Alapon

মসজিদের জন্য আমাদের যা যা করণীয়...


মসজিদ শুধু মুসলমানের ‘উপাসনালয়’ নয়, বরং তা ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও মুসলিম সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র। ইসলামের সোনালি যুগে মসজিদ থেকে পরিচালিত হতো ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের যাবতীয় কাজ।

মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় জীবনে মসজিদের প্রভাব অপরিসীম। মুসলিম সমাজের জ্ঞানচর্চা, ধর্মীয় অনুশীলন থেকে শুরু করে সামাজিক ঐক্য ও সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের অনেকটাই মসজিদের ওপর নির্ভরশীল। তাই মসজিদকে প্রাণবন্ত ও সজীব রাখার দায়িত্বও ইসলাম মুসলমানের ওপর অর্পণ করেছে।


মসজিদের ভিত্তি হবে খোদাভীতি


আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও মুসলমানের প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যেই মসজিদ নির্মিত হবে। সুনাম, সুখ্যাতি ও অসুস্থ সামাজিক প্রতিযোগিতার কারণে মসজিদ নির্মাণ উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর স্থাপিত, সেটিই আপনার নামাজের জন্য বেশি উপযোগী...।’ (সুরা : তওবা, আয়াত : ১০৮)


মসজিদ নির্মাণ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ জান্নাতেও তার জন্য অনুরূপ ঘর নির্মাণ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৫০)

মসজিদ নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা নিন্দনীয়। মহল্লাগত ও বংশীয় বিবাদের জেরে রক্ষণাবেক্ষণের সামর্থ্য না থাকার পরও মসজিদ নির্মাণ করা অনুচিত। গ্রামাঞ্চলে এর প্রবণতা বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মানুষ মসজিদ নিয়ে অহংকারে লিপ্ত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৯)

শিরক-বিদআত মুক্ত থাকবে মসজিদ

প্রতিটি মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিনি কাজই শুধু সেখানে অনুমোদিত। ইসলামী শরিয়তবিরোধী এবং ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ মসজিদে করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে ডেকো না।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১৮)

যথাসম্ভব মসজিদ আবাদ রাখতে হবে

মসজিদ তালাবদ্ধ করে রাখার জন্য নয়; বরং আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাকে প্রাণবন্ত করে রাখতে হবে। ইসলামের সোনালি যুগে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক বিচার ও যুদ্ধের পরামর্শ পর্যন্ত সব কাজ মসজিদে অনুষ্ঠিত হতো। মসজিদে নববী ছিল মহানবী (সা.)-এর সচিবালয়ের মতো। এ জন্য কোরআনে মসজিদের ব্যাপারে ‘আবাদ’ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মসজিদ আবাদ করবে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।’ (সুরা : তওবা, আয়াত : ১৮)

মসজিদের সুন্দর নাম রাখা

মসজিদের নাম সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। যা শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ হবে। মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা, বায়তুল মামুর ইত্যাদি নামের ভেতর যেসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। তবে স্থান ও ব্যক্তির নাম অনুযায়ী মসজিদের নামকরণও বৈধ। যেমন—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এই মসজিদে এক নামাজ পড়া অন্য মসজিদে এক হাজার নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম। তবে মসজিদুল হারামের কথা ভিন্ন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪০৬)

সবার জন্য উন্মুক্ত হবে মসজিদ

মসজিদ আল্লাহর ঘর। তা আল্লাহর সব শ্রেণির বান্দার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে তারা নির্বিঘ্নে ইবাদত করবে। মসজিদে আল্লাহর ইবাদত ও দ্বিনি কাজ করতে বাধা দেওয়া জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাহ তাআলা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যে আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং তা বিরান করতে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় জালিম আর কে...?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৪)

পবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা

মসজিদে প্রবেশের পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক। শুধু পবিত্রতা নয় বরং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করাও আবশ্যক। মুসলিমরা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে মসজিদে যাবে। এমনকি শরীরে বা পোশাকে কোনো প্রকার দুর্গন্ধ থাকলে তাও দূর করে নেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানব সন্তান তোমরা প্রতি নামাজের সময় তোমাদের সৌন্দর্য (পবিত্র পোশাক) গ্রহণ করো।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখা

মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখাও মুসলিম সমাজের দায়িত্ব। মসজিদে ময়লা-আবর্জনা ফেলবে না এবং কোনো ময়লা চোখে পড়লে তা নিজ থেকে পরিষ্কার করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে থুতু ফেলা পাপ। এ পাপের মার্জনা হলো তা পরিষ্কার করা।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৬৩৭)

মসজিদের আদবগুলো রক্ষা করা

হাদিস ও ফিকহের গ্রন্থগুলোতে মসজিদে প্রবেশের পর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত বেশ কিছু আদব বা শিষ্টাচার বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো রক্ষা করা আবশ্যক। যেমন—ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা, বিসমিল্লাহ ও দোয়া পাঠ করা, ইতিকাফের নিয়ত করা, দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ নামাজ আদায় করা, আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকা, মানুষের ইবাদত বিঘ্ন হয় এমন সব কাজ পরিহার করা, ইস্তেগফার ও দোয়া পড়তে পড়তে বের হওয়া, বাঁ পা দিয়ে বের হওয়া ইত্যাদি। (আহকামুল মাসাজিদ, পৃষ্ঠা : ৪৩১-৩৫)

মসজিদ পরিচালনায় আন্তরিক হওয়া

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদের ব্যাপারে ছয় শ্রেণির মানুষ দায়িত্বশীল। তাঁরা হলেন—ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, মক্তব পরিচালক, কমিটি ও দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা। প্রত্যেকের ওপর নির্ধারিত কিছু দায়িত্বও রয়েছে। যেমন, ইমাম হক আদায় করে নামাজ পড়াবেন এবং মুসল্লিদের দ্বিনি জ্ঞান, ঈমান ও আমলের উন্নয়নের চিন্তা করবেন। মুয়াজ্জিন ঠিকমতো আজান দেবেন। ইমামকে সহযোগিতা করবেন। খাদিমরা নিজ নিজ কাজ সম্পন্ন করবেন। মক্তব পরিচালক মুসলিম শিশুদের ফরজ শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবেন। কমিটি ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মসজিদ ও মুসল্লিদের প্রয়োজনগুলো পূরণের চেষ্টা করবেন। সার্বিক পরিচালনার ক্ষেত্রে ইমামকে পরামর্শ দেবেন এবং তাঁর থেকে পরামর্শ নেবেন। (আহকামুল মাসাজিদ ফিশ-শারিয়াতিল ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা : ৪০৫-৮)

সংগৃহিত

পঠিত : ৮১১ বার

মন্তব্য: ০