Alapon

সময়ের আলোচিত ব্যক্তিত্ব ডা. জাকির নায়েককে নিয়ে কিছু কথা...


ডা: জাকির নায়েক বর্তমান বিশ্বের এক বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব। গোটা দুনিয়ায় তাকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তিন বছর আগে ভারত থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে।

তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সৌদি আরব ও আমিরাতে তাকে থাকতে দেয়া হয়নি। এখন মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেয়ার দাবি উঠেছে। চারজন ক্যাবিনেট মিনিস্টার তার ‘পিআর’ বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের প্রতি আহ্বান জানান। তার প্রতিষ্ঠিত পিস টিভির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, তার জ্ঞানদীপ্ত বক্তৃতা ও যুক্তির সামনে অন্যান্য ধর্মের যাজক ও পুরোহিতরা বেকায়দায় থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা তাকে ভিসা দিচ্ছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুরোধ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে যাতে ডা: জাকির নায়েককে ভারতের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। তার ভক্তদের মতে, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি আজ চ্যালেঞ্জের মুখে।

অবশ্য স্বধর্মের অনেকেই তার প্রতি খড়গহস্ত। বিশ্বব্যাপী একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এর নেপথ্যে সক্রিয় বলে জানা যায়। যুগে যুগে যেসব ব্যক্তি দুনিয়াজুড়ে ইসলামের খিদমতের পরিধি বিস্তৃত এবং জনমানসে জাগরণ সৃষ্টি করেন তারা বৈরীশক্তির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।


তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের গবেষক হিসেবে জাকির নায়েকের খ্যাতি সর্বজন বিদিত। ১৯৬৫ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে তার জন্ম। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ধর্মতত্ত্বের গবেষক শেখ আহমাদ দিদাতের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলামের দাওয়াতি কাজে জড়িত হন। ১৯৯১ সালে তিনি ইসলাম প্রচারের কার্যক্রম শুরু করেন এবং ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত পিস টিভির দর্শক সংখ্যা প্রায় ১০কোটি। বাংলা, উর্দু ও ইংরেজি তিন ভাষায় প্রচারিত প্রোগ্রামের দর্শকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হলো অমুসলিম। মান্ডারিন চীনাসহ আরো ৭টি ভাষায় এটি সম্প্রচারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। উর্দু, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে তিনি শুরু করেন দাওয়াতি কাজ। ২০১৫ সালে পেয়েছে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক ‘বাদশাহ ফয়সল পুরস্কার’। ২০১২ সালের মার্চ মাসে ভারতে বিহারের কিশানগঞ্জে তার এক পাবলিক লেকচারে প্রায় ১০ লাখ লোক সমবেত হয়েছিলেন।

আহমদ দিদাতের পর ডা: জাকির নায়েক দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত, যিনি ইসলাম ও মহানবী সা:-এর বিরুদ্ধে একশ্রেণীর ইহুদি, খ্রিষ্টান ও হিন্দু বুদ্ধিজীবীর আনীত নানা অভিযোগ লেকচারের মাধ্যমে খণ্ডন করে ইসলামের সর্বজনীন আদর্শ ও কালজয়ী শিক্ষা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তার হাতে বহু অমুসলিম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন। তার বক্তৃতার শ্রোতারা মনে করেন, প্রখর মনীষা, অনন্য স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমোহিত করে রাখে। সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে জাকিরনায়েক সোচ্চার। ‘৯/১১’ হামলার পর যখন সারা বিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তোলপাড় শুরু হয় তখন তিনি জোরালো কণ্ঠে সব অভিযোগ খণ্ডন করে ‘ইসলামের সাথে সন্ত্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই’ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

