Alapon

আল্লাহ, যিনি গাফুরুন শাকুর...


আল্লাহ তায়ালা বলেন - لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ - "যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী।" (৩৫:৩০)

'শাকুর' নামটি আরও দুইটি নামের সাথে যৌথভাবে এসেছে, 'গাফুরুন শাকুর' এবং 'শাকুরুন হালিম।' আমার কাছে এই ব্যাপারটি অসাধারণ চমকপ্রদ লেগেছে। 'গাফুরুন শাকুর' মানে, আমরা যখন নামাজ পড়ি আল্লাহ আমাদের নামাজ পড়া পছন্দ করেন। আর আমাদের নামাজে কত শত ভুল থাকে? নামাজে কত মানুষ দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে চিন্তা করে? কত মানুষ চিন্তা করে তারাবি কি চৌদ্দ নাকি পনের রাকাত হল? কতজন মানুষের রুকু-সেজদা নিখুঁত হয় এবং অন্তর আল্লাহর দিকে ঝুঁকে থাকে? কতজন মানুষ এটা অর্জন করতে পারে? এতোসব ভুল থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ কী করেন? মনে করুন, নামাজ যদি একটি বিল্ডিং নির্মাণ করার মত হয়, আপনি আল্লাহকে দিয়েছেন কয়েকটি ভাঙ্গা ইট মাত্র। আল্লাহ কী করেন? আল্লাহ আপনার এই সামান্য ভাঙ্গা ইটের টুকরা গুলো নিয়ে আপনার জন্য বিশাল এক দালানে তৈরি করে দেন। কারণ তিনি গাফুরুন শাকুর। তারপর তিনি কী করেন? 'গাফুর' নামের দয়ায় এটাকে পূর্ণ এক দালানে পরিণত করার পর তিনি কী করেন? তিনি আপনার এই নামাজ পড়াকে সমাদর করেন, এই সুন্দর বিল্ডিংয়ের সমাদর করেন, যা আপনি নির্মাণ করেননি; আপনি শুধু কয়েকটি ভাঙ্গা ইট দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ আমাদের জন্য 'গাফুরুন শাকুর'।

অর্থাৎ, এমনকি আমাদের সওয়াবের কাজেও ত্রুটি রয়েছে, খুঁত রয়েছে। প্রথমে আল্লাহ স্বয়ং ঐ ত্রুটি-বিচ্যুতি গুলো দূর করে দিবেন। তারপর আমাদের এই ত্রুটিপূর্ণ, ভঙ্গুর প্রচেষ্টাগুলোর জন্য আমাদের প্রশংসা করেন। ইবাদাত সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমি যে দুঃখজনক অজুহাতগুলো দেখাই তিনি তা ঢেকে দেন তারপর তিনি আমার এই প্রচেষ্টাকে আপ্রিশিয়েট করেন। ইনিই আমাদের রব, গাফুরুন শাকুর। এটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ করতে পারে না।

যদি আপনার অফিসের বসের কোন কাজ কোনরকমে করে দেন, মামুলিভাবে করে দেন, তিনি আপনাকে অমুক প্রোজেক্টটি করতে দিয়েছেন, ৩০ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছিলেন, আপনি মাত্র দুই পৃষ্ঠা লিখে বসের হাতে তুলে দিলেন। তারপর বললেন, আপনার খুশি হওয়া উচিত, আমি তো দুই পৃষ্ঠা লিখেছি। কী হবে তখন ভাবতে পারছেন?

মানুষের পক্ষে কোন দিন আল্লাহর মত 'গাফুরুন শাকুর' হওয়া সম্ভব নয়। যদি প্রত্যাশার চেয়ে কম করেন তাহলে যার জন্য কাজটি করেছেন তিনি আপনার প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন। কিন্তু আল্লাহ বলছেন তুমি তো অন্তত চেষ্টা করেছো; আমি তোমার ত্রুটিগুলো ঢেকে দিচ্ছি। "আন ইয়াজিদাহুম মিন ফাদলিহ" তিনি যে শুধু আপনার ত্রুটিগুলো ঢেকে দেন তাই নয়, তিনি ভালো কাজের এতো সমাদর করেন যে তদুপুরি তিনি আপনাকে পুরস্কৃত করেন, ইয়াজিদাহুম মিন ফাদলিহ - নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন"।

মানুষ যখন পরিশেষে জান্নাতে গিয়ে উপনীত হবে, তারা আল্লাহকে স্মরণ করবে। কিন্তু কীভাবে তারা আল্লাহকে স্মরণ করবে? মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে তাদের দুঃখগুলো দূর করে দেয়ার জন্য, তারা বলবে, আল্লাহ তাঁর নাম পূর্ণ করেছেন। কোন নাম? আল্লাহ আমাদের সবগুলো ত্রুটি ঢেকে দিয়েছেন। আর তিনি আমাদের প্রচেষ্টাগুলোর সমাদর করেছেন এবং আমরা যা করেছি তার চেয়েও অনেক বেশি দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন তিনি এমনটি করবেন। আর শুধু এ কারণেই আজ আমরা জান্নাতে। কারণ, আমাদের কাজগুলো যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রচেষ্টাগুলো যথেষ্ট নয়। মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করার পর ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।

- উস্তাদ নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে।

পঠিত : ১০৪৮ বার

মন্তব্য: ০