Alapon

পরিবারবিধ্বংসী নারীবাদ থেকে মুক্তির উপায়...


আমাদের মেয়েরা আগামীতে সবচেয়ে মারাত্মক যে সামাজিক সমস্যার মুখে পড়তে যাচ্ছেন, তা হল সামনের দিনগুলোতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মধ্যবয়সী পুরুষের মৃত্যু হবে। করোনা ভাইরাসে পুরুষের মৃত্যুহার আমি যদি ভুল না করি, নারীর মৃত্যুহারের প্রায় দ্বিগুন। এই মধ্যবয়সী পুরুষেরা কারো বাবা, কারো বড় ভাই, কারো স্বামী। কম বেশি এরাই সংসারের অর্থনৈতিক জোয়াল কাধে বহন করেন।

একজন মধ্যবয়সী পুরুষের সাধারনত সেই পরিমান সঞ্চয় থাকে না যা তার মৃত্যু হলেও তার পরিবারকে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক অবস্থায় ধরে রাখতে পারবে। তাই এই মৃত্যুগুলোর প্রতিটাই একেকটা পরিবারের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। তাদের জায়গা নেয়ার মত সুযোগ পরিবারের অন্য কেউ নাও পেতে পারেন, কারন এখন নতুন নিয়োগ কমে যাচ্ছে।
বিধবা বা পিতৃহারা হবার যে মানসিক শোক এই পরিবারগুলোর মেয়েদের গ্রাস করবে, তার ভারও কম নয়। পাশাপাশি, সমাজে প্রচুর বিধবা নারীকে দেখা যাবে, যাদের ভার বহন করার অবস্থা এই দূর্মূল্যের বাজারে তেমন কারো থাকবে না। কিন্তু তাদের ওপরেই এসে পড়বে হয়তো দুটো বা তিনটা মানুষের থাকা খাওয়া, প্রতিপালন আর পড়ালেখার খরচ মেটানোর দায়।
নিম্নবিত্ত অনেক নারী কাজ হারিয়েছেন বা হারানোর অপেক্ষায় আছেন। তাদের জীবন কিভাবে চলবে তা নিয়ে জনপরিসরে নারীবাদীদের কোন আলাপ দেখা যায় না।

মোটের ওপর, আমাদের নারীবাদীরা নিজেদের জনবিচ্ছিন্ন চরিত্রকে ক'দিন পর পর মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরতে পছন্দ করেন, তাদের প্রশ্ন তোলার ধরন ও সময় নির্বাচন তা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে।


ম্যারিটাল রেইপ নিয়ে আলাপ উঠছে গত বছর তিনেক যাবতই। এটা নিয়ে আমাদের নারীবাদীরা যেমন আরগুমেন্ট তুলছেন তেমনি আরগুমেন্ট তুলছেন ইসলামপন্থীরাও।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীবাদীরা ম্যারিটাল রেইপ সংক্রান্ত যে আলাপ তোলেন তা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় গ্রহনযোগ্য নয়।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন আইন করা হয়েছিল নারীকে মূলত শ্বশুরবাড়ির লোকের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই আইনে যেসব মামলা হয়, আইন মন্ত্রণালয়ের দেয়া ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী তার ৮০% মামলাই মিথ্যা। শত্রুপক্ষের লোককে ফাসানোর জন্য নারী নির্যাতনের মামলা করা হয় কারন এই মামলায় সহজে জামিন হয় না।
অর্থাৎ, আইন আছে কিন্তু তা নারীর উপকারে না লেগে কাজে লাগছে স্বার্থান্বেষী মানুষের।

ম্যারিটাল রেইপ এমন একটা অপরাধ যার সাক্ষ্য প্রমাণ চূড়ান্তভাবে এক পক্ষের (স্ত্রী) বিবেচনার ওপরে নির্ভরশীল। সেই পক্ষের মত ঘুরে যাওয়া মানে মামলার গতিও পুরোপুরি ঘুরে যাওয়া।

এর মাধ্যমে আর যা কিছুই হোক, ন্যায়বিচার সম্ভব নয়।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভারত ও বাংলাদেশের পুরুষদের মধ্যে জোরপূর্বকভাবে স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হবার প্রবনতা আছে। এমনকি, এই একই প্রবণতা রাশিয়া, দক্ষিণ ইতালী, পূর্ব ইউরোপ এমনকি ইজরায়েলেও প্রবল।