জানা যায়, ২০০০ সালের ১ এপ্রিল আমেরিকার শিকাগো শহরে ‘বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন ও বাইবেল’ শীর্ষক এক বিতর্কে খ্রিষ্টান পাদরি উইলিয়াম ক্যাম্পবেলকে জাকির পরাজিত করেন। ২০০৪ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডে বক্তৃতা করেছেন, বহু মানুষ গ্রহণ করেন ইসলাম। ২১ জানুয়ারি ২০০৬ সালে শ্রী শ্রী রবি শঙ্করের সাথে ‘প্রধান ধর্মগ্রন্থের আলোকে হিন্দুইজম এবং ইসলাম’ বিষয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু টিভিতে প্রকাশ্যে যে বিতর্ক হয় এতে তিনি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হন। ‘শুধু ইসলামই নারীকে সমতা দেয়’- এ বিষয়ে ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে বিতর্ক করেছেন।

২০০৬ সালে সফর করেন ওয়েলসে। ২০০৭ সালে মুম্বাইয়ে সুমাইয়া গ্রাউন্ডে করেন ১০ দিনব্যাপী শান্তি সম্মেলন, এতে ইসলামের মহিমাকে তুলে ধরেন সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সামনে। ২০১০ সালে তিনি এ টিভি বিতর্কে ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করেন। অক্সফোর্ডে ভিডিও কনফারেন্সে ভাষণ দেন ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সালে। ২০১৪ সালে আফ্রিকার গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে তিনি সে দেশে চারটি বক্তৃতা প্রদান করেন। একটি জরিপে ২০০৯ সালে তিনি ‘সমকালীন বিশ্বে সবচেয়ে ধর্মীয় প্রভাবশালী তৃতীয় ব্যক্তি’ হিসেবে পরিগণিত হন। ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালের ৫০০ সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

জাকির নায়েকের বক্তব্যে বিশেষ কোনো মাজহাবের অনুসরণ লক্ষ করা যায় না। তবে তিনি মাজহাব অস্বীকার করেন না। অপরদিকে, নির্দিষ্ট কোনো মাজহাবকে অনুসরণও করেন না। জাকির নায়েক ‘শিরক, বিদআত ও শিয়া মতবাদের সাথে কোনো আপস করবেন না’ বলে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাওলানা হিজবুল্লাহকে জানিয়েছিলেন।


ফিক্হ-বিষয়ক তার কিছু বক্তব্য ও মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইজতিহাদ করার ক্ষেত্রে তিনি Authority কি না এ বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। যা সঙ্গত। একটি বিশেষ চিন্তাধারার (আহলে হাদিস/সালাফি) প্রতিনিধিত্বের কারণে নায়েকের বক্তব্যের সর্বজনীনতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। ইসলামী শরিয়াহর পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণার সক্ষমতা সব আলিম, বক্তা ও ওয়ায়েজের থাকে না। এটা আল্লাহ তায়ালা এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দান করে থাকেন যাদের রয়েছে কুরআন, তাফসির, হাদিস, উসুলে হাদিস, ফিক্হ, উসূলে ফিক্হ, আরবি ভাষা ও সাহিত্য এবং বালাগাত শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য ও নিরলস সাধনা। ত্রুটি-বিচ্যুতি হতেই পারে; গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্নমত থাকা বিচিত্র নয়। পৃথিবীর সব মানুষ একই মাজহাব, একই দল বা একই চিন্তাধারার অনুসারী হবেন এটি সম্ভব নয়।

এদিকে, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, ইন্টারনেট ও ব্লগে ডা: জাকির নায়েকের পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তর লেখালেখি শুরু হয়েছে; প্রকাশিত হয়েছে অনেক পুস্তিকা। পক্ষের লোকেরা বলছেন, তিনি ‘মুজাদ্দিদ’, ‘মুজতাহিদ’। বিপক্ষের লোকেরা বলছেন তিনি ‘খ্রিষ্টানদের এজেন্ট’, ‘ইহুদির দালাল’ ও ‘পথভ্রষ্ট’। আমাদের বিবেচনায়- দুটো মতই চরমপন্থা ও বাড়াবাড়ি। তিনি মুজাদ্দিদ বা মুজতাহিদও নন এবং খ্রিষ্টানদের এজেন্ট, ইহুদির দালাল বা পথভ্রষ্টও নন।

