Alapon

সমকামিতা এবং কিছু কথা


অতিতের পাপকর্মের শাস্তির কথা ভুলে আবার সে নিকৃষ্ট পাপাচারকে বৈধতা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে একশ্রেণীর সংখ্যালঘু। তারা মনে করছে এই অজাচারকে বৈধতা দিতে পারলেই জাতির মুক্তি হবে। সমকামী অধিকার আদায় হলেই নাকি জাতি পুরোপুরিভাবে মুক্তি হবে।

অতিতে একটি সম্প্রদায়কে এই পাপকাজের জন্য ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে,তার প্রমাণ এখনো সম্মুখে রয়ে গেছে। জর্ডানের সেই মৃত সাগর এখনো বর্তমান আছে,যেখানে লুত সম্প্রদায়কে তার সমকামিতার জন্য ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলো। এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া যায় এখনো যারা এই কুকর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই ।

মনোবিজ্ঞানে সিগমুন্ড ফ্রয়েড বেশ কুখ্যাত নাকি বিখ্যাত আমার জানা নেই।
এই পশুটা সবকিছুর ব্যাখ্যা করতেন যৌনতা নিয়ে। ফ্রয়েড দাবী করতেন সমাজের সব সম্পর্ক নাকি যৌনতাকেন্দ্রীক তৈরী হয়। তার দাবী হলো সমকামিতা পশুদের মধ্যে থাকলে মানুষ করলে সমস্যা কোথায়? একিভাবে পশুদের অজাচার বিদ্যমান থাকলে আমরা করলে সমস্যা কেন? সমকামিতা এখন পাশ্চাত্যে মোটামোটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই বিকৃত যৌনাচারের যুগেও মানুষ অজাচারকে স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছেনা। আসল কথা হলো ফ্রয়েডের দাবী সত্য নয়,কারণ পশুদের মধ্যেও সমকামিতা বা অজাচার একটি বিরল ঘটনা।

কিছু বিকৃত মানুষ দাবী করে আসছে এই স্বাভাবিক(!) প্রবৃত্তিকে স্বীকার করে নিতে পারলে আমরা মুক্তি পাবো।

এদের আশার বাণী রেখে সম্প্রতি স্পেন আর রাশিয়া পারস্পরিক সম্মতিতে অজাচার বা ইনসেস্ট বৈধতা দিয়েছে। জার্মান ন্যাশনাল এথিক্স কাউন্সিল ভাই বোনের অজাচারকে বৈধতা দেয়ার পক্ষে কথা বলেছে। বাংলাদেশে পাঠ্য বইয়েও সম্মতিক্রমে অবৈধ যৌনচারকে বৈধ বলে স্বীকার করেছে।

বাইবেলেও ইনসেস্টকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য বাইবেলেও দশটি অজাচারের গল্প যুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে লূত ( আঃ),ইবরাহিম এবং দাউদ (আঃ) নিয়েও লেখা হয়েছে।
যা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। বাংলাদেশেও কিছু বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ সমকামী অধিকার আদায়ে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। তারা এটা কিভাবে পারবে বলে মনে হয় হয়,যেটা পশুর কাছেও গ্রহণযোগ্য পাইনি। সেটা কিভাবে মুসলমান মেনে নেবে?
এটাই প্রশ্ন!

সাম্প্রতিক কালে দেশের গ্রামীণফোনের আর্থিক সহযোগীতায় এবং আরটিভি একটি সমকামী নাটক 'বেইমবো' প্রচার করছে। সমকামী অধিকার প্রতিষ্টা নাকি জনমানুষের আন্দোলন। সমকামী অধিকার আদায় নাকি গনমানুষের দাবী! এটা আগে কখনো শুনেছিলাম বলে আমার মনে নেই। এই দাবী কোথা হতে আসলো?কারা এর পেছনে আছে?কেন এই পাপকর্মকে গনদাবী বলা হচ্ছে। দেশের শিক্ষানীতি থেকে এর কিছুটা আবাস পাওয়া যাচ্ছে এখন। বুঝা যাচ্ছে শুধু পশ্চিমা দেশে নয় বাংলাদেশেও এসব কুরুচিপূর্ণ মানুষ গুলো আছে যারা জাতিকে অজাচারে লিপ্ত করতে চাই।

