Alapon

ইসলাম কি বাঙালি সংস্কৃতি পালনে নিষেধ করে...?


ইদানীং একটা বিষয় খুব ক্রিটিকাল হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে- আমি বাঙ্গালী হিসেবে নিজের সংস্কৃতি মানতেই পারি, এতে আমার ধর্মীয় জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেন? কেন আমার মুসলমানিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে?

এই যেমন ধরেন, বাংলা নববর্ষ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ইত্যাদি। পোশাক হিসেবে শাড়ি, লুঙ্গী ইত্যাদি। প্রশ্নটা খুবই যৌক্তিক এবং গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে আর একটা প্রশ্নও সাথে সাথেই চলে আসে, আমরা যদি আরবি সংস্কৃতি ফলো করতে পারি, তাহলে বাঙ্গালি সংস্কৃতি আবার কী দোষ করলো?

প্রথমে দ্বিতীয় প্রশ্নটা বিষয়ে কথা হল- রসুল(সঃ) এর নবুওয়াত প্রাপ্তিকালীন সময়ে বাইতুল্লাহতে হজ্ব এর জন্য কিন্তু বেশ আগে থেকেই উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করাটা চলে আসছিল। ওরা সেটাকে তাদের সংস্কৃতিই মনে করতো। রসুল(সঃ) মক্কা জয়ের পর উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ করলেন। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল? ইসলামী পদ্ধতি বা ইসলামী সংস্কৃতিটা ফ্যাক্ট, আরবীয় সংস্কৃতি নয়।

আর সংস্কৃতি বলতে যদি বলি অনেক দিন থেকে বেশিরভাগ মানুষের অভ্যস্ত নিয়ম নীতিকে বুঝায়, তাহলে তো বলতে হয়- অনেক দিন থেকে অভ্যস্ত উলঙ্গ তাওয়াফ সংস্কৃতিরও আগে কিন্তু ইসমাঈল(আঃ) এর সময় এ নীতি ছিল না। তখন তাহলে এই সংস্কৃতি ছিল না। সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়ই, হবেই।

এখন আসলো বাঙ্গালী সংস্কৃতি বনাম ইসলামী সংস্কৃতির বিষয়টা। এখানে আমরা মৌলিক যে ভুলটা করি, সেটা হল- আমরা ইসলামকে একটা ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে ফেলি। কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন করলাম, অথবা কখনো মনে হলে করলাম না।

মজার বিষয় হল- ইসলাম এর চেয়ে বেশি বিস্তৃত। ইসলামকে কুরআনে সব সময় দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর ডাক্তারের ছেলে যেমন ডাক্তার হয় না, যোগ্যতা গুণে ডাক্তার হতে হয়, ইসলামের বিষয়টা ঠিক তেমনি। মুসলিম বাবা-মায়ের সন্তান মানেই যা করি করি আমি মুসলিম, বিষয়টা একেবারেই এটা নয়। মুসলিম সবাইকে হতে হয়, মানার মাধ্যমে হতে হয়।

আর আপনি যখনি মেনে নিলেন, আপনি একজন মুসলিম হতে চান, ইসলাম মানতে চান- এর মানে দাঁড়ালো জীবনবিধান হিসেবেই ইসলামকে মানবেন। ধর্ম হিসেবে শুধু মানলে সেটাকে অন্য কিছু বলতে পারে, ইসলাম নয়। কারণ- ইসলাম কোনো ধর্মমাত্র নয়; এটি জীবন বিধান।

আর এজন্যই ইসলাম শুধু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান না শিখিয়ে পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, সাংস্কৃতিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সব বিষয়েই নিয়ম-নীতি বানিয়ে দিয়েছে, ওই যে- এটা জীবন বিধান যে, তাকে তো পুরো জীবনের সব কিছুই শিখিয়ে দিতেই হবে।

"ইসলাম" অর্থটাও দেখুন- আত্মসমর্পণ। জ্বি, আপনি মুসলিম ঘোষণা মাত্রই আপনি স্বীকার করে নিলেন, আপনি আগে যেভাবেই চলুন, যে সংস্কৃতিই মানুন, আপনি এখন আর আপনার মত না চলে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে দিলেন, এবার আল্লাহ যেভাবে বলবে, সেটা মানবেন, এর বিপরীত কিছুকে আপনি আর নিজের হিসেবে কল্পনাই করবেন না।

সেটা বাঙ্গালী সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি আত্মসমর্পণের পর ইসলাম যে সংস্কৃতি শেখাবে, আপনি এটা মানবেন। এর বিপরীত কিছু না হলে আপত্তি নেই, কিন্তু বিপরীত হলে মুসলিম মানেই আপনি তা নির্দ্বিধায় পরিত্যাগ করবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার দ্বিধা যতটুকু, আপনার মুসলিম হতে ততটুকু বাকী।

আর বিশ্বাস করুন, আপনার আমার সাংস্কৃতিক যাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা, শাড়ি-লুঙ্গী দিয়ে শুরু হয়নি, এর আগেও পূর্বপুরুষদের অনেক সংস্কৃতি ছিল। সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়ই, হবেই। সংস্কৃতি মানে যদি পূর্বপুরুষদের লাইফ স্টাইল হয়, তাহলে পৃথিবীর একেবারে আদিম যে মানুষগুলো ছিল, তাদের সংস্কৃতি তো গোটা পৃথিবীর সংস্কৃতি হওয়ার কথা, একই সংস্কৃতি।

আমরা মুসলিম, আমাদের একটা সংস্কৃতি আছে, যার নাম ইসলামি সংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতি মানে বাঙ্গালী সংস্কৃতির বিরোধিতা নয়, আরবী সংস্কৃতির লালন নয়। ইসলামী সংস্কৃতির গাইডলাইন আছে, সেটা যে সংস্কৃতিই লঙ্ঘন করবে, সেটা মুসলিম মাত্রই ছুঁড়ে ফেলতে হবে, যে সংস্কৃতি তাকে ধারণ করবে, যতটুকু ধারণ করবে, সেটুকু মানতে কোনোই অসুবিধা নেই, সেটাই ইসলামী সংস্কৃতি। সেটা পোশাকের ক্ষেত্রেই হোক বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে।

- এনামুল হক

পঠিত : ৮৩৫ বার

মন্তব্য: ০