Alapon

ড. আবু বকর জাকারিয়া এবং কিছু জানা ও অজানা কথা...


বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত টপিক ড. আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া সাহেব। অবশ্য তিনি কোনো কিছু অর্জন বা বিশেষ আবিষ্কারের জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হননি। বরং তিনি একটি বিশেষ তফসির গ্রন্থ পড়তে নিষেধ করেছিলেন, বলেছিলেন- এই তফসিরে সমস্যা আছে। এমনকি এই তফসিরের লেখকের আকীদাতেও সমস্যা আছে। তাই এই লেখকের সমস্ত বই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে হবে।

জাকারিয়া সাহেব নিজেই এই বক্তব্য দেওয়ার পর দেখা গেল, তিনি যে ‘তাফসীরে জাকারিয়া’ রচনা করেছেন, সেখানে সেই বিশেষ তফসিরের উল্লেখযোগ্য অংশ সংযুক্ত করেছেন। আরও মজার বিষয় তিনি কোনো রেফারেন্স ছাড়াই সেই তফসিরের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসহ নিজের তফসিরে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এখানে প্রশ্ন হল দুটি। প্রথম প্রশ্ন, সেই তফসিরে যদি আকীদাগত সমস্যাই থাকবে তাহলে তিনি কেন নিজের তফসিরে সেই বিশেষ তফসিরের ব্যাখ্যা সংযুক্ত করলেন। তাহলে কি ধরে নিবো জাকারিয়া সাহেব এই তফসীরের রচয়িতা নয়? অন্য কেউ লিখেছে এবং সেখানে শুধু লেখকের স্থানে ড. আবু বকর জাকারিয়া আর তফসিরের নাম ‘তাফসীরে জাকারিয়া’ ব্যবহার করা হয়েছে। তাও যদি হয়, তাহলে জাকারিয়া সাহেব নিশ্চয়ই অন্তত একবার তফসিরটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণ মনোযোগের সাথে পাঠ করেছেন। আর পাঠ করার পরও তিনি বুঝতে পারেননি, এখানে সেই বিশেষ তফসির অর্থাৎ তাফহিমুল কুরআনের ব্যাখ্যার অংশ বিশেষ সংযুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু রেফারেন্স হিসেবে সেখানে তাফহিমুল কুরআন বা এই তফসিরের লেখক সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী সাহেবের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তাই জাকারিয়া সাহেব উক্ত অংশে কোনো আকীদাগত সমস্যা খুঁজে পাননি। কিন্তু সেখানে যদি তাফহিমুল কুরআন বা মওদূদী সাহেবের নাম উল্লেখ থাকতো তাহলে হয়তো আকীদাগত সমস্যা পাওয়া যেত!

উপরোক্ত কথাই যদি সত্য বলে ধরে নেই, তাহলে এ কথা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই যে, ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেব মওলানা মওদূদী সাহেবের তফসির বা কোনো গ্রন্থই পড়েননি। আর না পড়েই তিনি বলেছেন, মওদূদী সাহেবের আকীদায় বিভ্রান্তি আছে। তার রচিত তফসিরে আকীদাগত সমস্যা আছে। আর সেকারণে মওদূদী সাহেবের সমস্ত বই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে।

ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেব যে স্পষ্টত প্রতিহিংসা থেকে এই বক্তব্য প্রদান করেছেন, তা তিনি নিজেই প্রমাণ দিলেন। জাকারিয়া সাহেব নিজেই বললেন, তাফহিমুল কুরআন তফসির গ্রন্থে আকীদাগত সমস্যা আছে। আবার তিনি নিজের নামে রচিত তফসিরে তাফহিমুল কুরআনের ব্যাখ্যাগুলো দাড়ি-কমা সেমিকোলনসহ উল্লেখ করেছেন। শুধু রেফারেন্স-এর জায়গায় তাফহিমুল কুরআন বা লেখক হিসেবে সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী সাহেবের নাম উল্লেখ করেননি।

প্রতিহিংসার কারণ?

এই প্রতিহিংসার কারণ অবশ্য ছোটখাটো কোনো কারণ নয়। এই কারণটা দেশিয় বা ব্যক্তিগত কারণও নয়। বরঞ্চ বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ হিসেবে আল সৌদ তথা সৌদি রাজপরিবারের সমর্থক হিসেবে একইসাথে রাজতন্ত্রের সমর্থক সালাফি মানহাজের অনুসারি হিসেবে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। যতদূর জানা যায়, জাকারিয়া সাহেব সৌদি আরবে পড়াশোনাকালীন অবস্থায় জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এমনকি দেশে ফেরার পর ২০০৫ সালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট-এ অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলনেও ড. জাকারিয়া সাহেবকে দেখা গিয়েছিল। এরপর ২০০৬ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পরও জাকারিয়া সাহেব জামায়াতের রাজনীতির সাথে একটিভ ছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জাকারিয়া সাহেবের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক দুর্বল হতে থাকে।

এরপর ২০১১ সালে আসে আরব বসন্ত। আর আরব বসন্তের পরপরই সৌদি রাজপরিবার পলিটিক্যাল ইসলামের বিরুদ্ধে স্পষ্টত অবস্থান গ্রহণ করে। আর তাদের এই অবস্থানকে ইসলামাইমেজন করার জন্য তারা গ্লোবালি কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। আর এই উদ্যোগের পিছনে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করতে থাকে। আর বাংলাদেশে সেই ডলারের প্রধান আমদানিকারক হিসেবে ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেবের নামই শোনা যায়। আর জামায়াত ইসলামি যেহেতু বাংলাদেশে পলিটিক্যাল ইসলামের নেতৃত্ব প্রদান করছে, তাই জাকারিয়া সাহেব প্রথম থেকেই জামায়াত ইসলাম এবং মওদূদী সাহেবকে টার্গেট করে। আর এটাই জাকারিয়া সাহেবসহ তার অনুসারীদের তাফহিমুল কুরআন ও মওদূদী সাহেবের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ন হবার প্রধান ও একমাত্র কারণ।

পরিশেষে একটা ছোট্ট কথা বলি। হযরত উমর রা. বলেছিলেন, জ্ঞানীর স্তর তিনটি। যে জ্ঞানের প্রথম স্তরে প্রবেশ করে সে হয় অহংকারি। যে জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করে, সে তখন নিজের অজ্ঞতা বুঝতে পারে। আর যে জ্ঞানের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করে, সে তখন নিজের অজ্ঞতা বোঝার পাশাপাশি বিনয়ী হয়।

ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেব বর্তমান সময়ের তরুনদের জন্য জ্ঞান ও জ্ঞানীর কোন দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন, তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।

পঠিত : ৮৭৮ বার

মন্তব্য: ০