নাসিম সাহেবের মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হাহাহা’ রিঅ্যাক্টের বন্যার কারণ...
তারিখঃ ১৪ জুন, ২০২০, ১৪:৫৬
আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে, দুই একের মাঝেই আমাদের জাফর ইকবাল স্যার অথবা তার পর্যায়ের কোনো এক বুদ্ধি বিক্রেতা একটি কলাম লিখবেন, যার শিরোনাম হবে ‘মন্ত্রী- এমপিদের মৃত্যুতে তোমরা যারা হাহাহা রিঅ্যাক্ট দাও’!
কারণ, অতি সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম যখন করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন তখন সেই সংক্রান্ত সংবাদে মানুষ দুআ বা আফসোস করার পরিবর্তে আনন্দ প্রকাশ করছে এবং ফেসবুকের হাহাহা রিঅ্যাক্ট প্রদান করছে। এরপর নাসিম সাহেব যখন ব্রেইন স্টোক করলেন, সেই সংবাদেও মানুষ আরও বেশি ‘হাহাহা’ রিঅ্যাক্ট দিয়েছে। সর্বশেষ তিনি যখন মৃত্যুবরণ করলেন তখন সোশাল মিডিয়া পাড়ার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেন বিশ্বকাপ জয় করেছে আর মানুষ তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করছে। অথচ সেটা ছিল মৃত্যু সংবাদ। আর মৃত্যু হয়েছে জাতীয় নেতা বলে খ্যাত ক্যাপ্টেন এম মনসুর সাহেবের ছেলে সাবেক স্বাস্থ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের। এমন একজন খ্যাতিমান মানুষের মৃত্যুতে তো দেশের সাধারণ জনতার মাঝে শোকের কালো ছায়া নেমে আসার কথা। কিন্তু সাধারণ মানুষের মাঝে যেন আনন্দের হিল্লোল বইছে।
অনেকেই বলছেন, মৃত্যুকে ঘিরে এমন আনন্দ প্রকাশ পৈশাচিকতার নামান্তর। আমিও তা-ই বলি। তবে তাদের একটা প্রশ্ন করতে চাই, মৃত্যুকে ঘিরে এমন আনন্দ প্রকাশের রেওয়াজ তো বাংলাদেশে কোনোকালে ছিল না। বাংলাদেশে এই রেওয়াজের আমদানি করল কারা?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে একটু ফ্ল্যাশ ব্যাকে যেতে হবে। শাহবাগে অনুষ্ঠিত গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশে এই পৈশাচিকতার আমদানিকারক এই গণজাগরণ মঞ্চ। যদিও প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় সেই মঞ্চের এখন আর অস্তিত্ত্ব নেই সত্য, কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া সেই পৈশাচিকতা রয়ে গেছে।
১ম ছবিটা দেখুন,
মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ে উল্লাস প্রকাশ করে।
২য় ছবিটা দেখুন,
তারপর ফাঁসি কার্যকর করার পর গণজাগরণ মঞ্চের আনন্দ প্রকাশ।
৩য় ছবিটা দেখুন,
মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়ার পর মিষ্টি বিতরণ।
আর এই পৈশাচিক কাজের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন নাসিম সাহেবরাই। নাসিম সাহেবরা যে গর্ত খুঁড়ে গেছেন, এখন নিজেরাই সেই গর্তে পড়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নাসিম সাহেবের মৃত্যুতে কারা উল্লাস প্রকাশ করছে?
বিষয়টি যদি শুধু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকত, তারপরও সরকার দলীয় এমপি মন্ত্রীদের জন্য সান্তনার বিষয় ছিল। কিন্তু এই উল্লাস প্রকাশে সাধারণ জনতাই অগ্রগামী দেখা যাচ্ছে। এমনকি নাসিম সাহেবের মৃত্যু নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন লেকচারার। পরবর্তিতে তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে। কিন্তু গ্রেফতার করেই তো আর মানুষের মন থেকে ঘৃণা তাড়ানো যাবে না।
নাসিম সাহেব বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের যে ব্হোল দশা করে গেছেন, তা এক কথায় নজিরবিহীণ। কিন্তু এই অবস্থার প্রতিবাদ করারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ, বাংলাদেশে অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করছে। যার দরুন সরকারের কোনো অন্যায় কাজের বিরোধীতা করার জো নেই। বিরোধীতা অথবা প্রতিবাদ করলেই মানুষকে জুডিশিয়াল নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যার কারণে মানুষ এ সকল মন্ত্রী-এমপিদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংবাদে আনন্দ প্রকাশ করে প্রতিবাদ করছে। এটাও এক ধরণের প্রতিবাদ। প্রতিবাদের ভাষা অনেকটা নদীর স্রোতের মত। নদীর স্রোত যেমন তার নিজের চলার পথ খুঁজে নেয়। তেমনি প্রতিবাদের ভাষাও নিজের পথ খুঁজে নেয়। দেশে যেহেতু স্বাভাবিক পন্থায় প্রতিবাদ করবার জো নেই, তাই মানুষ পৈশাচিক পন্থা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।
মন্তব্য: ১