Alapon

গ্লোব বায়োটেক ও ডঃ আসিফ মাহমুদ এবং কিছু কথা...


আচ্ছা সত্যি করে বলুনতো, আপনাদের মাঝে ঠিক কতজন কোভিড ভ্যাক্সিন আবিষ্কার সংক্রান্ত গ্লোব বায়োটেকের পুরো সংবাদ সম্মেলনটা দেখেছেন ?
কতজন গ্লোব বায়োটেক সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করেছেন ?
আর কতজন ডঃ আসিফ মাহমুদ সম্বন্ধে জেনেছেন বা উনার কাজ সম্বন্ধে?
(অন্যের পোস্টের কপি পেস্ট করা বাদ দিয়ে)

প্রথমে আসি গ্লোব বায়োটেক নিয়ে। এটি গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস নামক একটি স্বল্প পরিচিত ঔষধ কোম্পানির অংগ প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসকদের কাছে জাতীয়ভাবে এর গ্রহনযোগ্যতা একেবারেই উল্লেখ করার মতো নয়।

গ্লোব বায়োটেক প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইটে গেলে দেখবেন, প্রতিষ্ঠার ৪ বছর পরেও এটি এখোনো কোনো প্রডাক্ট বাজারে আনতে পারেনি। কিছু হাই প্রোফাইল বায়োলজিকাল এজেন্টের নাম প্রোডাক্ট হিসেবে যদিও তাঁদের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এগুলোর একটিও এখোনো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন পায়নি।

এই প্রতিষ্ঠান বা গ্লোব ফার্মার অতীতে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার দূরে থাক, কোনো ভ্যাক্সিন উৎপাদনের ইতিহাসও নেই । ভ্যাক্সিন তৈরির প্ল্যান্টও তাঁদের আছে বলে জানা নেই।
এরপর আসি ডঃ আসিফ মাহমুদের কথায়। সবাই শুধু উনার একইরকম কিছু অর্জনের কথাই অন্যের ওয়াল থেকে দেখে কপি পেস্ট করে আবেগে ভেসে যাচ্ছেন। একদম এসএসসি থেকে শুরু। যদিও বর্তমান দুনিয়ার আর কোনো বিজ্ঞানীর মাধ্যমিক পর্যায়ের রেজাল্ট আমরা জানি বলে মনে পড়ছে না।

আচ্ছা কেউ কি উনার Linked in প্রোফাইলটা একটু ঘেঁটে দেখেছেন? হঠাৎ সারা দুনিয়ার হটকেক কোভিড ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া উনি কিন্তু আগে কোনোদিন কোনো ভ্যাক্সিন উৎপাদন বা গবেষণার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে উনি ২০১৩ সালে জাপানের Gifu university থেকে পিএইচডি করেছেন।(এটির ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং ৯০০ এর উপরে, খোদ জাপানেরই প্রথম ৪০ টি ইউনিভার্সিটির তালিকায় এটি নেই)। এরপর উনি বাংলাদেশের PrimeAsia University নামক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বছর শিক্ষকতা করেছেন। আর ২০১৬ থেকে অদ্যাবধি গ্লোব বায়োটেকে কাজ করেছেন।

ভ্যাক্সিন বা উনার অন্য কোনো কাজ নিয়ে অনেক খুঁজেও google scholar বা অন্য কোথাও কোনো publication খুঁজে পাইনি।

আমি এখানে ডঃ আসিফের নিন্দা করতে বসিনি। শুধু একটু নিজেকেই জিজ্ঞাসা করছি, যে প্রতিষ্ঠান কোনোদিন একটা ভ্যাক্সিন উৎপাদন পর্যন্ত করেনি, ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের দাবিদার বিজ্ঞানী কোনোদিন একটা ভ্যাক্সিন তৈরির প্রতিষ্ঠান বা রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেননি, তাঁরা একেবারে করোনা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করে ফেললেন?

যদিও সংবাদ সম্মেলনে শুধু জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বহুল প্রচলিত কিছু সায়েন্টিফিক টার্ম ও ভ্যাক্সিনের সাধারণ মেকানিজম ছাড়া আবেগি কথাই বেশি হয়েছে। ডাটার ইন্টারপ্রিটেশন ঠিক সায়েন্টিফিক ডাটা এনালাইসিসের মতো নয়, বরঞ্চ পাটিগণিতের সরল অংকের মতো বর্ণনা করা হয়েছে, যেটা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় একবারেই অচল।

এই গ্লোব বায়োটেক প্রতিষ্ঠানই কিন্তু কয়েক মাস আগেই নতুন ধরনের করোনা কিটের আবিষ্কার করেছে বলে দাবি করেছে। যদিও আজ অবধি আদৌ সেটা নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে কিনা সেটা চিকিৎসকরাও জানেন না, মিডিয়াতেও আসেনি।

আমি অবশ্যই চাই, আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় এগিয়ে আসুন, বিশ্বমানের আবিষ্কার করুন। কিন্তু সেটার জন্য যেনো নিজেদেরকে দীর্ঘমেয়াদে তৈরি করেন। ছোট ছোট কাজ দিয়ে সফল হয়ে যেনো বড় কিছুতে হাত দেন। বড় কিছু একেবারে করতে গিয়ে গবেষণা সম্বন্ধে আমাদের উৎসাহটুকু যেনো পরে হাস্যরসে রুপান্তরিত না হয়।

উদাহরণ কাছেই আছে। গণস্বাস্থ্য ও ডাঃ জাফরুল্লার করোনা কিট উদ্ভাবন বা আইভারমেক্টিন নিয়ে একজন চিকিৎসকের সফলতার দাবি মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পেলেও, শেষ পর্যন্ত কিন্তু বিজ্ঞানের যুক্তির কাছে টিকতে পারেনি। মিডিয়ায় আমজনতার ভালো লাগা বা না লাগাতে কিন্তু বিজ্ঞানের কখোনো কিছু আসে যায় না। বিজ্ঞান চলে সুকঠিন তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে।

গ্লোব বায়োটেক ও ডঃ আসিফ মাহমুদের জন্য শুভকামনা। করোনা ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের চেষ্টাটুকু যেনো মিডিয়া হাইপ না হয়ে সত্যিকারভাবেই কার্যকর উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে যায়।

- রাসেল

পঠিত : ৫১০ বার

মন্তব্য: ০