Alapon

ইমাম মালিক রহ.-এর অজানা জীবনকথা...


ইমামদের মধ্যে ইমাম মালিক রহ.একমাত্র ইমাম
ছিলেন যিনি সবদিক থেকে একজন রুচীসম্মত মানুষ ছিলেন।পোশাকে আশাকে খুব পরিপাটি ও বেশ সুবেশধারী ছিলেন।তিনি ইয়েমেনের ইডেন মিশর ও খোরাসানী কাপড় পরিধান করতেন।তিনি বলতেন,"যার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভালো ও সুন্দর কাপড়চোপড় পড়েনা তাকে বন্ধু ভাবতে আমি ভালোবাসিনা"।কেননা সে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়মাতকে স্বীকার না করে অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছে।

তিনি ততকালীন ৫০০ দিনার দিয়ে চাদর কিনে পরিধান করতেন।কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতেন-আমি শহরের আলেমদের সাথে মিলেছি,দেখেছি তাঁদেরকে মূল্যবান পোশাক পরিধান করতে।

শুধু কাপড়চোপড়ে না ইমাম মালিককে সর্বক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো জিনিস যেটা সেটাই পছন্দ করতে দেখা যায়।জ্ঞানের রাজ্যেও তিনি এমন ছিলেন।সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিষয়ই তিনি গ্রহণ করতেন।তিনি বলতেন-আমি জীবনে কোনো অনভিজ্ঞ উস্তাদের নিকট যাইনি।

ইমাম মালিক রহ.যে ঘরে থাকতেন সেই ঘর ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর।আর এটা ছিল মসজিদুন নববীতে।দরস ও মজলিস বসতো মসজিদুন নববীতে ঠিক সেখানেই হযরত উমার রা. বসতেন এবং দরস দিতেন।এই স্থানে 'হাদীসের ইমলা' বসতো অর্থাৎ হাদীস পাঠ এবং লিখা দুই মজলিসই এখানে বসতো।এভাবে হযরত মালিক উমার রা. এর যাহেরী ও বাতেনী উভয়প্রকার বরকতের উত্তরাধিকার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।

ইমাম মালিক দামী কাপড়চোপড় পরিধান করতেন,যা সাধারনত রাজা বাদশাহরা ব্যবহার করতো।এটা উনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি থেকে।তিনি মনে করতেন যাদের সামর্থ্য আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন কিন্তু ভালো পোশাক আশাক পড়েনা তারা আল্লাহর কাছে নিজেকে অকৃতজ্ঞ হিসেবে জাহির করে।

তিনি এটাও বলতেন পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট উভয় ধরনের কাপড়ই পড়তেন সহী নিয়্যতে।যারা উৎকৃষ্ট কাপড় পড়তেন তাদের নিয়্যত হতো উত্তম।আর যারা একটু কম সুন্দর কাপড় পরিধান করতেন তাদের নিয়্যত ছিল বিনয় প্রকাশ ও খ্যাতি বিমুখতা।তাই উভয় খেয়ালের পক্ষপাতী বুযুর্গগনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসনীয়।

ইমাম মালিক খুব রসিক মানুষও ছিলেন।তাঁর গোঁফ বেশি ছিল।প্রয়োজনে কাটতেন।উমার [রা] গোঁফের মত।উমার কোন বড় বিষয়ের সামনে পড়লে কিংবা যখন খুব রাগ উঠতো তখন তিনি নিজের গোঁফকে মুচড়ে দিয়ে গোমড়া করে নিতেন।উমার রা.গোঁফ প্রায় সময় বড়ই থাকতো।ইমাম মালিক ও তাই করতেন।

তিনি হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে একেবারে কৃপণ ছিলেন।কোরআনের বিষয়বস্তুর সাথে সাংঘর্ষিক এমন হাদীস গ্রহণ করা যাবেনা।এরকম যারা করেন অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেন নাসিকা কুঞ্চন করেন।আহলে কোরআন বলে অপবাদ দেন।
কিন্তু ইমাম মালিক ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা।

