Alapon

ডাল মে কুচ কালা হায়, বহুত কালা হায়....



টেন মিনিট স্কুল নিয়ে চলমান যে বিতর্ক চলছে, সেই বিতর্কের পালে নতুন করে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সেই হাওয়া অবশ্য আয়মান সাদিক সাহেব নিজেই দিয়েছেন।

জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার শাইখ আহমাদুল্লাহ এবং সাইফুল্লাহ সাহেব তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়ার একদিন পর ফেসবুক লাইভে আসেন আয়মান সাদিক। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাকে হত্যার দাবি তুলে হাজার হাজার মানুষ স্ট্যাটাস দিচ্ছে।

আয়মান সাদিক সাহেবকে যতোদূর জানি, তাকে বিচক্ষণ বলেই বলে মনে হয়। কিন্তু তিনি যখন ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, সমালোচনাকারীরা তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে তখন এর দ্বায়ভার যারা গঠনমূলক সমালোচনা করেছে অর্থাৎ শাইখ আহমাদুউল্লাহ এবং সাইফুল্লাহ সাহেবদের উপরও বর্তায়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থেই যদি তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে সে বিষয়ে বিচার চাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে অভিযোগ না করে ফেসবুকে বিচার চাওয়ার হেতু কী?

ফেসবুক তো বিচার চাওয়ার জায়গা না! ব্যাপারটা যদি এমন হতো আয়মান সাদিক আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না, তাহলে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে এভাবে হত্যার হুমকি নিয়ে জনতার আদালতে বিচার চাইতে পারেন। কিন্তু এভাবে ফেসবুক লাইভে এসে হত্যার হুমকি এবং সেই হুমকির কারণে তার পরিবার কতটা ভুক্তভোগি সে কথা বলে মূলত তিনি দুটো ভুল করেছেন।

প্রথম ভুল, তিনি এ কথা বলে তার কর্মকান্ডের সকল সমালোচনাকারীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে যারা গঠনমূলক সমালোচনা করেছে, তারাও আসামী।

দ্বিতীয় ভুল, তিনি দেশের আইনের উপর আস্থার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি তিনি বাংলাদেশ পুলিশের উপরও আস্থাবান নন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের উপর আস্থাবান হলে হুমকির বিচার ফেসবুকে না দিয়ে পুলিশের কাছেই চাইতেন। কিন্তু তিনি তা না করে ফেসবুক লাইভে এসে বললেন, ‘আমাকে বাঁচতে দিন! আমাকে শত শত মানুষ হত্যার হুমকি দিচ্ছে!’

এক্ষেত্রে আমি প্রশ্ন রাখব, আয়মান সাদিক কি জেনে বুঝেই এই কাজটি করেছেন নাকি উত্তেজনা ও ভয় থেকে এই কাজটি করেছেন?

টেন মিনিট স্কুল নিয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে শাইখ আহমাদুল্লাহ তাঁর ভিডিওতে বেশ কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষনী দেন এবং আয়মান সাদিকের কাছে সেগুলোর ব্যাপারে প্রশ্ন রাখেন। আমরা আশা করেছিলাম, আয়মান সাদিক সাহেব যেহেতু একজন বিচক্ষণ মানুষ তাই তিনি ফেসবুক লাইভে এসে শাইখ আহমাদুল্লাহ সাহেবের রেখে যাওয়া প্রশ্নগুলোর প্রমাণস্বরূপ উত্তর দিবেন। অথবা টেন মিনিট স্কুলের ব্যাপারে মানুষ যদি ভুল ধারণাই করে থাকে তবে সেই ভুল ধারণা ভেঙ্গে দেওয়ার দায়িত্ব তো আয়মান সাদিক এবং টেন মিনিট স্কুল কতৃপক্ষের। শাইখ আহমাদুল্লাহ তো তাকে কোনো হুমকি দেয়নি এবং মুরতাদও বলেনি।

হতে পারে কতিপয় অতিউৎসাহি ব্যক্তি তাকে মুরতাদ বলে স্ট্যাটাস দিয়েছে কিংবা হত্যার কথাও বলতে পারে। কিন্তু আয়মান সাদিক সাহেব নিজেই সবসময় পজিটিভ দিকগুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সবাইকে বলেন। অথচ তিনিও এই ক্ষেত্রে শাইখ আহমাদুল্লাহর পজিটিভ অ্যাপ্রোচকে র্ধ্তব্যের মধ্যে না নিয়ে কতিপয় উগ্রপন্থির স্ট্যাটাসেই ধর্তব্যে নিলেন! আয়মান সাদিকের কাছ থেকে এটা কখনোই কাম্য নয়।

আয়মান সাদিক এবং টেন মিনিট স্কুলের যেসব কন্টেন্ট নিয়ে আপত্তি উঠেছে, এবং তারা যেসব বক্তব্য দিয়েছে, সেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড ও উদ্দেশ্য কী ছিল- আয়মান সাদিক এই দিকটা পরিষ্কার করতে পারতেন। অন্যদিকে টেন মিনিট স্কুলের অন্যতম শিক্ষক সাকিব বিন রশীদ যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমাজ বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন, ছেলে মেয়েদের একসাথে স্লিপ ওভার করতে বলেছেন, ভালোবাসা দিবসে বাবা মায়ের শাসন তোয়াক্কা না করে প্রিয় মানুষের সাথে ডেটে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন- সেসবের ব্যাখ্যা কোথায়?

আসলে টেন মিনিট স্কুল যদি তাদের কার্যক্রম শিক্ষা প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতো তাহলে আজ তাদের এই দুর্গতি পোহাতে হতো না। কিন্তু যখন থেকে তারা মোরালিটি শিক্ষা দেওয়া শুরু করল তখন থেকেই বিপত্তিটা ঘটল। মোরালিটি বা নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার যে মানদন্ড তা টেন মিনিট স্কুলের শিক্ষকরা নিজেরাই উতরাতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। যার কারণে তারা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সমাজ বিরোধী কথা ‘স্লিপ ওভার করতে পারা উচিত’ অনায়াসে বলতে পারে।

তাদের নিজেদের ভিতরে মোরালিটি থাকলে তারা কখনো বয় ফ্রেন্ড এবং গার্লফ্রেন্ড অথবা যাস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে স্লিপ ওভার করার কথা বলতে পারতো না। তাদের ভিতরে মোরালিটি থাকলে তারা কখনো সমকামিতার মত এক ঘৃন্য কাজের সাথে ‘লাইক’ দিয়েও সমর্থন করতে পারতো না। অথচ এসব বিধর্মীদের কাজ তারা অনায়াসে করে যাচ্ছে, অন্যদিকে তারাই আবার আমাদের তরুণ সমাজকে মোরালিটির শিক্ষা দিচ্ছে। আর এই মোরালিটির ডিলারশীপ নিতে গিয়ে তারা কখন যে সীমালঙ্ঘন করেছে, তা আর দৃষ্টিগোচর হয়নি। যখন হয়েছে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

এখন দেখার বিষয় আয়মান সাদিক বা টেন মিনিট স্কুল পরবর্তি লাইভ শোতে কী বলে? আয়মান সাদিক যদি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে পাত্তা না দিয়ে ‘হত্যার হুমকি’ ইস্যু নিয়েই পড়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে ডাল মে ক্যুচ কালা হজ্য

পঠিত : ৫৮০ বার

মন্তব্য: ০