বলল, তোমার নাম কি? ‍তুমি কোথায় থাকো? হাশিম আমলা জবাবে বললেন, ‘আমি হাশিম! ও আমার স্ত্রী। আমরা পাশেই থাকি।’ তখন সেই অস্ত্রধারী লোকটি বলল, আমার ধারণা যদি ভুল না হয়ে থাকে তবে তুমি আমাদের ক্রিকেটার হাশিম আমলা। তাই নয় কি?
আমলা জবাবে বললেন, হ্যা আমিই হাশিম আমলা।

তখন সেই অস্ত্রধারী লোকটি বললেন, ওহ ডিয়ার! আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি আগেই তোমার পরিচয় দিতে তবে এতোক্ষন তোমাকে দাঁড় করিয়ে রাখতাম না। ও আর একটি কথা! আমি কিন্তু তোমার প্রতিবেশী। হয়তো তুমি আমাকে চিনো না কিন্তু আমি তোমাকে ভালো করেই চিনি। পরবর্তি সময় থেকে এতো রাত করে বাহিরে থাকবে না।’
এটাই ছিল হাশিম আমলার জীবনের অন্যতম স্মরনীয় ঘটনা। সম্ভবত হাশিম আমলাই একমাত্র লিজেন্ড যার কোন হেটারস নেই। একবার ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার জো রুট হাশিম আমলার মুখের দাঁড়ি নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিল। যার জবাবে হাশিম আমলা তার স্বভাবসুলভ হাসিটুকুই উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষি ছিলেন অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনিং ব্যাটসম্যান ডেভিট ওয়ার্নার। ঘটনাটিকে হাশিম আমলা খুব স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করলেও ডেভিড ওয়ার্নার সহজে হজম করতে পারেন নি। ডেভিড ওয়ার্নার জো রুটের নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দেন।

সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেটের সবচেয়ে অহংকারী ক্রিকেটারদের মধ্যে ডেল ষ্টেইন অন্যতম। অথচ এই ডেল ষ্টেইন এর প্রিয় মানুষ নাকি এই শুভ্র চেহারা মুখ ভর্তি দাঁড়ি ধারী হাশিম আমলাই। ডেল ষ্টেইন গর্ব নিয়েই বলেন, আমার যখন অনুপ্রেরনার প্রয়োজন হয় তখন আমি হাশিমের দিকে তাকাই। আর সে যথারীতি পবিত্র গ্রন্থ কুরআন পড়ছে। এই দৃশ্য আমাকে বরাবরই অনুপ্রাণিত করে।

২০১৫ সাল টি ছিল সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেটের জন্য একটি কোল্ড ওয়ারের বছর। এই বছরটিতেই মিডিয়া জানতে পারে সাউথ আফ্রিকান ফাষ্ট বোলার ওয়েন পারনেল ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আর এই ঘটনার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছন ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ভদ্র খেলোয়াড় হাশিম আমলা। মিডিয়া এমনটাই ধারণা করে থাকে।

পাকিস্তান অনুর্ধ্ব-২১ ক্রিকেট টিমের নিয়মিত খেলোয়াড় ইমরান তাহির। নিজের উশৃঙ্খল জীবনের জন্য সহসাই তালেবানদের নজরে পড়ে যান। আর নজরে পড়া মাত্রই তার বাড়িতে মৃত্যু পরোয়ানা জানিয়ে তালেবান বাহিনী চিঠি পাঠায়। চিঠি পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ সাউথ আফ্রিকা পাড়ি জমান। সাউথ আফ্রিকা এসেও মডার্ণ লাইফ লীড করবার মায়া ত্যাগ করতে পারেন নি ইমরান তাহির।

এরপর সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট টিমের নিয়মিত সদস্য হওয়ার পর থেকে হাশিম আমলার সংস্পর্শ তার লাইফ ষ্টাইলে পরিবর্তন নিয়ে আসে। আলহামদুলিল্লাহ ইমরান তাহিরও এখন প্রাকটিসিং মুসলিম।

আমি ভেবে অবাক হই। হাশিম আমলাও মুসলিম আমিও মুসলিম। আমরা একই উম্মাহর ভাই হবার পরও আমাদের আচরনগত কত্তো পার্থক্য। একজন তাঁর আচরন দিয়ে গোটা বিশ্বকে জয় করে ফেলল। আর আমরা আমাদের ঘরেই প্রিয় মানুষ হতে পারি না। আমরা আমাদের ঘরটাকেই জয় করতে পারি না।

পঠিত : ৩০৫ বার

মন্তব্য: ০