Alapon

যা কিছু কালো তার সাথে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকা...


প্রথম আলো পত্রিকার নাম আমরা সবাই জানি। কিছুদিন আগে মেরিটিয়াল রেইপ এবং পিরিয়ডের ট্যাবু ভাঙ্গার নামে নির্লজ্জ দুটি প্রবন্ধ এরাই প্রকাশ করেছিল। এই পত্রিকাটার নামের সাথে আলো বাদ দিয়ে অন্ধকার শব্দটি ব্যবহার করা উচিৎ। লিবারেল মিশনারি হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং বিস্তৃত প্লাটফর্ম হবে এটি। এদের কুস্পর্শ আমাদের শিশুদের থেকে শুরু হয় এবং তাকে অশ্লিল জগতে প্রবেশ করিয়ে ক্ষান্ত হয়। আর প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার তৎপরতা তো আছেই। সব মিলিয়ে এর মত বিশাল লিবারেল ফ্লাটফর্ম আমার চোখে আর পড়ে না।

কিশোরদের জন্য রয়েছে তাদের "কিশোর আলো" নামে বিশাল ফ্লাটফর্ম। মূলত এটা একটা ম্যাগাজিনের নাম। উচ্চ কিংবা মধ্য ফ্যামিলির অনেক কিশোরকিশোরী এই ম্যাগাজিনের নিয়মিত পাঠক বলা যায়। ম্যাগাজিনটির টপিক খুবই বিস্তৃত। পড়াশোনা, বিনোদন, নৈতিকতা, ক্যারিয়ার সব কিছু নিয়ে তাদের আয়োজন। কিন্তু সবকিছুর মূলে এই ম্যাগাজিনে থাকে পাশ্চাত্য লিবারেল মূল্যবোধের ছড়াছড়ি। এমনকি এর প্রচ্ছদগুলোও করা হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে। প্রতিটি প্রচ্ছদেই একটি সুস্পষ্ট বার্তা থাকে। সেই বার্তা হতে পারে ফ্রি মিক্সিংয়ের, ফ্যামিনিজমের কিংবা অন্যকোন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির। ছবির মধ্য দিয়েই কিশোরকিশোরীদের মানসে এই বার্তা বদ্ধমূল হতে থাকে। আর ভিতরে মিষ্টিভাষী বিষমাখা লেখা তো আছেই।

ম্যাগাজিনটির কার্যক্রম কেবল রঙিন পাতাতেই সীমাবদ্ধ নয়। পাতা থেকে এদের কার্যক্রম ছড়িয়ে গেছে দেশের অনেক জেলায়। জায়গায় জায়গায় তারা কিশোর কিশোরীদের নিয়ে ক্লাব করে থাকে। সেই ক্লাবগুলোতে শিক্ষা ও ক্যারিয়ার শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। ট্যাবু ভাঙ্গার নামে সেখানে কিশোর কিশোরীদের পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য উৎসাহিত করা হয়। মুসলিম ছেলেমেয়েদেরকে একসাথে ফুটবল খেলার মাঠে নামানোর মত শরীয়াহবিরোধী কাজকে তাদের কাছে স্বাভাবিক করে তোলা হয়। ফ্রি মিক্সিং, নৃত্য সংগীতের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাভাবিক করে তোলা হয়। মোটকথা কিশোর কিশোরীদেরকে ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে পাশ্চাত্য মূল্যবোধে অভ্যস্ত করে তোলা হয়। আর ধর্মীয় অনুশাসনের ব্যাপারে উদাসীন বানানো হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, টেন মিনিট স্কুলের কিছু ট্রেইনারেরও এখানে অংশগ্রহণ থাকে, নানা আয়োজনে। তারা পরস্পরে নিজেদের এক্টিভিটি শেয়ার করে থাকে।

