Alapon

পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করাটাই কি মূল্যায়ন...?


একটি বাস্তব কথোপকথনঃ নারী পড়ার পর চাকরি না করলে তার মূল্য রইলো কই?

আমার এক কাজিনের সাথে কথা হচ্ছিলো। প্রসঙ্গ নারী শিক্ষা ও তার মূল্যায়ন।

সে বললো, আচ্ছা, এই যে কিছু লোক বলে বেড়ায় নারীদের এত কাজ করার কী দরকার, কী দরকার চাকরি করার!! মেয়েটা এত বছর ধরে শিখেছে তার শিক্ষার কি কোনোই মূল্য নেই!

বললাম, শিক্ষার মূল্য কি শুধু ঐ চাকরির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে? তোমার কথায় বুঝা গেলো সে পড়াশোনা শিখেছে শুধুই চাকরি করার জন্য। বাস্তবতায় আসো, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নবম-দশম শ্রেণী পর্যন্ত কিছুটা নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়। (তাও পর্যাপ্ত নয়) এরপর যে যেই কর্মজীবনে প্রবেশ করবে সে সেই শিক্ষা বেছে নেয়। এটা যেমন তোমার কথা থেকে প্রমাণিত হয় তেমনি প্রমাণিত হয় শিক্ষকদের কথা থেকেও, শিক্ষকরা বলে ''ভালো রেজাল্ট কর, না হয় ভালো চাকরি পাবি না।" এ কথা কেন বলছে? বলছে এ কারণে যে, মাধ্যমিকে টুকিটাকি নৈতিক শিক্ষা ছাড়া সিংহভাগ কর্মশিক্ষা আর পরে তো পুরোই কর্মশিক্ষা, তো এই শিক্ষা কাজে লাগানো হয় শুধু টাকা কামাইয়ে। যার রেজাল্ট যতো ভালো হবে সে ততো টাকা কামাই করতে পারবে শিক্ষকরা সে কথাটাই বুঝাতে চাচ্ছেন। (সাধারণভাবে টাকা কামাই, অর্থ উপার্জন এগুলো খারাপ না। শিক্ষকদের কাজটিকেও খারাপভাবে চিত্রায়িত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। মূলত বাস্তবতা তুলে ধরাই ছিলো উদ্দেশ্য।) তো নারীদের চাকরি বাকরি করতে মানা করায় বিবিধ কারণ রয়েছে, তো শিক্ষার মূল্য যদি শুধু চাকরির সঙ্গেই ঝুলে থাকে আর চাকরিই না করে তাহলে সে শিক্ষার্জন না করাই শ্রেয়।

সে বললো, কী! নারী চাকরি করবে না! কী সমস্যা চাকরিতে! এই যে, নারীরা যদি ডাক্তার না হয় তুমি মাকে, তোমার স্ত্রীকে কার কাছে নিবে?

