Alapon

বাংলাদেশে যেভাবে ধীরে ধীরে সমকামিতা প্রতিষ্ঠা লাভ করছে...


আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে, শফিক রেহমান সম্পাদিত ‘যায়যায়দিন’ ম্যাগাজিন পত্রিকাটির কথা। যদিও পরবর্তিতে তা দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তর করা হয়। কিন্তু বহু বছর এটা কেবল ম্যাগাজিন পত্রিকা হিসেবেই প্রকাশিত হয়েছে।

শফিক রেহমান সেই ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার মাধ্যমেই বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি যখন তার সম্পাদিত ম্যাগাজিন পত্রিকায় ‘ভালোবাসা দিবস’ দিবসটির অবতারনা করেন, তখন বেশ সমালোচনা হয়। এমনকি কতিপয় আলেম এটা নিয়ে ফতোয়াও দিয়েছিলেন। যার কারণে এটা নিয়ে দেশব্যাপী বেশ আলোচনাও হয়। আর সেই আলোচনার বেনিফিট শফিক রেহমান বেশ ভালোভাবেই ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। যার দরুন বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস এখন একটি প্রতিষ্ঠিত উৎসব! এমনকি ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে টিভি চ্যানেলগুলোতেও দিনব্যাপী অথবা সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর সাধারণ মানুষ লাল নীল জামা-কাপড় পরে হাতে চুরি আর গায়ে পাঞ্জাবী পরে রিক্সায় ঘুরে এই দিবসটি পালন করে।

ভালোবাসা দিবস প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সাথে সাথে আমাদের সমাজে বেশ কিছু নতুন টার্মও পরিচিতি লাভ করেছে। যেমন, লিভ টু গেদার, লিভ ইন, লিটনের ফ্ল্যাট, ডেটিং, রুম ডেট ইত্যাদি। এসবের টার্মের মাধ্যমে আমাদের সমাজে ব্যাভিচার ছড়িয়ে পড়েছে। আর বছরে একটা দিনকে বিশ্বব্যাপী ব্যাভিচার দিবস হিসেবে পালন করার নামই ‘ভালোবাসা দিবস’।

এই দিবসটি কিন্তু একদিনে প্রতিষ্ঠা পায়নি। অনেকটা স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আগে আমাদের সমাজে একজন ছেলে এবং মেয়ে হাত ধরে ঘুরলেও সেটাকে সহজভাবে দেখা হতো না। এখন একজন ছেলে আর মেয়ে অনায়াসে ঘাড় ধরে ঘুরতেছে। এমনকি ইচ্ছে হলে দুজনে বিয়ে ছাড়াই একসাথে থাকছে। ২০ বছর আগে ‘ভালোবাসা দিবসের’ আন্দোলন ফলাফল স্বরূপ আজ এভাবেই ব্যাভিচার প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

একইভাবে সমকামিতাও স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এক শ্রেণির মিশনারী উঠে পড়ে লেগেছে। আপনার জুলহাসের কথা মনে আছে কি? নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা। জুলহাস, যিনি নিজে একজন সমকামি ছিলেন এবং সমকামিতার সমর্থনে একটি ম্যাগাজিন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু আমরা কিন্তু জুলহাসকেও চিনতাম না, জুলহাস যে এমন একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিল তাও জনতাম না।

আমরা জানলাম কীভাবে?

জুলহাসের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। যে হত্যাকান্ডের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। খুব সম্ভবত সেই হত্যাকান্ডের পূর্ণা‍ঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট আজ অবধি পুলিশ জমা দিতে পারেনি। আর কখনো পারবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। কারণ, খুব সম্ভবত বাংলাদেশে সমকামিতা নিয়ে আলোচনার সূচনা করার লক্ষ্যেই জুলহাস হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। এর পিছনে কুশীলব হিসেবে জুলহাসের পৃষ্ঠপোষক মিশনারীরা যে জড়িতে নেই, সে কথাই বা কীভাবে বলি! অতীতের ইতিহাস থেকে জানা যায়, কোনো একটি নিষিদ্ধ বিষয়কে সমাজের আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের কর্মীকে হত্যা করে এভাবে মূল আলোচনায় প্রবেশ করে। তাই আমার সন্দেহ হয়, জুলহাসকে হত্যা করে বাংলাদেশে সমকামিতা সম্পর্কে আলোচনায় শুরু করার জন্য এর কুশীলব ছিল মিশনারীরাই।

এরপর দীর্ঘ বিরতির পর, নতুনভাবে সমকামিতার প্রচার শুরু করে। এবার নাটকের মাধ্যমে। মোবাইল কোম্পানী গ্রামীণ ফোনের স্পন্সরে আরটিভিতে সমকামিদের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর উদ্দেশ্যে প্রচারিত হয় নাটক ‘রেইনবো’। এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এক সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জন কবির।

নাটকটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথে চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। চারদিকে যখন সমালোচনার ঝড় তখন গ্রামীণ ফোন এমন একটি অনুষ্ঠানে স্পন্সর করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। কিন্তু দুঃখ প্রকাশ করা না করায় তো কিছু যায় আসে না। তারা তাদের উদ্দেশ্যে সফল! তারা চেয়েছিল এই নাটকের মাধ্যমে সমাজে সমকামিতা নিয়ে আলোচনা হোক এবং হয়েছেও তা-ই! সেই আলোচনার কতটুকু সমালোচনা সেটা তাদের ধর্তব্যের বিষয় নয়। কারণ, তারা জানে এভাবেই একদিন সমকামিতা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।

সেই একই কাজের অংশ হিসেবে এবার গিনিপিগ বানানো হয়েছে ‘আয়মান সাদিক ও টেন মিনিট স্কুলকে। টেন মিনিট স্কুলের একজন সাবেক কর্মী সামির অতি সম্প্রতি অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করতে গেছে। সেখানে পড়াশোনা করতে গিয়ে সে সমকামিতার সাথে জড়িয়ে পড়ে। তারপর সে সমকামিতার প্রতীক রেইনবো ছবি শেয়ার করে। আর সেই ছবিতে লাভ রিঅ্যাক্ট দেয় আয়মান সাদিক এবং সাকিব বিন রশীদ। এখন এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। একটা সময় হয়তো বিতর্ক থেমে যাবে এবং আয়মান সাদিকও সাকিব বিন রশীদরা মাফ-টাফ চেয়ে ৮-১০ টা ভিডিও কন্টেন্ট প্রাইভেট করবে। কিন্তু মিশনারীরা সফল! কারণ, ইতিমধ্যেই এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে চারদিকে সমকামিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ছোট-বড় সবাই সমকামিতা নিয়ে আলোচনা করছে। আর এই আলোচনার ফলাফলস্বরূপ বাংলাদেশে যেমন ব্যাভিচার দিবস এখন ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে সর্বাত্মকভাবে পালন করা হয়। একদিন হয়তো এই বাংলাদেশেই সর্বাত্মকভাবে সমকামিদের সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

তাই এসব ঘৃণ্য বিষয় নিয়ে এভাবে ঢালাও ভাবে কথা বলা বন্ধ করা দরকার। কারণ, স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন- ‘‘যেসব লোক চায়, ইমানদার লোকদের মধ্যে নির্লজ্জতা-বেহায়াপনা বিস্তার লাভ করুক, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন, তোমরা জানো না।’ সূরা নূর : ১৯।

তাই সাবধাণ হোন। আপনার আমার আলোচনার মধ্য দিয়েই হয়তো বাংলাদেশে সমকামিতা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে যাচ্ছে...

পঠিত : ৬৭৪ বার

মন্তব্য: ০