আর পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়ায় মুসলিমদের নিয়ে নিয়মিত প্রোপাগান্ডা ছড়ানোই যেন এদের মূল এজেন্ডা। এই যে তারা ইসলামী মূল্যবোধ গুলোতে আঘাত করে,শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানাবলীর বিরুদ্ধে তরুণদের উস্কে দিয়ে সর্বত্র পাশ্চাত্য লিবারেলিজম ও ফ্যামিনিজমের বিস্তার ঘটাচ্ছে এটার বিরুদ্ধে আপনি কথা বললে তাদের কাছে উগ্রবাদী হয়ে যাবেন। গত ১৮ তারিখ একজন লেখিকার কলামে তাই দাবি করা হচ্ছে। তারা পাশ্চাত্য বস্তাপচা সভ্যতার বিষ মুসলিমদের ঢুকিয়ে যাবে আর আপনি সেটাকে পাশ্চাত্যের দাসত্ব বললে হয়ে যাবেন চরমপন্থার দিকে আহবানকারী। মহান আল্লাহ তা'য়ালা সালাফদের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন, [১] তাদের পথের বিপরীত গেলে শাস্তির কথা বলেছেন, [২]আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম তিন যমানা তথা সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাবে তাবেয়ীদের যমানাকে সর্বশেষ্ঠ যুগ বলে আখ্যায়িত করেছেন,[৩] আমাদের ইমামরা সেই যমানাকে আমাদের মুক্তির সোপান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন,[৪] এখন আপনি যদি সালফে সালেহীনদের যমানার ইতিহাস শোনান, নিজেদেরকে তাদের অনুসরণে অভ্যস্ত করার আহবান জানান তাহলেও আপনি হয়ে যাবেন জঙ্গি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চলা মুসলিমদের নির্যানত নিয়েও আপনি সহমর্মিতা প্রকাশ ও উদ্বিগ্ন হতে পারবেন না। এটাও নাকি চরমপন্থা। এর আগেও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম আলো জঙ্গিবাদের আলামত নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। যেখানে হিজাব, সালাম মোসাফাহ, দাড়ি, টাকনুর উপর কাপড় পরিধান করা, মঙ্গলশোভাযাত্রাকে হিন্দুয়ানী কালচার ও শিরক মনে করা সহ সুস্পষ্ট ইসলামী বিধানগুলোকে উগ্রবাদের নিদর্শন হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে, তাদের কাছে ইসলাম মানেই কি উগ্রতা?

আপনি যদি এখনো মনে করেন এরা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় লিপ্ত না, বরং কেবল নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এদের কার্যক্রম তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। এরা কোন মুসলিমের উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ সে ইসলামের উপর থাকবে। এরা তখনই কোন মুসলিমকে মেনে নিবে যখন সে ইসলাম ছেড়ে লিবারেলিজম নামক ধর্মে দীক্ষিত হবে। ইসলামী সভ্যতাকে ছেড়ে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে গ্রহণ করে নিবে। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে "চরমপন্থা" শব্দটা মুসলিমদের বোকা বানানোর ঢাল মাত্র। ইসলামী শরীয়তের বিভিন্ন বিধানকে চরমপন্থা হিসেবে চিহ্নিত করে এরা মুসলিম তরুণদেরকে সেই বিধানগুলোর ব্যাপারে হীনমন্য করে তুলছে। যেন তরুণরা সেসব বিধান থেকে দুরে সড়ে আসে।সেসব বিধান পালন করতে তারা যেন ভীতু হয়ে বসে।

মুসলিমদের জন্য উচিৎ হবে না তাদের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হওয়া। হীনমন্যতায় না ভোগে আরো শক্ত হতে হবে আমাদের। তারা মহান আল্লাহর পবিত্র শরীয়তের যেসব বিধানকে চরমপন্থা বলে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে আমাদের দায়িত্ব হল সেই বিধানগুলোকে আরো মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা। আপোষহীনভাবে ইসলামের ট্রাডিশনাল অবস্থান তুলে ধরা। আপনি যদি কম্প্রোমাইজের পথকে বেছে নিন, তাহলে এই পথ আপনাকে দ্বীন থেকে বের করে ছাড়বে। মনে রাখবেন, ইসলামী ইতিহাসের যত পিছনে আপনি যাবেন ততই আপনি দ্বীনের গভীরে যেতে থাকবেন। আর এই ইতিহাসের সূত্র ধরে যত বর্তমানের দিকে এগোবেন দ্বীন থেকে আপনি ততই দুরে আসতে থাকবেন।সালাফদের পথেই রয়েছে পরবর্তীদের মুক্তি।

১) সূরা বাকারা-১৩৭, সূরা তাওবা-১০০
২) সূরা নিসা-১১৫
৩) সহীহ বোখারী- ২৬৫১, সহীহ মুসলিম- ২৫৩৪
৪) আশ শিফা- ২/৭১

পঠিত : ৪৫৬ বার

মন্তব্য: ১

২০২০-০৬-২১ ১৩:১২

User
জোহেব শাহরিয়ার

এদের এই বৃহৎ প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে আমাদেরও তৈরি করতে হবে বিশাল প্ল্যাটফর্ম যা ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে প্রোমোট করবে। হ্যা, ওদের মতো হয়তো বা বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তির প্রচ্ছন্ন সহায়তা আমরা পাবো না, কিন্তু ভূলে গেলে চলবে না যে আমাদের হাতে রয়েছে বিশাল বড় অনলাইন মিডিয়া। একে কাজে লাগিয়েই আমরাও বৃহৎ ইসলামিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারি। শুধু দরকার একটু সদিচ্ছা ও একতাবদ্ধতার। আমরা আল্লাহ'র রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে একতাবদ্ধ হয়ে আজ থেকেই যদি কাজ শুরু করি, তবে ধ্বংস কিছুটা হলেও থামানো যাবে। না হয় পরে এমন এক সময় আসবে, যখন আমাদের নিজেদের হাত কামড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

submit