অন্য দিকে, তিনি মুফতিও নন এবং ফকিহও নন। তিনি মূলত মেডিক্যাল সার্জন, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের স্কলার ও ইসলামের দাওয়াতদাতা। যার যা প্রাপ্য তা তাকে দিতে কার্পণ্য করা উচিত নয়। পৃথিবীর যে প্রান্তে যিনি ইসলামের পক্ষে কাজ করবেন, তার কোনো ত্রুটি বা ভুল থাকলে আমরা শালীন ভাষা ও যুক্তিনির্ভর পন্থায় তা চিহ্নিত করবো; যাতে তিনি সংশোধনের সুযোগ লাভ করতে পারেন এবং সাধারণ মানুষও বিভ্রান্ত না হন। ভিন্নমতাবলম্বীরা নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। এ অধিকার সবার থাকা উচিত।

ডা: জাকির নায়েকের বক্তব্য, মন্তব্য ও উক্তি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা-সমালোচনার ফলে অনেক অজানা বিষয় পাঠকদের সামনে উদ্ভাসিত হবে। মতের যেমন ভিন্নমত থাকতে পারে, তেমনি ভিন্নমতের বিপরীতেও তৃতীয় মত থাকতে পারে। অ্যাকাডেমিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে মাত্রাজ্ঞানের সীমা যেন আমরা ছাড়িয়ে না যাই, সে দিকে লক্ষ রাখা জরুরি। প্রয়োজন উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও পক্ষপাতহীন পর্যবেক্ষণ।


মতের ভিন্নতা, সাধারণ বিষয়ে মতভেদ ও মাজহাবি বিরোধ নিয়ে আমরা মুসলমানেরা যুগে যুগে যেভাবে ভ্রাতৃঘাতী সঙ্ঘাত ও সহিংসতায় রক্ত ঝরিয়েছি, তা ইসলামের ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় স্মৃতি। মুফাস্সিরে কুরআন ইমাম ইবনু জারির আত-তাবারি রহ:-কে বাগদাদের গোরস্থানে দাফন করতে দেয়া হয়নি। ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ:-এর অনুসারী হবার দাবিদাররা এটা করেছেন। দামেস্কের মসজিদে উমাইয়াদের হাতে নির্মম পিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারান বিশ্ববরেণ্য মুহাদ্দিস ইমাম নাসাঈ রহ:।

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম বুখারি রহ:-কে মাতৃভূমি বুখারা থেকে বের করে দিয়েছিলেন তার স্বধর্মাবলম্বীরা। সরকারের সাথে যোগসাজশ করে হাফেজ ইবন তাইমিয়া রহ:-কে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন একশ্রেণীর ধর্মতত্ত্ববিদ। খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহ তথা সুন্নিদের শায়েস্তা করার জন্য মোঙ্গল নেতা হালাকু খানকে বাগদাদে ডেকে এনেছিলেন শিয়াপন্থি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ও তার লোকেরা। ফলে ধ্বংস হয়ে গেল সভ্যতার লীলাভূমি ঐতিহাসিক নগরী বাগদাদ; জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায় মুসলমানদের পাঁচ শ’ বছরের সমৃদ্ধ পাঠাগার ও লাখ লাখ গ্রন্থের পাণ্ডলিপি; মারা গেলেন বাগদাদ নগরীর ২০ লাখের মধ্যে ১৬ লাখ মানুষ। বর্তমান শতকের বিশ্ববরেণ্য স্কলার সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ:-এর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কিছুলোক আরবি ভাষায় বিরাট গ্রন্থ রচনা করেন। সর্বশেষ, আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ইসলামী আইনবিশেষজ্ঞ বিচারপতি মুফতি তকি ওসমানীকে হত্যা করার জন্য তার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করা হয় সম্প্রতি। তিনি বেঁচে গেলেও তার দেহরক্ষী প্রাণ হারালেন। কোনো কোনো ঘরানার এক শ্রেণীর মানুষ অন্যদের বিভ্রান্তরূপে চিহ্নিত করে ফতোয়া জারি করেন এবং বড় বড় গ্রন্থ রচনাসহ প্রচারণা চালিয়ে আসছেন বহুদিন ধরে।

