Alapon

নাসিমের মৃত্যু কি রাজনীতিবিদদের বোধদয়ের জন্ম দিতে পারবে...?


মৃত্যু সবসময়ই কষ্টের। সেটা যদি চির শত্রুর মৃত্যুও হয়, তারপরও তা কষ্টের। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু আছে যেগুলো কেন জানি, কষ্টের কারণ হতে পারে না! তবে কি অধিক শোকে পাথর হয়ে যায়? না, তাও না। এসব মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া বহু মাত্রিক হয়। আমি যাদের মৃত্যুর কথা বলছি তারা হলেন রাজনীতিবিদ। তবে সব রাজনীতিবিদের কথা বলছি না। কতিপয় রাজনীতিবিদের কথা বলছি। এই বাংলাদেশেই আমরা দুজন রাজনীতিবিদের মৃত্যু দেখেছি, যার মধ্যে একজন ছিলেন প্রেসিডেন্ট আর একজন সরকারের কারাগারে বন্দি!

তাঁদের মৃত্যুতে জন মানুষের মাঝে নেমে এসেছিল, শোকের ছায়া! আর তাদের জানাযায় স্মরণকালের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

যাই হোক, আজ আমাদের মাঝ থেকে আরও একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্ব এবং সাবেক মন্ত্রী বিদায় নিলেন। তার নাম আপনার নিশ্চয়ই বহুবার শুনেছেন। ভালো খবরের কারণে শিরোনাম হওয়ার চেয়ে তিনি খারাপ খবরের কারণেই বেশির ভাগ সময় পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম।

আজ মোহাম্মাদ নাসিমের মৃত্যু দেখে তার ২০১৫ সালের একটা বক্তব্যের কথা মনে পড়ে গেল। তখন দেশ ব্যাপী সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম চলছিল। আর সেই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য বেগম জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে পুলিশ তার উপর পেপার স্প্রে করে। আর সেগুলো গিয়ে পড়ে বেগম জিয়ার চোখে এবং তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন এক জনসভায় তৎকালীণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম বলেছিলেন, ‘আপনি নাটক করছেন। আপনি যদি সত্যিকারের অসুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে আমাকে বলেন। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়ে কথা দিচ্ছি, মেডিকেল বোর্ড পাঠিয়ে আপনাকে সুস্থ করে তুলব। আগামী নির্বাচনে আপনাকে পরাজিত করে আমরা চ্যাম্পিয়ন হব।’


নাসিম সাহেব! আপনার জন্যও তো একবার মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হল। পুনরায় বোর্ড গঠন করা হল। কই, তারা তো আপনাকে সুস্থ করে তুলতে পারলো না? সুস্থ করার মালিক কি আপনি বা আপনার মেডিকেল বোর্ড?
এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথার খেসারত আজ নিশ্চয়ই দিতে হবে। সুস্থ করার মালিক যদি আপনি হতেন, তবে নিজে সুস্থ হতে পারলেন না কেন? আর অন্যের অসুস্থতা নিয়ে উপহাস করে আজ কেন অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন! সুস্থ করার মালিক যে আপনি বা আপনার বোর্ড নন, সে কথা আপনি হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন। আজ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, সুস্থ করার মালিক কে?

এই মুহুর্তে মরহুম নাসিম সাহেবের আর একটা বক্তব্যের কথা মনে পড়ছে। কোনো এক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী শেখ হাসিনার হাত দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে আমরা বেশ কয়েকটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম। আগামীতেও আরও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে।’ তার এই বক্তব্যের বিপরীতে শ্রোতাদের খুব একটা রেসপন্স না দেখে ততকালীণ মন্ত্রী নাসিম সাহেব লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেললেন, ‘কী ব্যাপার, আপনারা তালি দিচ্ছেন না কেন? বুঝলাম না কিছু!’

এরকম চেয়ে নেওয়া ‘তালি’-এর জোরে নাসিম সাহেবরা মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। এমনকি দেশে মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরও নাসিম সাহেবদের গলাবাজি বন্ধ হয়নি। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে দেশ করোনা মুক্ত হয়েছে।’


দেশ কতোটা করোনা মুক্ত হয়েছে তা নাসিম সাহেব নিজের জীবন দিয়েই প্রমাণ করে গেলেন। আর একটা বিষয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতের যে বেহাল দশা তা কিন্তু এই নাসিম সাহেবের হাত দিয়েই হয়েছে। নাসিম সাহেবের বদৌলতে দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। এমনকি বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। অথচ সেই টাকা যদি স্বাস্থ্য খাতে সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হতো, তাহলে দেশের স্বাস্থ্যখাতের এতোটা বেহাল দশা হতো না। আইসিইউ নাই, ভেন্টিলেশন সিস্টেম নাই, চিকিৎসা নাই- এসব কথা শুনতে হতো না। নাসিম সাহেবের নিজের খোঁড়া গর্তে নিজেই পড়ে মরলেন। অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা পড়লেন।

পঠিত : ৩৮৭ বার

মন্তব্য: ০