বললাম, দেখো, নারী চাকরি করলে এমন কিছু পরিস্থিতির স্বীকার হয় যেগুলো আমাদের ইসলাম আমাদেরকে নিষেধ করে। আচ্ছা, ধরলাম নারী চাকরি করবে। তাহলে তার ঘর সামলাবে কে? রান্না করবে কে? বাচ্চা পালবে কে? স্বামী-স্ত্রী দু'জনই ঘরের বাইরে, এটা কোনো জীবন! এখন হয়তো বলবে যে, ঘরে কাজের মেয়ে রাখবে। তো সেও একজন নারী। একজন নারী নিজেই নিজের বাচ্চার দেখভাল করবে, শিখাবে এটাই উত্তম। (ওখানে এ আলাপটা হয়নি তাও এখানে যোগ করছি, পরপুরুষের অধীনে কাজ করাটা নাকি আধুনিকতা, আর স্বামীর ঘরের কাজ করাটা নাকি নারীর পিছিয়ে পড়ার কারণ! অবশ্য ইসলামে স্বামীর ঘরকে স্ত্রীর নিজের ঘর বলেই অভিহিত করা হয়েছে। পরের অফিসে কামলা না খেটে নিজের ঘরে রাজরানী হয়ে থাকাই ভালো।)
এবার আসো, মেয়েদের ডাক্তারি প্রসঙ্গে। আমি তোমাকে বাস্তবতায় নিয়ে যেতে চাচ্ছি। এই যে, ধরো তোমাদের এলাকাই, কয়েক হাজার লোক বসবাস করে। ডাক্তার আছে ক'জন? হয়তো একজন। কোনো এলাকাতে এমন ডাক্তারই নয়। জনজীবন কি চলছে না? চলছে। এই যে, একটা ভুয়া অজুহাত দেখানো হয় এর আসলে কোনো বাস্তবতা নেই। আর কিছু চিকিৎসা পর্দার সাথে শরীয়ত মেনে নারী পুরুষের থেকেও নিতে পারবে, যেটাতে একান্তই পর্দা ও শরীয়তের লঙ্ঘন হয় সেখানে অবশ্যই সে একজন নারী চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হবে। এ ধরণের আরো কিছু খাত আছে যেখানে অল্প কিছু নারীর যাওয়া প্রয়োজন।
(তার প্রশ্নের মাঝে না থাকা সত্ত্বেও আমি নিজ থেকে আরেকটু বাড়িয়ে বললাম,) কেউ কেউ আরেকটা অজুহাত পেশ করেন যে, এতো এতো নারীদের ঘরে বসিয়ে রাখলে দেশের অর্থনীতির কী অবস্থা হবে!? আচ্ছা, তুমি আমাকে বলো, এখনও তোমার ঘরে, তোমার প্রতিবেশি যারা আছে, আশপাশে যারা আছে, দেখো তো কটা ঘরের নারী এ যুগে এসেও চাকরি করছে? দশটা ঘর খুঁজলে হয়তো একজনকে পেতো পারো। অর্থনীতি কি শেষ হয়ে গেছে! মানুষ কি না খেয়ে মরে যাচ্ছে!! তা তো না।
(ওখানে এ আলাপটা হয়নি তাও এখানে যোগ করছি, বহু যুবক বেকার বসে আছে। আপনি যুবক-যুবতীদের চাকরি দেয়ার নাম করে একই ঘরের স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেই চাকরি দিলেন আর ওদিকে আরেক ঘরে কারোই কাজ নেই। রাজার চাকরি নেই রানীদেরকে পদ দিয়ে বসে আছেন। একান্ত যেখানে নারী ছাড়া হয় না সেখানে কিছু নারীর জন্য শালীন পরিসরে কর্মের ব্যবস্থা করুন। আর বাকী শূন্যপদগুলো এসব বেকার যুবকদের দিন। প্রয়োজনে কর্মস্থল আরো বৃদ্ধি করুন।)

সে আরো বললো, এই যে, নারীরা এসএসসি পাশ না করতেই, খুব বেশি না আগাতেই বাবা-মারা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে! পড়ুক না আরেকটু! চাকরিই করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই! কতো মেয়েরা কান্নাকাটি করে এজন্য!! (সে কিছু দৃষ্টান্তও দিলো)

বললাম, এই যে, তখন বললা, পড়ার পর চাকরি না করলে তার মূল্য রইলো কই? এখন আবার বলছো চাকরিই করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই! আসলে তোমার আগের কথাতেই এর উত্তর রয়েছে। আমরা আগেই আলোচনা করেছি, শিক্ষাব্যবস্থায় তাকে কর্ম শেখানো হচ্ছে, তো যে কর্ম যে করবে না সেটা শেখা আসলে অর্থহীন। তাহলে চাকরিই করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই আসছে কেন! যা করবে তাই শিখবে যা করবে না তা শিখবে না। এতেই দেশ ও দশের লাভ। একজন শিক্ষার্থীর পেছনে দেশের জনসাধারণের টাকাও ব্যবহৃত হচ্ছে। একজন ডাক্তারি পড়লো, সেবা দিলো না। তার পেছনে টাকা ঢেলে আমাদের কী লাভ হলো!
আর এই যে গেলো গেলো রব তোলো! আমরা আমাদের বাপ-দাদা, ভাই, পুরুষ মানুষের কথাই বলছি, কোনো কারণে তার মনে হয়েছে, যাক! পড়ালেখা আর করবো না। হয়তো ভেবেছে সে এমন কর্ম করে ভবিষ্যৎ জীবন অতিবাহিত করবে যেটার জন্য কোনো ডিগ্রী না নিলেও চলবে। তাহলে দেখো, পুরুষ মানুষও নানা কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ সে জানে অতিরিক্ত পড়ালেখা করলে অনেক করা যাবে, এগুলো শুধুই অর্থ উপার্জনের জন্য। তো কই, তখন তো গেলো গেলো রব তোলো না। এখানে দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। ইসলামও শুধু উপকারী জ্ঞানটুকুই অর্জন করতে বলে, যেটা আমার জীবনে কাজে লাগবে। যা কাজে লাগবে না সেটা শুধু শুধুই শেখা এক প্রকার অপচয় (সময়ের দিক থেকেও, আর্থিক দিক থেকেও হতে পারে)।

- CLTD

পঠিত : ৬৪২ বার

মন্তব্য: ০