অনেকে বিশেষত ইমাম আজম আবু হানিফা রহ:-এর প্রতি যে তীর্যক ভাষায় বিষোদগার করেন তা কেবল বেদনাদায়ক নয়, লজ্জাজনকও বটে। আবার এর জবাব দিতে গিয়েও আমরা সীমা লঙ্ঘন করে বসি। সঙ্কীর্ণতার দুষ্ট কীট উদারতার সম্ভাবনাকে করেছে দংশিত ও ছিন্নভিন্ন। উম্মাহর ঐক্যের পথে এ মনোবৃত্তি বিরাট অন্তরায়। আমরা নিজেদের দল, গোষ্ঠী, মত ও চিন্তাধারার নির্ধারিত গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি। বরং সঙ্কীর্ণতার বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়েছি। এতে নিজেদের দল ভারী হলেও মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছে বৈরী শক্তি।


ভারতের জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি হযরত মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানি (দা.বা.) বলেন, আমার দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে ডা: জাকির নায়েকের সাথে একমত নই। কিন্তু কোনো দিন শুনিনি, জাকির নায়েক সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছেন, সন্ত্রাসবাদে উসকানি দিয়েছেন অথবা বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। যদি তার বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে কোনো ব্যক্তি ভুল পদক্ষেপ নেয় তার জন্য তিনি দায়ী নন। ডা: নায়েকের বিরুদ্ধে যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করা হচ্ছে এর পেছনে রয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও বিদ্বেষপরায়ণ মহল। এগুলোকে কখনো সমর্থন করা যায় না’ এখানে দেখুন

উপমহাদেশের প্রখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবদুল খালেক মাদ্রাজি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ডা: জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে সরকার ও মিডিয়া যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে মুসলিম জনগণের জন্য এটি বেশ উদ্বেগজনক। দারুল উলুম স্পষ্ট করে বলতে চায়, ডা: নায়েকের সাথে দৃষ্টিভঙ্গিগত মতপার্থক্যের কারণে অতীতে যে ফতোয়া জারি করা হয়েছিল, সেটাকে যেন এই মুহূর্তে হাতিয়ার বানানো না হয়। ডা: জাকির নায়েকের সাথে আমাদের মতপার্থক্য আজো আছে। কিন্তু গোটা দুনিয়ায় তিনি ইসলামিক স্কলার হিসেবে পরিচিত। তিনি কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পৃক্ত নন। তাকে সরকার ও মিডিয়া যেভাবে অভিযুক্ত করছে, তা অপছন্দনীয়।’

ডা: জাকির নায়েক ২০১০ সালে বিশ্বখ্যাত আলেমে দ্বীন দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মুহাদ্দিস আল্লামা সাইয়েদ সালমান হুসাইনি নদভীকে International Islamic Conference Urdu 2010-এ আমন্ত্রণ জানান। এ কনফারেন্সে ডা: জাকির নায়েককে উদ্দেশ করে তিনি যা বলেছেন, তা নিম্নে উদ্বৃত করা হলো-