দেখুন আগে এইডস প্রতিরোধে বিজ্ঞাপন ছিলো,
" এইডস প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন"
এখন বলা হয় "এইডস প্রতিরোধে ... ব্যবহার করুন"
আরো বলা হয় যৌন সংখ্যালঘু (সমকামিদের) অধিকার রক্ষায় সচেতন হোন।
ইনজয় লাইফ,টেক কন্ট্রোল, স্টপ এইচআইভি/এইডস।
ধর্মীয় অনুশাসন নয়, অবৈধ যৌনতা কোন সমস্যা নয়।
কন্ট্রোল করতে পারলে হলো।
কি জগন্য বিকৃত রুচিসম্মত কথা চিন্তা করুন।

কিন্তু আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও সমকামিতার মতো ইনসেস্টকেও একটি বিকৃত যৌনাচার হিসেবে জানতো পশ্চিমা দেশ গুলোতেও। পরিসংখ্যান অনুসারে ১৯৫৫ সালে প্রতি মিলিয়নে মাত্র একজন মানুষ অজাচারে লিপ্ত হতো।
আর এখন?
প্রতি তিনটি মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে এবং প্রতি পাঁচটি ছেলের মধ্যে দুটি ছেলে ১৮ বছর হওয়ার আগে পরিবারের কোন সদস্য কর্তৃক শারীরিক লাঞ্ছিত হয়।

এবার আমাদের অবস্হা কি?
NDTV'র একটি রিপোর্টে প্রতিবেশী দেশ ভারতে অজাচারের একটি পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে। ভারতে ৫৫% শিশু শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়।৭৫% শিশুকে নিরবে লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। ৬৫% অজাচারে শিকার শিশুদের বয়স ১০-১৮ বছর। ৩৪% এর বয়স ২-১০।চিন্তা করুন মাত্র২-১০ যারা অজাচারের স্বীকার হচ্ছে,তাদের ৯০% কে বারবার এই শারীরিক লাঞ্ছনার মধ্যে যেতে হয়।

ভারতের ৭০% বেকার যুবক আয়ের পথ হিসেবে এখন দেহব্যবসাকে নিয়েছে,যাদের মধ্য শিক্ষিত তরুণের সংখ্যা বেশি। এটা চরম কুরুচিপূর্ণ নিউজ,তবুও প্রকাশ করতে হয় শিখার জন্য।

গত ১৫ সালে TIV'র এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অজাচার প্রসঙ্গ লিখেছে। দেশের ৩২% শিশু শারীরিক লাঞ্ছনার স্বীকার হচ্ছে। ৫৫% শিশু যারা অজাচারের স্বীকার হয় তাদের বয়স ৭-১৬ বছর। ৩৫% তরুণ তার প্রতিবেশীর হাতে অজাচারে স্বীকার হচ্ছে, যাদের বয়স ১৩-১৮। ২৭% যুবক সেচ্ছায় সমকামিতায় লিপ্ত হচ্ছে,যাদের বয়স ১৮-২৪।

তার মধ্যে বেশিরভাগ তরুণ ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে এই অজাচারে লিপ্ত হয়।এর জন্য সমাজ পরিবার শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র দায়ি। এর মধ্যে দেশে কওমী মাদরাসা পড়ুয়া শিশু এবং তরুণ নিয়মিত শারীরিক লাঞ্ছনার স্বীকার হচ্ছে,যারা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অজাচারের স্বীকার হচ্ছে তাদের বয়স ৮-১৮ বছর,মাদরাসার শিক্ষক এবং বড় ছাত্রদের হাতেও এসব ঘটনা নিয়মিত হচ্ছে। বলতে গেলে বাংলাদেশে ৫০ ভাগ শিশু বা তরুণ নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে দেশের কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া স্কুল কলেজের হোস্টেল এবং ব্যাসলর মেস গুলোতে সমকাম হচ্ছে। দেশের নগর মহানগরে সমকামী ক্লাব হোটেল তৈরী হচ্ছে।

