Alapon

LGBTQ তথা সমকামী কর্মতৎপরতার পথপরিক্রমা...


এলজিবিটিকিউ প্লাস টার্মটি একটি লুজ আম্রেলা টার্ম। এর দ্বারা এমন সংগঠনকে নির্দেশ করা হয়, যারা স্থির নয়। মানে তারা ক্ষণস্থায়ী সংগঠন। এসব সংগঠন লক্ষ্য অর্জনের পর তাদের পরিসমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ এখানে এমন সব লোক লোক সমবেত হয় যারা নিজেদের সমাজের বিদ্যমান ধারার (Strait) সাথে আইডেন্টিফাই করে না। এবং যারা নিজেদেরকে Syst Gender সাথেও আইডেন্টিফাই করে না। অর্থাৎ, তারা জন্মগতভাবে যে লিঙ্গের ওপর জন্মেছে তার সাথে নিজেদের আইডেন্টিফাই করে না। সুতরাং কেউ যদি স্ট্রেট না হয়, সিস্ট জেন্ডার না হয়, তবে সে অটোমেটিক্যালি এলজিবিটিকিউ প্লাসের অন্তর্ভুক্ত। প্লাস মানে এখানে অনেকগুলো আইডেন্টিটি রয়েছে। তাদের পঁচিশেরও বেশি আইডেনটিটি রয়েছে। সবকটি বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। আজ মূলত হোমোসেক্সুয়ালিটি নিয়ে আলোচনা করব।

আমরা যদি সত্যিকারে এলজিবিটি মুভমেন্টের পথ পরিক্রমা বুঝতে চাই, তবে আমাদের এ মুভমেন্টের ইতিহাস পড়তে হবে। আমাদের জানতে হবে, কীভাবে এক প্রজন্মের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়েছে। যাদের বয়স ত্রিশের উপরে, তারা জানেন আমি কী বলছি। যাদের বয়স বিশের নিচে তারা হয়তো জানবেন না। এখানে যারা বাস করেন; যাদের বয়স চল্লিশ পঞ্চাশ, বিশেষ করে ষাটের অধিক তারা জানেন পরিস্থিতি কিভাবে রাত দিনের মতো পরিবর্তন হয়ে গেছে। একটি লাইফটাইমের মধ্যেই। আমরা তাদের প্রতি কেমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি, সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু যে কোনো সোশ্যাল মুভমেন্টের চেয়ে এটা সবচেয়ে বেশি সফলতা লাভ করেছে। আমরা এটাকে ভালো কী মন্দ মনে করি সেটা বলছি না। আমি বলছি, একটি জেনারেশনের মধ্যে তারা র্যাডিক্যাল সফলতা লাভ করেছে। সিভিল রাইট আইন সফলতা পেতে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হতে দীর্ঘ সময় বয়ে গেছে। আমরা কি বিশ্বাস করি সেটাকে একপাশে রেখে মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে, এই মুভমেন্ট বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করেছে একটি প্রজন্মের মধ্যে। আর কোন মুভমেন্ট এর মতো এত দ্রুত সফলতা লাভ করেনি।

আমরা যারা এই বিষয়ে কথা বলতে চাই, আমাদের গবেষণা করা উচিৎ পরিস্থিতি কিভাবে এত দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ দেশের প্রত্যেকটি স্ট্যাটে সমকামিতা ক্রাইম হিসেবে পরিগণিত ছিল। প্রতিটি ইউরোপীয় দেশে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু কীভাবে এক প্রজন্মের মধ্যে এই দ্রুত পরিবর্তন ঘটল। একসময় সর্বসম্মতিক্রমে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল। কিন্তু এখন এ ইতিহাস উদ্ধৃত করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা কিভাবে ঘটেছে?

এলজিবিটি মুভমেন্টের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উল্লেখ করব। অধিকাংশ মর্ডান হিস্টোরিয়ানরা ১৯৬৯ সালের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এটা স্টোনওয়াল রায়ট নামে প্রসিদ্ধ। সেখানে মদের বার ছিল এবং এলজিবিটি এর সদস্যরা যাতায়াত করত। সেখানে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। স্টোনওয়ালের লোকজন পুলিশকে পাল্টা আক্রমণ করে। তারা বলে, আমাদের বাধা দেয়ার কোন অধিকার তোমাদের নেই। এটা নিউইয়র্ক অবস্থিত।

বিবেচনা করা হয় এর ফলে এলজিবিটি অ্যাডভোকেসি মুভমেন্ট শুরু হয়। এই প্রথম সমাজের বিদ্যমান ধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি (status quo) পরিবর্তনের প্রচেষ্টা শুরু করে। অবশ্য এর বিরুদ্ধে অনেক প্রতিরোধ হয়েছে সত্তর-আশির দশকে। এলজিবিটি মুভমেন্ট অনেক মেথডোলজি প্রণয়ন করে। এডভোকেসি গ্রুপ খোলে। এরমধ্যে প্রসিদ্ধ গ্রুপ হলো গ্লাড (Glaad)। নর্থ আমেরিকায় ১৯৮৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

আশির দশকে তারা ফ্রন্টলাইনে চলে আসে; রাজনীতিবিদ ও অভিনেতারা এর সাথে সংযুক্ত হতে শুরু করে। ১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এই ইস্যুতে কথা বলেন। সংসদ সদস্যরা করতালির মাধ্যমে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান। লক্ষ করুন, তখনও এর প্রতি ইংল্যান্ডের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক ছিল। আমি মার্গারেট থ্যচারের ভক্ত নই। তাকে সমর্থন বা তার বিরোধিতা কোনোটাই করছি না, জাস্ট ঘটনাটি বর্ণনা করছি।