যেহেতু বাংলাদেশে পারিবারিক ফৌজদারী আইন ধর্মীয় পারিবারিক আইনের অনুসরন করে, তাই এক্ষেত্রে আমাদের ধর্মের শরনাপন্ন হওয়াটাই বাঞ্চনীয়।

আমাদের পুরুষদের বিরাট অংশ নারীদের ইসলামে যে সমস্ত অধিকার দেয়া হয়েছে তার একেবারে ন্যুনতম অধিকারটুকুও দিতে চান না।

শারীরিক মিলনে নারীদের ইচ্ছা ও সম্মতির যে ব্যাপার এর অস্তিত্বই আদৌ অনেকের কাছে নেই। এর ফলে যে না-ইনসাফি তৈরি হচ্ছে, মূলত তার ফলেই নারীবাদীরা আমাদের পারিবারিক ইস্যুতে তাদের নাক গলাবার সুযোগ পায়।

আমি খুব স্পষ্টভাবে বলছি, নিজ পরিবারের সাথে আচরনের সময় ইনসাফ করলে নারীবাদের বাংলাদেশে কোন খাওয়া নাই।
আপনার পরিবারের প্রতি যত্নশীল হোন, তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরন করুন। তাদের প্রভু না হয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ার চেষ্টা করুন। নেতৃত্বগুন নিজের ভেতর তৈরি না হলে তা তৈরির চেষ্টা করুন।

নারী তার স্বামী ও বাবার মধ্যে সারা পৃথিবীর সভ্যতা পেতে চায়।
উদাহরন তৈরির চেষ্টা করুন। আপনার উদাহরন যদি সুন্দর হয়, তারা এর প্রতিফলন আপনাকে ফিরিয়ে দেবে।


বাংলাদেশে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কের সমস্যার সাথে মূলত জড়িত ধর্মীয় শিক্ষা ও আদবের অভাব এবং একপ্রকার ইন্ডিয়ান ইসলামের প্রচলন। একেবারে সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম জাহানের কেন্দ্রভুমিতে ইসলামের যে চর্চাগুলি দেখি, সেখানে নারীর যৌন অধিকারের ব্যাপারটা স্বীকৃত ছিল।

অত্যন্ত লজ্জার বিষয়, উপমহাদেশের সাধারন মুসলমানরা কার কি অধিকার তা দুরের কথা, নামায পড়তে যেটুকু কুরআন জানার কথা সেটুকুও জানে না। শত শত বছর ধরে গ্রামে গ্রামে হওয়া লক্ষ লক্ষ ওয়াজ মাহফিল এই পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

যারা নামাযের জন্য প্রয়োজনীয় সুরাই জানে না তারা স্ত্রীর অধিকার কিভাবে জানবে??

এর ফলে আমাদের পারিবারিক জীবনের আইন কানুন ইসলামী হলেও চর্চা হয় একপ্রকার হিন্দুয়ানা মিশ্রিত ইসলামের, শহরে তাতে আবার থাকে আধুনিক প্রোটেস্টান্ট ধাচ। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারার ব্যর্থতার মধ্যেই আছে বাঙ্গাল মুসলমানের পারিবারিক অশান্তির গোড়া।

আমাদের মেয়েরা নারীবাদ পছন্দ করে না, কিন্তু আর দশটা মানুষের মত তারাও ইনসাফ চায়। তাদের প্রাপ্যটা আমাদের অবশ্যই বুঝিয়ে দিতে হবে।

আপনার আমার গায়ে তাদের চেয়ে জোর আল্লাহ বেশি দিয়েছেন বলে তাদের ওপর গায়ের জোর আমরা চাপিয়ে দেবো, এমন অধিকার আমাদের কোথায় দেয়া হয়েছে??
অনেকে শস্যক্ষেত্রের আয়াত উদ্ধৃত্ত করবেন। অথচ শস্যক্ষেত্র কেবল তখনই চাষের উপযুক্ত হয় যখন তাকে প্রয়োজনীয় পরিবেশ দেওয়া হয়।
ইসলাম পুরুষকে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে এর মানে দায়িত্বের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দিয়েছে। আপনি যদি দায়িত্ব নিতে না জানেন তবে আপনি নেতৃত্বের উপযুক্ত নন।

নারীদের সাথে ইনসাফ করুন। তারা যখন পরিবারে ইনসাফ পাবে, পরিবারবিধ্বংসী নারীবাদ তাদের কাছে ভিড়তে পারবে না।

@Sajal

পঠিত : ৪১৫ বার

মন্তব্য: ০