Alapon

লকডাউন নিয়ে সরকারের মাঝে দোদুল্যমান অবস্থা কেন...?


গত ৩০ মে বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়। যদিও সরকারের ঘোষণা ছিল, সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারি ও প্রাইভেট অফিসগুলো পূর্ণদমে খুলে যাওয়ায় এটা আর সীমিত পরিসরে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। সর্বাত্মকভাবে লকডাউন প্রত্যাহার হয়ে গেছে। অন্যদিকে যদিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে কিন্তু পরিবহনের ভাড়া অতিরিক্ত ৬০% বৃদ্ধি করায়, তা মেনে চলতে জনগণের মাঝে ‍খুব একটা স্বতঃফূর্ততা দেখা যাচ্ছে না। আর এসব নিয়ে সরকারের মাঝে চাঞ্চল্যতা দেখা যাচ্ছে। যার কারণে বিগত কয়েকদিনে সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে খুব বেশি বিচলত ও অস্থির দেখা গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে দিনকে দিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ রিপোর্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৮০৫২ জন। আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ১০৮৯ জন। যদিও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ঢাকা সিটি এবং নারায়নগঞ্জ সিটির কবরস্থানগুলোর রিপোর্ট অনুসারে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।

লকডাউন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না কেন?

মূলত লকডাউন পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না, আমাদের দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থার কারণে। ঘরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকে তবে মানুষ লকডাউন মেনে ঘরেই থাকবে। কেউ তো আর যেচে গিয়ে মৃত্যুর সাক্ষাৎ পেতে চায় না। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থার কারণে ঘরে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে। তারা দিন এনে দিন খায়। এমতাবস্থায় ঘরে বসে থাকলে তাদের পেটে খাবার যাবে না। আর আমাদের দেশের সরকারেরও এমন সক্ষমতা নেই যে, দেশের সব নাগরিকের কাছে খাবার পৌঁছাবে। এমনকি আমাদের পাশ্ববর্তি দেশ ভারতেও পূর্নাঙ্গভাবে লক ডাউন পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানেও কারণ, দারিদ্রতা। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষের অবস্থান দারিদ্র সীমার নিচে। কিন্তু সেখানে প্রশাসনের কঠোরতা স্বত্ত্বেও মানুষ লকডাউন অমান্য করতে বাধ্য হচ্ছে। একমাত্র কারণ, জীবিকা! আর বাংলাদেশের মত দারিদ্রপীড়িত দেশের সরকাররা খাদ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না বলেই লকডাউনতো সফলভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।

অন্যদিকে তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে লকডাউন পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করা সম্ভব হয়েছে সরকার কতৃক নাগরিকদের সেবা প্রদান নিশ্চিত করার কারণে। সেসব দেশে সরকারের পক্ষ থেকে সপ্তাহে ৫ টি করে মাস্ক সরবরাহ করা হতো। এমনকি বেতনের টাকাটাও কোনো কোনো দেশের সরকার নিজেরাই দিয়ে দিয়েছে। আর যারা গরীব তাদের সব ব্যয়ভার সরকার বহন করেছে এবং করছে। যার কারণে সেসব দেশে লকডাউন সফল হয়েছে এবং সেখানে কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বরণ করার সংখ্যা অনেক কম।

জোন ভিত্তিক লকডাউন সফল হবে কি?


অতি সম্প্রতি সরকার ঢাকা শহরকে তিনটি জোনে বিভক্ত করে লকডাউন কার্যকর করছে। তিনটি জোন হচ্ছে- রেড জোন, ইয়োলো জোন ও গ্রিন জোন। অর্থাৎ যে এলাকায় কোভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি সেটা রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত হবে। সেখানে পূর্ণ লকডাউন কার্যকর করা হবে। অর্থাৎ সেই এলাকায় লকডাউনের পরবর্তি ১৪ দিন কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, বেরও হতে পারবে না। ইয়োলো জোন হলো, যেখানে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। আর গ্রীন জোন হলো নিরাপদ এলাকা। যেখানে কোভিড আক্রান্ত রোগী নেই।

জোন ভাগ করার পর প্রথমে ওয়ারী ও পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লক ডাউন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতেও দেখা যায়। কিন্তু সরকারের উপর মহল তথা প্রধানমন্ত্রীর থেকে গ্রীন সিগন্যাল না পাওয়ায় প্রথম দিকে এই লকডাউন ব্যবস্থা স্তিমিত করা হয়। তারপর প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করলে পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউন কার্যকর করা হয়। প্রথমাবস্থায় মনে হয়েছিল, বেশ কড়া লকডাউন চলছে। কিন্তু আজ দ্বিতীয় দিন দেখা যাচ্ছে সেখানেও লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে। কারণ, ওই একই; জীবিকা। সরকার যদি খাবারের বন্দোবস্ত করতো তবে এই লকডাউন ১০০% কঠোরভাবে পালন করা সম্ভব হতো। কিন্তু মানুষ জীবিকার কারণে কোনো না কোনো অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে। আর এটাই স্বাভাবিক।

আসলে সরকারের ভূমিকা কী?

লক ডাউন বাস্তবায়ন ও প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সরকারকে দোদুল্যমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। প্রথমত সরকার অর্থনীতির কথা ভেবে দেশ সম্পূর্ণভাবে লক ডাউন করতে পারছে না। আর বাংলাদেশের মত একটি গরীব দেশের জন্য দিনের পর দিন লকডাউন চালিয়ে যাওয়া সম্ভবও নয়। তাই অর্থনৈতিক অবস্থা বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে সরকার পুরোপুরি লকডাউন দিতে পারছে না এবং সাধারণ মানুষের উপর কড়াকড়ি আরোপ করছে না।

অন্যদিকে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশার কারণে সরকার সাহস করে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন প্রত্যাহারও করতে পারছে না। ইতোমধ্যেই দেশের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো রোগী দিয়ে ভর্তি। এমনকি দেশের সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম পর্যন্ত কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল সিএমএইচ-এ জায়গা না পেয়ে স্পেশালাইডজ মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কেমন হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়! সরকার যদি আবার আগের মত স্বাভাবিকভাবে দেশ চালাতে শুরু করে, তবে স্বাভাবিকভাবেই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তখন চিকিৎসার অভাবে মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে থাকবে। তখন ঢাকা শহর অতি দ্রুতই লাশের ভাগাড়ে পরিণত হবে বলে, আমার বিশ্বাস।

আমাদের করণীয়


আমাদের করণীয় বলতে, নিজে সচেতন থাকা! স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অফিসে যাতায়াত করা। অপ্রয়োজনে বাহিরে না যাওয়া- একইসাথে নানা প্রচার-প্রোপাগান্ডায় বিচলিত ও আতঙ্কিত হয়ে দোকানের সব মালামাল কিনে ঘর ভর্তি না করা! ফলে যারা একদমই নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের ক্রয় ক্ষমতা শূণ্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে। তখন আর করোনা ভাইরাসের অপেক্ষা করতে হবে না, মানুষ না খেয়েই মারা যাবে। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।

পঠিত : ৪০০ বার

মন্তব্য: ০