প্রধানমন্ত্রী স্কুলে হোমোসেক্সুয়ালিটির প্রসার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বিরক্ত হন, বিক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, এটা আমাদের সন্তানদের জন্য ভালো নয়। সংসদ সদস্যরা জোর করতালি দিয়ে তা সমর্থন করেন। তাদের অভিব্যক্তি ছিল, ফাইনালি আমরা শক্ত অবস্থান নিয়েছি।

এটা ১৯৮৭ সালের ঘটনা। আমি কেবল সত্যটা তুলে ধরছি। লক্ষ করুন, বিশ বছরের মধ্যে কি ঘটে গেছে! এখন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, অখ্যাত কোনো অভিনেতাও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করবে না। ১৯৮৭ সালে সেকশন 28 নামে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট আইন পাস হয়। লোকাল অথরিটি, স্কুল অথরিটি সমকামী লাইফস্টাইল নিষিদ্ধ করে। এ আইন বাতিল করা হয় ২০০৩ সালে।

১৯৮৭ সালে এলজিবিটি এডভোকেসি গ্রুপের দুইজন ইন্টেলেকচুয়াল চিন্তক সদস্য, একজন হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট, নিউরো সাইকিয়াট্রিস্ট মার্শাল ক্যানিথ ক্রিক, অন্যজন এডভার্টাইজিং এক্সপার্ট হান্টার ম্যাডসন। তারা দুজনে সম্মিলিতভাবে একটি বই লেখেন, After Ball : How America Will Conquer its Fear and Hatred of Gays in the 90's. এটা অ্যামাজনের পাওয়া যায়।

হে মুসলিমরা, এটা কন্সপিরেসি থিওরি নয়। এটা ইলুমিনাতির মতো কিছু নয় যে, অন্ধকার রুমে অবতরণ করে সব সম্পন্ন করে ফেলেছে। তাদের ছিল স্ট্রাটেজিক প্ল্যান। আপনি যদি কোন কিছু অর্জন করতে চান, তবে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, একটি প্লান তৈরি তৈরি করতে হবে, তার জন্য কাজ করতে হবে, প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

হে মুসলিমরা, কন্সপিরেসি থিওরি বিশ্বাস করা বন্ধ করুন। আমি খুশি হতাম মুসলিমরা যদি ইসলামিক পিআর-এর জন্য এমন সফলতা অর্জন করতে পারত। মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হোন, ইসলামের জন্য কাজ করুন।

তাদের একদল চিন্ত্যক একসাথ হয়েছিল। তারা স্ট্রাটেজিক প্ল্যান তৈরি করেছে এবং তা প্রকাশ করেছে। অ্যামাজনে এভেলেবেল। তাদের লক্ষ্য কী ছিল? তাহলো বইয়ের সাবটাইটেল, আমেরিকা কীভাবে নব্বই-এর দশকে সমকামীদের প্রতি লালিত ঘৃণা ও ভয় জয় করবে।

তারা ছয়টি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারা বলে, এটা এবার সবাই শুরু করো।

এক. সব সময় সমকামী আইডেন্টিটি, সমকামিতা সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব স্পষ্ট ও উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে হবে। এটাকে মেইনস্ট্রিমে পরিণত করতে হবে। এটা স্বাভাবিক করে তুলতে হবে। সমকামিতা যেন কনভারসেশনে পরিণত হয়।

দুই. এলজিবিটি মুভমেন্টের সদস্যদের ভিকটিম হিসেবে উপস্থাপন করুন। তাদের এমন করে উপস্থাপন করুন যারা status quo ( সমাজের বিদ্যমান অবস্থা) পরিবর্তন করতে চায় না। বরং তাদের এমন করে চিত্রিত করুন,যেন তারা সমাজের ঘৃণার শিকার।

তিন. যারা এলজিবিটির জন্য কাজ করছে তাদের সুপার হিরো হিসেবে উপস্থাপন করুন। তাদের সিভিল রাইট ফাইটার্সের মর্যাদা দান করুক। তাদের এমনভাবে উপস্থাপন করুন যাতে মনে হয়, তারা ন্যায়ানুগ অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে।

চার. মিডিয়ায় এলজিবিটি সদস্যদের চমৎকার, হ্যান্ডসাম ও চিন্তাশীল হিসেবে উপস্থাপন করুন। তাদের মেইনস্ট্রিম ও সম্মানিত হিসেবে উপস্থাপন করুন।

পাঁচ. এটা ঠিক বিপরীত। যারা তাদের সমালোচনা করে, তাদের টিটকারী করে, তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে; তাদেরকে নির্বোধ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। তাদের বর্বর ও অসহিষ্ণু হিসেবে চিত্রিত করতে হবে। এলজিবিটি সদস্যদের এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যাতে তাদের ভালো এবং এর বিরোধিতাকারীদের খারাপ হিসাবে চিত্রায়ণ করা যায়।

ছয়. যাদের থেকে থেকে কর্পোরেট ফান্ডিং পাওয়া যাবে তাদের আক্রমণ করা যাবে না।

মূল- ড. ইয়াসির ক্বাদী
অনুবাদ- মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পঠিত : ৫৯০ বার

মন্তব্য: ০