নিয়মিত পত্রিকায় এসব নিউজ গুলো বারবার আসতেছে তবুও তারা সংশোধনের পথ দেখছেন না। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সমকামিতাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে। ভারতে সমকামিতা এখন আর অপরাধ নয়। গনমাধ্যম তাদের ভাষায় এই সংবাদকে ‘ভারতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা’ বলে নিউজ করেছে।

কিন্তু এটা ‘নতুন অধ্যায়ের সূচনা’! নাকি ‘জঘন্য পাপাচারের গজবের সূচনা’? কারন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমকামিতা বা homosexuality সম্পূর্ণ হারাম করেছেন। এটা স্বাভাবিক ব্যভিচারের চেয়েও অধিকতর নিকৃষ্ট পাপ।

হযরত লুত (আঃ) এর কওমকে (Sodom আর Gomorrah নগরী) আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন সমকামিতার পাপের কারনে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলছেন-

• “আর লূতকে আমি নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছি। তারপর স্মরণ করো যখন সে নিজ জাতির লোকদেরকে বললো, তোমরা কি এতদূর নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছো যে, তোমরা এমন সব নির্লজ্জতার কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি। তোমরা স্ত্রী লোকদেরকে ত্যাগ করে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা পুরন করে নিচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালংঘনকারী জাতি। কিন্তু তার জাতির লোকদের জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, বের করে দাও এই লোকদেরকে তাদের নিজেদের জনপদ হতে, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র বলে দাবী করে। শেষ পর্যন্ত লূত ও তার ঘরের লোকদেরকে তার স্ত্রী ব্যাতিত যে পছন্দের লোকদের সাথে রয়ে গিয়েছিল, বেছে বের করে নিলাম। সেই জাতির লোকদের উপর এক প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। এরপর দেখ ওদের সেই অপরাধী লোকদের কি পরিণাম হলো।” (সূরা আরাফ : ৮০-৮৪)

• “সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সাথে কুকর্ম কর?এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” (সূরা শুয়ারা, ১৬৫-১৬৬)

• “স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম।” (সূরা নামল, ৫৪-৫৭)

• “আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।” (সূরা আনকাবুত, ৩১)

রাসুল (স) বলেছেন-

*“আমি আমার কওমের জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আশঙ্কা করি সেটা হল লুতের কওম যা করত সেটা যদি কেউ করে… ” (তিরমিজি, ১৪৫৭)

*“তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।” (আবু দাউদ, ৩৮:৪৪৪৭)

আধুনিক ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে নৈতিকতা যেন দিন দিন বই পুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে! আধুনিক সমাজে মুক্ত যৌনচার সভ্য মানুষকে পশুত্বের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। বস্তুবাদী সমাজে অশালীন ও অশ্লীল যৌনাচার, নৈতিকতাহীনতা এক ভয়াবহ স্তরে উপনীত হয়েছে। ফলে পরিবার গঠন এবং বিবাহ পদ্ধতি প্রায় যেন বিলুপ্তির পথে। অবাধ যৌনাচারের উপর কোন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপ যেন আজকের সমাজে অনগ্রসরতার প্রতীক! আমরা যাকে সভ্যতা বলে জাহির করতে চাচ্ছি আসলে সেটা যে নৈতিকতার বীভৎসতা, সেই উপলব্ধিটুকুও যেন আজ আমরা হারাতে বসেছি!

আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই নিকৃষ্টতম পাপ থেকে হেফাজত করুন।

- সংগৃহিত

পঠিত : ৬৫৭ বার

মন্তব্য: ০