Alapon

হীনমন্য মুসলিম সমাজ এবং আয়া সোফিয়া...


কথা সহজ। ইসলামের আইন অনুযায়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যে অঞ্চল মুসলমানদের অধিকারে সে অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় সম্পদের হুকুম এক, আর চুক্তির মাধ্যমে বা প্রতিপক্ষের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যে অঞ্চল অধিকারে সে অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় হুকুম আরেক। তাই দেখা যায় সিরিয়া জয়ের সময় সাহাবিদের মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছিল যে তা কি যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত হয়েছে নাকি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। কারণ একদিক থেকে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ শহরে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিলেন অন্যদিক দিয়ে খ্রিস্টানরা আরেক সাহাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।

মুহাম্মদ আল ফাতেহ যেহেতু যুদ্ধের মাধ্যমে ইস্তাম্বুল জয় করেছিলেন। তাই হাগিয়া সোফিয়াও মুসলমানদের জয় করা জিনিস। কিন্তু মসজিদে রুপান্তরে জন্য মুহাম্মদ আল ফাতেহ তা জাজকদের থেকে কিনে নিয়েছিলেন বলে আল জাজিরা আরবিতে রিপোর্ট করেছে। যদি কিনেও না থাকেন তবুও কোন সমস্যা দেখিনা।

কামাল আতাতুর্ক খিলাফত বিলুপ্ত করে আজান, আরবি, সুফিদের দরগাহ নিষিদ্ধ করাসহ ইসলামের চিহ্ন বহন করে এমন প্রায় সবই বিলুপ্ত করে। পরবর্তী আজান চালু হয় ও ইবাদসংক্রান্ত অনেক কিছুই পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। সেসময় বদিউজ্জামান সাইদ নুরসিসহ অনেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেন মসজিদ থেকে মিউজিয়ামে রুপান্তরিত হওয়া মিউজিয়ামটা আবার মসজিদের ফিরে আসবে।

বহু বছর পর আবার তা হতে যাচ্ছে। মিউজিয়ামটা মসজিদ হতে যাচ্ছে। যেখানে ত্রিত্ববাদের উপাসনা হতো সেখানে পাঁচ শ বছর একত্ববাদের উপাসনার পর মিউজিয়ামে রুপান্তর হয়েছিল, সেটি আবার একত্ববাদের উপাসনার স্থানে ফিরে যাচ্ছে। এটা আনন্দের বিষয়।

একটা কাজে ফেসবুকে এসে দেখলাম মসজিদে রুপান্তরের পক্ষের মুসলমানদের ভণ্ড, গাধাসহ নানান প্রকার বিশেষণে বিশেষায়িত করে জ্ঞানী মজলেমরা মুহুর্মুহু স্ট্যাটাসে ফেসবুক কাপিয়ে তুলেছেন। যা দৃষ্টিকটু।

আজকে থেকে একশো বছর আগেরকার মুসলিম ইতিহাস পড়লে, তুর্কীর ইতিহাস পড়লে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আমি অবাক হই সেসময়ের মুসলমানরা কিভাবে সহ্য করেছিলেন সময়টাকে। চোখের সামনে ইসলাম ও ইসলামের যাবতীয় চিহ্নকে মুছে ফেলা হচ্ছে। আহা!

তুর্কীতে বহু বছর পর যখন আবার আজান চালু হয়েছিল সে আজান শুনে আবেগে অনেকে কেঁদে সেজদায় লুটিয়ে পরেছিলেন। সে আবেগ অনুভূতি বোঝার সক্ষমতা আমাদের নাই। সেসময়ের মানুষরা, যারা একসময় হাগিয়া সোফিয়ায় মাওলানার দরবারে সেজদা দিতেন তারা যদি বহু বছর পর আবার সেজদা দেয়ার সুযোগ লাভ করতেন তবে তাদের আবেগ ও অনুভূতি কেমন হতো তা অনির্বচনীয়।

শেষে একটা ঘটনা বলি। তুর্কীতে 'শাইখুল ইসলাম' অফিস ছিলো খুব বড় একটা দপ্তর। ধর্মীয় বিষয়াদি, গবেষণা ও আইন তা থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো। কামাল আতাতুর্ক এসে সে অফিসকে ইউরোপীয় ধাচের 'নারী ক্লাব' বানালেন। শত শত বছর ধরে ধর্মীয় বিষয় যেটি দেখেছে সেটিকে বানানো হয়েছে ক্লাব। এসময় কুর্দি বিদ্রোহ হয় শেখ সাইদের নেতৃত্বে। এজন্য বদিউজ্জামান সাইদ নুরসিকেও গ্রেফতার করা হয়। ইস্তাম্বুল দিয়ে যাওয়ার সময় সাইদ নুরসি সে 'শাইখুল ইসলাম' অফিসের কথা জিজ্ঞেস করেন। অফিসটির ক্লাবে রুপান্তরে ঘটনা শুনে সাইদ নুরসি খুব কাঁদলেন। খুব কাঁদলেন। দৈব কারণে সে রাতেই ক্লাবটিতে আগুন ধরে যায়।

পোশাকের গরিবি হালাত চোখে দেখা যায়। কিন্তু বিশ্বাসের গরিবি হালাত ও হীনমন্য অবস্থা চোখে দেখা যায় না। স্যুট-কোটের অন্তরালেও থাকতে পারে বিশ্বাসের ও আত্মপরিচয়ের হীনমন্যতা, অপরদিকে ছেড়া পোশাকের অন্তরালেও থাকতে পারে বিশ্বাস ও আত্মপরিচয়ের চাকচিক্যময় অবস্থা।

- শরিফ সাইদুর

পঠিত : ৪৯১ বার

মন্তব্য: ০