Alapon

অতি স্মার্ট হতে গিয়ে নিজেকে নির্লজ্জ বানাচ্ছেন না তো...?


আমি তখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি। তখন মাঝে মাঝেই আমাদের স্কুল মাঠে সরকারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক নাটক দেখানো হতো। আর আমরা সেটাকে বলতাম ‘বায়োস্কোপ’।

এরকম একবার স্কুল মাঠে বায়োস্কোপ দেখানো হবে। আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে বায়োস্কোপ দেখতে গেলাম। তখন সম্ভবত বিশ্বজুড়ে এইডস প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি করা হচ্ছিল। সেই বায়োস্কোপে দেখানো হল, এক ব্যক্তি বিদেশে কাজ করতে যায়। সেখানে তার পরিচিত বন্ধুরা তাকে একদিন এক বিশেষ জায়গায় নিয়ে যায়। আলো-আধারী সে জায়গায় স্বল্প বসনা নারীদের মেলা। তাকে একটা রুমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তারপর ক্যামেরা ক্লোজ করে দেয়।

এরপর সেই লোকের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। তারপর তাকে ডাক্তার খানায় নেওয়া হলে বেশ কিছু টেস্ট করানো হয়। টেস্ট করার পর দেখা গেল, সে এইডস রোগে আক্রান্ত। তখন প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল, তার এইডস হল কীভাবে?
তখন সে বলল, বিদেশে আসার পর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সে মাঝে মাঝেই পতিতালয়ে যাতায়াত করত। তখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করল, মিলনের সময় আপনি কি কনডম ব্যবহার করতেন না?
সেই লোক বলে, না। আমি কনডম ব্যবহার করিনি।
তখন ডাক্তার বলে, তখন আপনি যদি কনডম ব্যবহার করতেন তাহলে আজকে আপনাকে এই মরণঘাতি রোগ এইডস আক্রান্ত করতে পারতো না।

সেই বায়োস্কোপের মোরাল অব দ্য স্টোরি ছিল, যার সাথে যৌন মিলন করুন না কেন, মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করুন। তাহলেই আপনি নিরাপদ।

প্রথম বিষয় তখন আমরা আসলে কেউই জানতাম না, ‘কনডম’ মানে কী! আমাদের মাথায় এই ব্যাপারটা জানার জন্য তুমুল আগ্রহ জেগে উঠল। দ্বিতীয়ত তখন আজকের মত এতো ফ্রি মিক্সিং ছিল না, ছিল না অবাধ যৌনতাও। কিন্তু বাংলাদেশে এইডসের প্রাদুর্ভাব না থাকলেও গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্জলে যেভাবে কনডম ও যৌন মিলনের বিজ্ঞাপন করে বেড়িয়েছে, যার পরিণতিতে বাংলাদেশেও অবাধ যৌনতা ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি।

আজ থেকে ১৫ বছর আগে তারা যে প্রচারণা চালিয়েছে, আজ তার ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, অতি সম্প্রতি কতিপয় অনলাইন সেলিব্রেটি নারী সম্পর্কিত ট্যাবু ভাঙ্গার আওয়াজন তুলেছেন। তারা নারীর অন্তর্বাস আর ঋতু বা পিরিয়ডকে ট্যাবু বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। ট্যাবু শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ বিষয়। অর্থাৎ এমন একটি বিষয় যে বিষয়ে কথা বললে সমাজের চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয়। আর এই অনলাইন সেলিব্রেটিরা বলছেন, পিরিয়ড একটা ট্যাবু। আর ট্যাবু ভাঙতে হবে এবং কোনো ধরণের সংকোচ ও লজ্জা ছাড়াই এটা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করতে হবে। কারণ, পিরিয়ড ট্যাবু হওয়ার কারণে নারীরা এ সংক্রান্ত সচেতন হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। তাই এই ট্যাবু ভেঙে ফেলতে হবে এবং নারীদের সচেতন করতে হবে।

আচ্ছা যারা এটাকে ট্যাবু প্রমাণ করতে চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যে দুটো কথা বলি। খুব বেশি দূরে নজর দেওয়ার দরকার নেই। আপনার নিজের ঘরের দিকেই তাকান। আপনার ঘরেও তো দাদী, নানী, মা, ফুফু আছে যারা বৃদ্ধা হয়ে গেছেন। তারাও তো ঋতুবতি হয়েছিলেন, তারা কি তখন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন? তাদের কি এটা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করতে হয়েছে? কিংবা আপনি তো ঘরের ছেলে, আপনি কি কখনো তাদের হাতে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেখেছেন? হাতে না দেখেন, ঘরে কখনো দেখেছেন? দেখেননি। আমিও দেখিনি। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কি স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করার কারণে এ সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে? যায়নি। আমার দেখাও এমন কাউকে দেখিনি, যিনি পিরিয়ড সংক্রান্ত কোনো রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তারপরও এই পিরিয়ডকে উন্মুক্ত আলোচনার বিষয়ে পরিণত করতে চাওয়ার মূল উদ্দেশ্য কী?

এর মূল উদ্দেশ্যে লজ্জাহীণতা করা। আর একটি সমাজ যদি লজ্জাহীণতায় পরিণত হয় তবে সেখানকার পরিবার ও সামাজিক অবস্থা কতটা ভয়ানক রূপ ধারণ করে তা আমরা পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থার দিকে তাকালেই বুঝতে পারব। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও পশ্চিমারা রক্ষণশীল জীবন-যাপন করতো। পশ্চিমা সমাজে আজ যতোটা ফ্রি মিক্সিং ও অবাধ যৌনাচার দেখা যায়, তখন সেটা ছিল না। তারাও এই কাজকে ঘৃণার চোখে দেখত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন পুরুষদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমে গেল এবং নারীরা অফিস ও কলকারখানার কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ল তখন নারী স্বাধীনতার আওয়াজ তোলা হয়। সেই নারী স্বাধীনতার আওয়াজ তুলে সেখানে যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙ্গে কেবল স্বামী-স্ত্রীকে নিয়ে পরিবার গড়ে উঠতে শুরু করে। তারপর একসময় পরিবার ব্যবস্থাটাই শীথিল হয়ে যায় এবং মানুষ লজ্জা ভুলে অবাধ যৌনতার দিকে হাটতে শুরু করে।

ঠিক একইভাবে বাংলাদেশেও এসব ট্যাবু ভাঙ্গার আওয়াজ তুলে আমাদের তরুণ ভাই-বোনদের লজ্জাহীণতার দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর যদি একবার বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় এই লজ্জাহীণতার আবাদ করা যায়, তবে এখানেও পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে সময় লাগবে না। তখন মানুষ বিবাহবর্হিভূত শষ্যাসঙ্গি হতে বিন্দুমাত্র আপত্তি করবে না। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাদের প্রথম পদক্ষেপ হল লজ্জাহীণ করা।

আর ইসলাম বলছে, ‘লজ্জাশীলতা ইসলামের একটি স্বভাব।’ (সহীহ আততারগীব, হাঃ-২৬৩২, মিশকাত, হাঃ-৫০৯০)

আল্লাহর রাসূল সা. আরও বলছেন, ‘লজ্জাশীলতা পূণ্য ও কল্যান ব্যতীত আর কিছুই আনয়ন করে না।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, হাঃ-৫০৭১)

আর লজ্জাহীণতা অকল্যাণ ছাড়া আর কিছুই আনয়ন করে না। তাই অতি স্মার্ট হতে গিয়ে নিজেকে লজ্জাহীণতায় পর্যবসিত করতে যাবেন না।

পঠিত : ৩৫২ বার

মন্তব্য: ০