Alapon

বিচক্ষণতা : সফল ও শ্রেষ্ঠ মানুষের উন্নতির সোপান...


অনেকেই মনে করে, যে ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য করে অল্পসময়ের ব্যবধানে প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, সেই বুঝি বিচক্ষণ ব্যক্তি! মূলত বিচক্ষণ কথাটি আমরা হর হামেশা শুনে থাকি কিন্তু বিচক্ষণ মানুষের চেহারা-চরিত্র কেমন তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। বিচক্ষণতাকে ইংরেজিতে বলে Discretion. উপস্থিত বুদ্ধিতে চৌকশ ছাত্রদেরকে অনেকেই বিচক্ষণ বলে ভুল করে থাকে। মূলত তাদেরকে বলা হয়, 'প্রত্যুৎপন্নমতি' সম্পন্ন ছাত্র! বিচক্ষণতা তার চেয়েও অগ্রগামী গুণাবলী নাম।

বিচক্ষণ মানুষের অন্যতম গুণাবলী হল তারা যে কোন পরিবেশে নিজেদের মেজাজ ঠাণ্ডা রাখে এবং বলার চেয়ে শোনা ও জানার প্রতি গুরুত্ব দেয় বেশী। যে কথাটি বলে সেটি অন্য জনের দশ কথার চেয়েও ভারী হয়। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানেই বিচক্ষণ মানুষের প্রশংসা করা হয়েছে। যারা সৃষ্টির নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা-গবেষণা করে, পবিত্র কোরআনে তাদেরকেই বিচক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন, "আমি সেই জনপদটি ওলট পালট করে রেখে দিলাম আর তাদের ওপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করলাম। প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ লোকদের জন্য এ ঘটনার মধ্যে বিরাট নিদর্শন রয়েছে" (হিজর-৭৪-৭৫)। বিচক্ষণ মানুষ তার সতর্ক দৃষ্টির কারণে সহজে আক্রান্ত হয়না বরং শত্রুকেই তিনি নানা উপাদানে ব্যস্ত রাখতে পারেন! কেননা বিচক্ষণ মানুষ জানার ক্ষেত্রে শুধু নিজের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা, প্রতিপক্ষ সম্পর্কে আরো বেশী সতর্ক থাকে। এই বিষয়টি পরিষ্কার অনুধাবন করার জন্য দুনিয়ার একটি চিত্রকে সামনে রাখা যায়।

আমরা কখনও আকর্ষণীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা হতে দেখি। বিতর্কে তিনিই জয়ের মালা ছিনিয়ে আনতে পারে, যিনি নিজের পক্ষের যুক্তি সম্পর্কে সজাগ তো থাকেই, প্রতিপক্ষের প্রস্তুতি ও তথ্যের সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকেন। দলীয় পক্ষের বক্তা অনেকগুলো পয়েন্ট ছুড়ে দিয়ে, সুন্দরভাবে বক্তব্য যখন শেষ করে, তখন তিনি করতালির মাধ্যমে সম্মানিত হন। বিপরীত দিকে যে বক্তা নিজের কথা গুছিয়ে বলে, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সবল উত্তর দিতে থাকে, তখন বক্তব্যের মধ্য থেকেই করতালি শুরু হয়। বক্তা যখন প্রতিপক্ষের ভুল তথ্যের উপর আঘাত হেনে তাদের ব্যস্ত রাখতে বাধ্য করে, তখন তুমুল করতালি চলতে থাকে। একটি বিতর্ক সভার অংশগ্রহণকারীরা সবাই প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্ন কিন্তু একজন বিচক্ষণ বক্তা নিমেষেই পুরো পরিবেশকে তার মুখি করে ফেলতে পারে। বিচক্ষণ ব্যক্তি খুব দ্রুততম সময়ে সমস্যার ভিতরে যেতে পারে এবং ততোধিক গতিতে করণীয় ঠিক করতে পারে। বিচক্ষণ ব্যক্তি সমস্যাকে এড়িয়ে চলে না বরং সমস্যার উৎস ও গভীরতা দিকে মনোযোগী হয়। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব যখন বিচক্ষণ ব্যক্তির হাতে যায়, তিনিও মেরুদণ্ড ভাঙ্গা জাতির কোমর সোজা করে ফেলতে পারেন।

কারো কাছে যদি শুধু বিচক্ষণতা নামক একটি গুন থাকে, তাহলে সে পৃথিবীতে ভাগ্যবান ব্যক্তিদের অন্যতম! একদা রাসুল (সা) একটি গুণবাচক শব্দের মাধ্যমে তাঁর অতি কাছের সাহাবীদের মূল্যায়ন করছিলেন, তিনি বললেন, ... আবুবকর দয়ার্দ্র, ওমর দ্বীনের ব্যাপারে অনমনীয়, ওসমান লজ্জাশীল ব্যক্তি আর আলী হল সর্বাধিক বিচক্ষণ বিচারক!" মুসলিম-২৪১৯। অথচ রাসুল (সা) অন্যত্র বলেছিলেন, 'আমি যদি জ্ঞানের সাগর হই তাহলে আলী হল তার দরজা'। সেই আলীকে তিনি বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

অধ্যবসায়ী মানুষ বিচক্ষণতা অর্জন করতে পারে। পরিষ্কার ধর্মীয় জ্ঞান, সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, যুক্তিবিদ্যা, অংক শাস্ত্র ও ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান করতে থাকলে মানুষ ধীরে-সুস্থে বিচক্ষণতা অর্জন করতে থাকে। সে কারণে, অল্পশিক্ষিত বিচক্ষণ মানুষের কদরও সকল সমাজেই সর্বোচ্চ। মানুষ বিচক্ষণ হতে ইচ্ছে করলে, তাকে অনেক অনেক পড়তে হয়, জানতে হয় বেশী করে এবং গন মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, জীবন চরিতকে কাছে থেকেই উপলব্ধি করতে হয়। তবেই তিনি বিচক্ষণতার কাছাকাছি পৌছতে পারে। তাই চলুন বেশী বেশী করে অধ্যয়ন করি এবং নিজেদের জ্ঞানকে স্বচ্ছ করি।

- নজরুল ইসলাম

পঠিত : ৪৬৬ বার

মন্তব্য: ০