তিনি বলতেন আমি মদিনায়-ক্বালা রাসুলুল্লাহ, ক্বালা রাসুলুল্লাহ-রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন বলে অনেককেই চিল্লাইতে দেখেছি কিন্তু তাদের নিকট থেকে হাদীস গ্রহণ করিনি।

আমি এমন লোকও মদিনায় পেয়েছি,অনেক বড় বড় বুযুর্গদের মদিনায় দেখেছি, যারা আকাশের দিকে তাকিয়ে দোয়া করলে সাথে সাথে আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ে যেত কিন্তু আমি তাদের নিকট থেকে হাদীস গ্রহণ করতাম না।

ইমাম মালিক আরোও বলেন;-ইলমে হাদীস দ্বীনি ব্যাপার তা কার নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে বিবেচনার বিষয়।আমি নবিজী [সা.] মসজিদের স্তম্ভের নিকট অন্তত ৭০ ব্যক্তিকে সরাসরি "রাসুলুল্লাহ এরশাদ করেছেন"বলতে শুনেছি কিন্তু আমি তাদের নিকট থেকে হাদীস গ্রহণ করিনি।অথচ তাদের নিকট কেউ বিরাট অট্রালিকা সোপর্দ করলেও তাদের আমানত ও ঈমানের মধ্যে বিন্দুমাত্র দোষ দেখা দিতনা।কিন্তু আমি হাদীস নিতাম না কারণ তারা যা বলতেন তা নিজে বুঝতেন না।[১]

তাই দেখা যায় ইমাম মালিক নাফী হতে এবং নাফী আব্দুল্লাহ ইবনে উমর হতে হাদীস বর্ণনা করতেন।মালিক নাফী হইতে-নাফী ইবনে উমর হইতে এই সনদটীকে হাদীসের জগতে সিলসিলাতুয যাহাব বা 'স্বর্ণ সনদ' বলা হয়।তিনি বলেন আমি নাফী[চাচা ছিলেন এবং ইবনে উমরের সরাসরি ছাত্র] থেকে ইবনে উমরের বর্ণনা শুনলেই আর কারোও নিকট সেই হাদীসের জন্য সমর্থন চাইতাম না।

তাকলীদ খাওয়াইতে চাওয়া বিজ্ঞজনদের জন্য বলা যায় যে আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন;-এটি একটি বিরাট ব্যাপার যা ইমাম মালিক ছাড়া আর কারোও ভাগ্যে জোটেনি।বিজ্ঞজনদের দৃষ্টিতে এরচেয়ে মর্যাদার ব্যাপার আর কিছুই হতে পারেনা।কেননা নির্বোধদের সাহচর্যে জ্ঞানের প্রদীপ নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে।তাহকীক বা গবেষণার সুউচ্চ মার্গ হতে তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণের নিম্নমার্গে নিক্ষিপ্ত করে।একজন মুসলিম যে দ্বীন সম্মন্ধে জানলোনা সে এক ভুল করলো আর দ্বীন সুন্ধে জানার জন্য অন্ধ অনুসরণ করে সে আরোও এক ভুল করলো।

ইমাম মালিকের হাতে সব সময় একটা আংটি থাকতো।তাতে লেখা ছিল``হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি'মাল ওয়াকিল``-লোকেরা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন-এর অর্থ "আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি কতইনা উত্তম"এটা যেন আমি বারবার দেখি আর মনে করি এবং আমার মনে অংকুরিত হয়ে যায়।

ইমাম মালিকের ঘরে দরজার সামনেও মাশা-আল্লাহ লেখা থাকতো।লোকেরা জিজ্ঞেস করলে বলতেন-আমার আল্লাহ বলেন;-তুমি যখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করলে তখন কেন বললেনা,আল্লাহ যা চান তাই হয়।আমার ঘর আমার জন্য বাগান।আমি চাই যখন আমি ঘরে প্রবেশ তখন আমার মুখ দিয়ে যেন এই পবিত্র বাণীটি উচ্চারিত হয়।

CLTD

পঠিত : ৭৫০ বার

মন্তব্য: ০