Alapon

জ্ঞান কখনো কখনো মানুষকে মুনাফিক করে তোলে...


জ্ঞান বিষয়ে আল্লাহর রাসূলের একটি বিখ্যাত হাদীস রয়েছে। সেই বিখ্যাত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা.। হাদীসটি হল, ‘মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে আর মুমিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ হয় তার আমলের মাধ্যমে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি জ্ঞানের অধিকারীগণ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করতেন এবং তা যথার্থ স্থানে রাখতেন তবে তারা দুনিয়াবাসীর ওপর জয়লাভ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তারা জ্ঞানকে দুনিয়াদারদের কাছে সমর্পণ করেছেন দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের অভিপ্রায়ে। ফলে তারা অপদস্ত হয়েছেন। -কিতাবুল উম : ১/১৫৬।


এই হাদীসটি পড়ে সত্যিই ভীষণ অবাক হলাম। আল্লাহর রাসূল ১৪০০ বছর আগে যে শঙ্কা প্রকাশ করে গেছেন, আজকে আমরা তারই বাস্তবায়ন দেখছি। ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেব নিঃসন্দেহে তালীবে ইলম। কিন্তু তিনি নিজের জ্ঞান দুনিয়াবী স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে দুনিয়াবাসীর উপর জয়লাভ করতে চেয়েছিলেন। সেই স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে কোনটা নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক সেই জ্ঞানটাও হারিয়ে ফেলেছেন। যার কারণে তিনি মাওলানা মওদূদী সাহেবের আকীদা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। একই সাথে মাওলানা মওদূদী সাহেব রচিত তাফসীর গ্রন্থ তাফহীমুল কুরআন পড়তেও নিষেধ করেন! কারণ, এই তাফসীর গ্রন্থে নাকি আকীদাগত সমস্যা রয়েছে। এই তাফসীর ভ্রান্ত আকীদার উপর লেখা। তাই এই তাফসীর পড়া যাবে না। এমনকি সম্ভব হলে ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেব মাওলানা মওদূদী সাহেবের সমস্ত বই আগুন দিয়ে জালিয়ে দিতে বলেছিলেন।

পক্ষান্তরে দেখা যাচ্ছে, তিনি নিজের নামে রচিত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে জাকারিয়া’-তে পাতার পর পাতা ব্যাখ্যা সেই তাফহীমুল কুরআন থেকেই গ্রহণ করেছেন। তাও আবার কোনো ধরণের রেফারেন্স ছাড়াই। রেফারেন্স ছাড়া উল্লেখ করার অর্থ হল, এই ব্যাখ্যা লেখকের নিজের। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, জাকারিয়া সাহেব মাওলানা মওদূদী সাহেবের ব্যাখ্যাগুলো নিজের নামে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আবার যখন তাকে এই বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষনীয় দেওয়া হয়েছিল, তখনও তিনি বলেননি, এই তাফসীরে মাওলানা মওদূদী সাহেবের ব্যাখ্যাও সংযোজন করেছি। ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেবের এই দ্বিমুখি চরিত্র নিশ্চয়ই মুনাফিকের আলামত। স্পষ্টতই মুনাফিকের আলামত। যেমনটা আল্লাহর রাসূল হাদীসে বলেছেন, ‘মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে, আর মুমিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ পায় আমলে বা কাজে।’

দ্বিতীয় ধর্মীয় বিভিন্ন দিক নিয়ে আল্লাহর রাসূলের ওফাতের পর থেকেই সাহাবীদের মাঝেও ইখতিলাফ ছিল, এখনও আছে। আর সেই ইখতিলাফি বিষয় নিয়ে কতক আলেম বাড়াবাড়ি করে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করে। যেন তারা বিশৃঙ্খলা তৈরির মাঝেই বিশেষ আনন্দ খুঁজে পায়। তাদের মধ্যে শাইখ আবু বকর জাকারিয়া সাহেব অন্যতম।

শাইখ আবু বকর জাকারিয়া সাহেব প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ব্যবহার করে যতোটা ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি বিভেদ আর বিদ্বেষের দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে দ্বীন ইসলামের খেদমত করার জন্য বিভেদের খেদমত করেছেন। যখনই যে আলেমের কথা তাঁর পছন্দ হয়নি অমনি তিনি তাকে বাতিল বলে ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের জ্ঞানের জোরেই তিনি এমন ঘোষণা দেওয়ার হিম্মত দেখিয়েছেন। খুব সম্ভবত জ্ঞানের এই অপব্যবহারের কথাই হযরত লোকমান আ. বলেছিলেন।

হযরত লোকমান আ. তাঁর সন্তানকে সতর্ক করতে গিয়ে বলেন, ‘হে বৎস! তুমি এ জন্য জ্ঞানার্জন করো না যে তুমি জ্ঞানীদের সাথে অহংকার করবে কিংবা মূর্খদের ওপর নিজেকে জাহির করবে অথবা বিভিন্ন মজলিসে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করবে। তুমি জ্ঞানকে উদাসীনতায় পরিত্যাগ করো না বা মূর্খতার মাঝে নিক্ষেপ করো না। হে বৎস! তুমি আপন চোখ দিয়ে দ্বীনী মজলিস বাছাই করে নাও। যখন কোনো দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখবে তখন তাদের সাথে যোগ দিবে। তুমি যদি আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখ তাহলেও তা তোমার জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আর যদি তা তোমার অজানা থাকে তবে তোমার নতুন কিছু জানা হবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের ওপর রহমত নাজিল করবেন যার একটি অংশ তুমিও প্রাপ্ত হবে। আর যে দল আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের সাথে বসবে না। কেননা যদি আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে তোমার জ্ঞান থাকে তাহলে তা তোমাকে কোনো ফায়দা দেবে না। পক্ষান্তরে যদি তা তোমার অজানা থাকে তাহলে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট ও অক্ষম করে ফেলবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন যা তোমাকেও স্পর্শ করবে।’ –আহমাদ, হাদিস নং : ১৬৫১

রাসূল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষকে ভাল কথা শিক্ষা দিয়ে থাকে তার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তালা, তাঁর ফেরেশতাগণ, আসমানবাসী, জমিনবাসী, এমনকি গর্তের পিপীলিকা পর্যন্ত দোয়া করে। (তিরমিযী শরীফ)।

পঠিত : ৫০১ বার

মন্তব্য: ০