‘আমি জাকির ভাইকে বলব, মানবতার কল্যাণের জন্য এই মঞ্চকে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। এই মঞ্চ পারস্পরিক মতবিরোধ চর্চার জন্য নয়; মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ ঝগড়া-বিবাদের জন্যও তৈরি হয়নি এই প্লাটফর্ম। মুসলমানদেরকে দেওবন্দি-বেরলভি, শিয়া-সুন্নি, সালাফি-হানাফি, মুকাল্লিদ-গাইরে মুকাল্লিদসহ নানা উপদলে বিভক্ত করে দলাদলি করাও এর উদ্দেশ্য নয়। এখানে সর্বসম্মত মাসআলা নিয়ে আলোচনা হবে। জাকির সাহেবের বক্তব্যে কেউ যদি নারাজ হন, তবে প্রথমে জানতে হবে কোন ভুলের কারণে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন, ভুল যদি যৌক্তিক হয় তাকে তওবা করতে হবে। বিশ বছর ধরে তিনি আমার বন্ধু। তাকে বলব, মুফতি হবেন না, মুজতাহিদ হতে যাবেন না। আপনার কাজ ফতোয়া দেয়া নয়। নতুন মাসআলা জাতির সামনে পেশ করাও আপনার দায়িত্ব নয়। বিশ্বের সামনে ইসলামকে তুলে ধরুন। অমুসলিমদের কাছে পৌঁছে দিন ইসলামের মর্মবাণী। মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধগুলো সামাল দিন।

উম্মাহর ঐক্য অটুট রাখতে সহায়তা করুন। জাকির সাহেব কোনো ভুল করলে, তবেই তার সংশোধনের পদক্ষেপ নিন। কিন্তু উম্মাহর মধ্যে বিভেদের বীজ বপন করবেন না; ঐক্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। সত্য ও কল্যাণের প্রতি আহ্বান করার জন্য এই প্লাটফর্ম। এখান থেকে একতা ও ভালোবাসার দাওয়াত দিতে হবে। আমরা উম্মাহর মতবিরোধগুলোকে উসকে দেবো না। ইনশা আল্লাহ এই মঞ্চ থেকে শান্তির আওয়াজ শোনা যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মঞ্চ থেকে উপকৃত হবেন, ইউরোপের নেতৃবৃন্দও এই মঞ্চ থেকে উত্থিত আহ্বানে কান পাতবেন। জালিম পাবে জুলুম থেকে বাঁচার প্রেরণা। মজলুম মানুষেরা লাভ করবে সান্ত্বনা। এখান থেকে গোটা পৃথিবীকে কল্যাণের প্রতি আহ্বান করা হবে।

মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে উগ্রপন্থা ও অসহিষ্ণুতা মুসলমানদেরকে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। আল্লামা সাইয়েদ সালমান নদভীর ভাষায় বলব, ‘সব মতবিরোধকে পাশ কাটিয়ে আমরা একতার বন্ধনে আবদ্ধ হবো। আমরা বেশি বেশি আত্মসমালোচনা করব। সত্যপন্থী আলিম ও ইসলামের সব প্রতিনিধিকে ভালোবাসব। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ভালোবাসার এই আহ্বানে সাড়া দেয়ার তৌফিক এবং আমাদের হৃদয় থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা বের করে দিন।’

- সংগৃহিত

পঠিত : ৫৫৮ বার

মন্তব্য: ১

২০২০-০৬-২১ ১৩:৩৮

User
জোহেব শাহরিয়ার

আমাদেরকে দেখতে হবে ইসলামে এতোসব ফিরকার উৎপত্তি হলো কেনো? আমরা যখন কোরআন ও হাদিস থেকে বিচ্যুত হয়ে এর উপর নিজেদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া শুরু করলাম, তখন থেকেই ইসলামের এতোসব ফিরকা-দল-উপদলের উৎপত্তি হলো। তাই ঘুরে ফিরে একই কথায় আসতে হবে, কোরআন ও হাদিসের দিকে সকলে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। কোরআন ও হাদিসকে কোরআন ও হাদিসের ভাষায়ই ব্যাখ্যা করতে হবে, নিজের মনগড়াভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
আর সাধারণ মুসলিমদেরও সময় হয়েছে কারো কথাকেই একদম "আল্লাহ'র কালাম" না ভেবে এখন একটু পড়াশোনা করা ও কারো কথার সত্যতা কোরআন ও হাদিসের মানদন্ডে বিচার করে নেয়া।
তাহলেই কেবল সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

submit