Alapon

কাকে বন্ধু বানাচ্ছেন, একটু ভেবে দেখেছেন কি...?


আপনারা চার পাঁচজন বন্ধু বসে আছেন। মাত্র‌ই আপনি নামাজ পড়ে আসলেন তাদের সাথে গল্প গুজব করবেন আর কি। তারা কেউ নামাজ পরে না এমনকি পরিপূর্ণ ভাবে দ্বীন মানে না, বলা যায় সেক্যুলার। কিন্তু আপনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম। হঠাৎ আপনাদের আলোচনায় এক বন্ধুর বদৌলতে কোনো এক মেয়ের ব্যাপারে কথা উঠলো।

কোনো এক পর্যায়ে কথা অশ্লীল দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে, হয়তো কেউ তার শারীরিক গঠন বর্ণনা করছে, কেউ তার গার্লফ্রেন্ডের কথা শোনাচ্ছে বা কেউ এমন কোনো বিনোদনের কথা বলছে যা ইসলাম সমর্থন করে না। তুমুল হাসাহাসি শুরু হয়ে গেল আপনাদের মধ্যে। ঐ মজলিসে থাকলে, আপনি না চাইলেও তাদের কথার সাথে মিশে যাবেন। আপনার তো মোটেও ইচ্ছা নেই, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা আপনাকে বাধ্য করতে পারে তাদের সাথে তাল মেলাতে। শয়তানের খেলাটাই এদিকে, ব্যাপারটা আবার এমন হতে পারে যে সেসব কথা বার্তা বলে তারপর তারা বলবে 'ওহ দুঃখিত এদিক তো আমাদের বন্ধু আছে সে নামাজ পরে আসলো আমরা এসব না বলি'। অথচ কথা ইতোমধ্যে হয়েই গেছে। আর শয়তান ও ততোক্ষণে আপনার ভেতর ওয়াস‌ওয়াসা ঢুকিয়ে দিয়েছে।

কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে গেলেন। মাগরিবের আজান হয়ে গেল, সেখানে একমাত্র নামাজি আপনি। পাশেই মসজিদ তো তাদের বললেন চল চল নামাজটা পরে আসি। তারা এখানে তিন ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবে,
১• আচ্ছা চল পরে আসি
২• তুই যা আমরা দাঁড়াই
৩• এক কাজ কর সন্ধ্যা তো হয়ে গেছে চলে যাওয়াই ভালো তুই না হয় বাড়িতে কাযা পরে নিস।
দুর্ভাগ্য বসত যদি তৃতীয় পয়েন্ট টা বলে ফেলে হয়তো না চাইতেও আপনি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবেন। আমি বলছি না হবেন‌ই, হতে পারেন। আর তাহলে আপনার মাগরিবের ওয়াক্তের নামাজটা মিস হয়ে গেল, ঈমানে চলে আসলো দূর্বলতা, বাড়ি গিয়ে আদৌও নামাজ আদায় করা হবে কি না নিশ্চিত না। আমি এটাও বলছি না সবাই এমনটা বলবে। তবে নিজের ঈমান ও আমলে যদি এমন কোনো কিছু হ‌ওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, সেটাও তো আমাদের ঈমানের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।

ইসলামে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা বন্ধু বানাবো এমন কাউকে যার সাথে থাকলে আল্লাহর কথা স্মরণ হবে, যার আচরণ/চাল চলনে রাসূলুল্লাহর (সাsmile সুন্নাহ থাকবে। যার সাথে নাজায়েজ কথা বার্তা, হাসি ঠাট্টা এসব হবে না। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে দ্বীনের তাগিদ দিবে, জান্নাতের কথা বলবে। আর আপনি দেখুন আমাদের বন্ধু যারা দ্বীন থেকে দূরে সরে আছে তারা উপরের সবগুলো কাজের বিপরীত। তাদের সাথে থাকলে আল্লাহর কথা তো স্মরণ হয়‌ই না বরং অশ্লীল কথায় পরিবেশ মুখর হয়ে থাকে।

“আর ঈমানদার পুরুষ ও নারী একে অপরের সহায়ক(বন্ধু)। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদের উপর‌ই আল্লাহ তায়ালা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।” [সূরা আত-তওবাঃ ৭১]

উক্ত আয়াতের সাথে আমাদের সম্পর্ক কতটুকু চলুন তা প্রত্যেকে নিজেই নিজদের ভেতর খুঁজি। আমাদের সম্পর্ক কি তাদের সাথে যারা আমাদের ভালো কথার শিক্ষা দেয় মন্দ কথা থেকে বিরত থাকতে বলে? আমাদের বন্ধুত্ব কি তাদের সাথে যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে? আপনি দেখবেন যার বন্ধু একজন নেশাগ্রস্ত, সে নিজে ভালো হলেও একসময় বন্ধুর সাথে থাকতে থাকতে নিজেও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। অন্যত্র যার বন্ধু একজন দ্বীনদার, নামাজি সে তার সাথে চলতে চলতে এক পর্যায়ে নিজেও নামাজ শুরু করতে উদ্বুদ্ধ হয়। বলা হয়েছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।

কেউ মেহেরবানী করে কষ্ট পাবেন না। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতেই হবে আল্লাহর স্বার্থে, নিজের ঈমানের স্বার্থে। তবে এখন‌ই না, আপনার এখানে বিশাল এক দায়িত্ব রয়েছে। আপনি যদি নিজে নামাজ পরেন, দ্বীনের পথে চলেন অথচ আপনার বন্ধু যারা আছে তাদের দাওয়াত দেন না, নামাজের জন্য ডাকেন না, মজলিস থেকে একা উঠে তাদেরকে না ডেকেই নামাজে চলে যান তাহলে আটকে যেতে হবে হাশরের ময়দানে। এই বন্ধুরাই সেদিন আল্লাহর কাছে নালিশ করবে আপনার নামে কেননা আপনি নিজে সবসময় একাকী ইবাদত করেছেন তাদের আহ্বান করেন নি। তাই দোয়া করতে হবে তাদের জন্য, চেষ্টা করতে হবে তাদের নামাজে ফেরাতে। যদি না ফেরে আবার চেষ্টা করুন এবং আবার। অতঃপর ব্যর্থ হলে নিজেকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। আর নিশ্চয়ই হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা।

পঠিত : ১১২১ বার

মন্তব্য: ০